Home মহিলাঙ্গন পতিভক্তিশূন্যতার ভয়াবহ পরিনাম

পতিভক্তিশূন্যতার ভয়াবহ পরিনাম

।। কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক ।।

মোবাইল ফোনে সম্পর্ক। এরপর বিয়ে এবং চার বছরের সংসার। শুধু তাই নয়, অনেক চেষ্টা-তদবির করে বেকার স্ত্রীকে সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সিঙ্গাপুরপ্রবাসী স্বামী সোহেল রানা। কিন্তু কোনো প্রকার বিবাহ বিচ্ছেদ ছাড়াই সেই স্ত্রী অন্যের হাত ধরে লাপাত্তা হলো। স্ত্রীর শোকে স্বামী সোহেল এখন পাগল প্রায়। সন্তানের এমন অবস্থায় এগিয়ে এলেন মা। মামলা করলেন। মায়ের বক্তব্য ‘প্রতারক মেয়েটি আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিল।’

দেশজুড়ে এমন হাজারো সাজানো বাগান ভেঙ্গে তছনছ করে দিচ্ছে অধুনা যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা মোবাইল ও ইন্টারনেট। অথচ বিশ্বাসী নর-নারীরা কখনো এমন করতে পারে না। ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, “দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার কাছে ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”

অপর এক হাদীসে এসেছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন? তিনি বললেন, তাদের নাশুকরির কারণে। জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর নাশুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর নাশুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না। তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম না।” (সহিহ্ মুসলিম)।

আরও পড়তে পারেন-

পক্ষান্তরে নির্দয় ও পাষণ্ড স্বামী নামের হিংস্র পশুগুলোর আক্রমণের শিকার হচ্ছেন অসহায় ও অবলা নারীর করুণ বিলাপ। অহরহ ঘটছে দায়ের কোপ, লাথির আঘাত, অ্যাসিডে ঝলসানো, আগুনে পুড়ানো, বিষ প্রয়োগ এবং বালিশ চাপাসহ নানা দুঃসহ কায়দায় নারী মৃত্যুর ঘটনা। কারণ তাদের পাঠ্য সূচি থেকে ওঠে গেছে বিশ্ব নবীর (সা.) এর বাণী “তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।” “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের নিকট উত্তম।”

অপর দিকে চারদিক বিষিয়ে তুলছে, পতিভক্তিশূন্য, মায়া-ভালোবাসাহীন স্ত্রী নামের ডাইনীগুলোর অবজ্ঞার পাত্র, অসহায় স্বামীর ক্ষোভ ও ক্রোধে ভরা আর্তনাদ। কারণ, তারা রাসূলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত “আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সেজদা করার অনুমতি থাকলে, আমি নারীদের নির্দেশ দিতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা কর।” মান-অভিমানের ছলনা আর সামান্য তুচ্ছ ঘটনার ফলে সাজানো-গোছানো, সুখের সংসার, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও তছনছ হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে। ক্ষণিকেই বিস্মৃতির আস্তাকুরে পর্যবসিত হচ্ছে পূর্বের সব মিষ্টি-মধুর স্মৃতি, আনন্দঘন-মুহূর্ত। দায়ী কখনো স্বামী, কখনো স্ত্রী। একজন অপর জনের প্রতি থাকে বীতশ্রদ্ধ। ফলে পরস্পরের মাঝে বিরাজ করে সমঝোতা ও সমন্বয়ের সংকট। সম্পূরকের পরিবর্তে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে একে অপরকে। আস্থা রাখতে পারছে না কেউ কারো ওপর। তাই স্বনির্ভরতার জন্য নারী-পুরুষ সবাই অসম প্রতিযোগিতার ময়দানে ঝাঁপ দিচ্ছে। অথচ স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার ঘরে ঢুকতে দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”

এমনকি স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়াও ইসলাম সমর্থিত নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন, “তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।” নারীর জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি ওয়াজিব। স্বামীর খেদমতের উদাহরণ: মুসলিম বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা কীভাবে স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর কাজে সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেন ইত্যাদি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ উপস্থাপনার পরিবর্তে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাযি.) থেকে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কিছু ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম, পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম দিতাম। আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম না, আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য সাহায্য করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের জমি থেকে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায় এক মাইল দূরত্বে ছিল।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হলে, তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত না।”

আসল শিক্ষা ও মানব জাতির সঠিক পাথেয় আল-কুরআনের দিকনির্দেশনা আজ পরিত্যক্ত ও সংকুচিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে কুঁড়ে ঘরে, কর্তৃত্বশূন্য কিছু মানবের হৃদয়ে। আজ তাই সকল মহলে সর্বান্তকরনে ধর্মীয় বোধ ও ইসলামী চেতনাই দিতে পারে আসল মুক্তি।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন