Home মহিলাঙ্গন একই কথা, ভিন্ন বিচার: সমাজের চোখে নারী ও পুরুষের ত্যাগ

একই কথা, ভিন্ন বিচার: সমাজের চোখে নারী ও পুরুষের ত্যাগ

- প্রতিকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

।। ডা. তানজিনা রহমান ।।

যখন একজন নারী বলেন, “অনেক বছর অন্যের জন্য বেঁচেছি, রান্না করেছি, সন্তান লালন-পালন করেছি, বিনিময়ে জুটেছে অবহেলা, লাঞ্ছনা, অসম্মান। এখন নিজের জন্য বাঁচতে চাই। খোলা আকাশের নিচে শ্বাস নিতে চাই। এক কাপ চা শুধু নিজের জন্য বানিয়ে জীবনকে উপভোগ করতে চাই। নিজেকে একটি অলস সকাল উপহার দিতে চাই। একা একা পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই…”—আমরা এই সাহসী নারীর সাহসী পদক্ষেপকে নৈতিক সমর্থন জানাই। সে যে শৃঙ্খল ভাঙতে পেরেছে, তার জন্য তাকে বাহবা দিই। কেন তার এই চিন্তা সঠিক, তার শত শত যুক্তি খুঁজে বের করি।

এবার আসুন, একই কথা কোনো পুরুষের মুখ থেকে শুনি: “অনেক বছর অন্যের জন্য বেঁচেছি, রক্ত জল করা উপার্জন অন্যের জন্য ব্যয় করেছি, মলিন শার্ট-জুতোয় নিজের একটি যুগ কেটেছে, কিন্তু স্ত্রী-সন্তানদের কোনো শখ অপূর্ণ রাখিনি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, তবুও তাদের খুশি করতে পারিনি। সকল ত্যাগের বিনিময়ে জুটেছে উপেক্ষা, অসম্মান, অপবাদ। এখন নিজের জন্য বাঁচতে চাই। খোলা আকাশের নিচে শ্বাস নিতে চাই। নিজের উপার্জন অন্যের পেছনে না ঢেলে নিজের জীবনটা উপভোগ করতে চাই। কাদের জন্য এই জীবন তিলে তিলে নিঃশেষ করা? কয়জনার স্ত্রী-সন্তান অসুস্থতায় বা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পাশে থাকে? শেষ জীবনটা হোটেলে হোটেলেও তো দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া যায়। কেয়ারগিভারের সাথেই যখন শেষ বয়সটা কাটে, কেন মিছে এই খেলায় জড়িয়ে থাকা? কলুর বলদ হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা স্ত্রী-সন্তানদের পেছনে ধ্বংস না করে বরং নিজের পড়ন্ত বেলার সম্বল হিসেবেই তা থাকুক।”

যেহেতু এই গল্পে ‘মিসোজিনি’র (নারীবিদ্বেষ) গন্ধ আছে, তাই এটি বাজার পাবে না। আমরা তাকে বাহবা বা কোনো নৈতিক সমর্থন কিছুই দেব না। কিন্তু মুদ্রার এপিঠ থাকলে ওপিঠও থাকবে। মজলুম যেকোনো ব্যক্তি হতে পারে, তা সে নারী হোক বা পুরুষ। সংখ্যাটা হয়তো কম-বেশি হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত মজলুমরা সবসময়ই অস্পৃশ্য থেকে যায়। সব পুরুষ তো আর নারীলোভী নয়। দু-একজন হলেও প্রকৃতিপ্রেমী আছে, যাদের জীবন উপভোগ করার জন্য পাতায়া বিচ বা ফাইভ স্টার হোটেল লাগে না, বান্দরবানই তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যে পুরুষটি ভ্রমণপ্রিয় হয়েও নিজের বোহেমিয়ান মনকে গলা টিপে একজীবন কাটিয়ে দিয়েছে কলুর বলদ সেজে, সে যদি অতিষ্ঠ হয়ে আনন্দ পেতে একটা বয়সে দায়িত্ব ফেলে বেরিয়ে যায়, তখন ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে? আমরা তাকে সাহসী নয়, বরং দায়িত্বহীন পুরুষ বলব, তাই নয় কি?

আরও পড়তে পারেন-

আসলে, নিজের দায়িত্বকে বোঝা মনে করা এবং নিজের কাছে কেবল নিজের জীবনকেই প্রাধান্য দেওয়া—এমন কেউ-ই সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য নয়, তা সে নারী হোক বা পুরুষ। সংসারের কাজের দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে নারীদের থাকে। অর্থনৈতিক দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে পুরুষদের। আর সন্তানদের প্রধান দায়িত্ব হলো পড়াশোনা করা। ভালো লাগুক বা না লাগুক, যার যার দায়িত্ব পালন করাই এই দুনিয়ার জীবন। দায়িত্বহীনদের কারণে ভোগান্তিতে পড়ে তাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো—বাবা-মা, সন্তান, নাতি-নাতনি; অর্থাৎ পরিবারের সদস্যরা। এই সমাজে সংসারে মন না লাগা ভবঘুরে স্বামী যেমন আছে, তেমনি ভবঘুরে স্ত্রীও আছে। ভবঘুরেপনাকে গলা টিপে না মারলে সমাজে এদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, যা আশঙ্কাজনক।

“ছেড়ে এলাম, চলে এলাম, শুধুই নিজের মতো এক কাপ চা খাব বলে, অলসভাবে ঘুমিয়ে থাকব বলে, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখব বলে”—এইসব চিন্তাকে মহিমান্বিত করার কিছু দেখি না। খুব বেশি দিনের জন্য তো এই দুনিয়ায় আসিনি। আখিরাতে অনন্ত দায়িত্বহীন জীবন আছে—মুসলিম মাত্রই এই কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। ভয় পাবেন না, সেই পর্যন্তও সবর করতে বলছি না। ছেলেমেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেলে, ব্যস! এরপর নাহয় দুজন মিলেই বাকি জীবনটা উপভোগ করুন। দুজন মিলেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে বেরিয়ে পড়ুন। সময় যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। সেটি বরং আরও বেশি উপভোগ্য হওয়ার কথা।

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয় কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি” (সূরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত-৫)।

– ডা. তানজিনা রহমান, কনসালটেন্ট, সনোলজিস্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।