Home ইসলাম অন্যের তথ্য প্রকাশে সতর্কতা জরুরি

অন্যের তথ্য প্রকাশে সতর্কতা জরুরি

রায়হান রাশেদ: বেঁচে থাকার প্রয়োজনে জীবনের কাছে জীবন সমর্পণ করে। সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কে গভীরতা আসে। তৈরি হয় সম্পর্কের চিরন্তন অবিচল দৃঢ়তা। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনের মধুর এক সৌধ। সম্পর্কের এ সৌধকে ভালোবাসায় টিকিয়ে রাখতে হলে জীবনকে ইসলামীকরণ করতে হবে। আল্লাহর আদেশ ও রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসারে জীবন পরিচালিত করতে হবে।

সুন্দর ও সুখী জীবনযাপনে হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যের দোষ খোঁজা ও গিবত করা নিষেধ। কারো গোপন দোষ সম্পর্কে অন্যকে সংবাদ দেওয়াও নিষেধ। মিথ্যা ও হত্যাকে ‘না’ বলতে হবে। কোনো ব্যক্তির দোষ সম্পর্কে অবগত করতে হলে তাকে পরিমিত পরিমাণে জানানো উত্তম আদর্শের বহিঃপ্রকাশ।

আরও পড়তে পারেন-

সুখী সংসার ও সুখী জীবন নির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার হলো, অন্যের দোষ চর্চা না করা। একান্ত প্রয়োজনে বৃহৎ স্বার্থে কারো কারো দোষ প্রকাশ করা জরুরি হয়ে পড়লে, পরিমিত পরিমাণে প্রকাশ করা। কারণ ইসলাম অন্যের দোষ প্রকাশ করা পছন্দ করে না।

মহানবী (সা.)-এর জীবনের প্রাত্যহিক রুটিন ছিল—আসর নামাজের পর পালাক্রমে স্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করতেন। বিকেলের অবসর যাপন করতেন। খোশগল্প করতেন। প্রত্যেকেই চাইতেন, নবীজি তাঁর ঘরে বেশি সময় যাপন করুন। নবীজির সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সদিচ্ছায় জয়নাব (রা.) তাঁকে বিকেলে মধু খাওয়াতেন। ফলে তাঁর ঘরে একটু বেশি সময় যাপন করতেন। নারীস্বভাবতই নবীজির অন্য স্ত্রীরা বিষয়টা পছন্দ করতেন না। এদিকে আয়েশা (রা.) ও হাফসা (রা.) পরামর্শক্রমে উভয়ের ঘরে নবীজি গেলে জানতে চাইলেন—‘আপনি মাগাফির খেয়েছেন?’ মাগাফির একপ্রকার উদ্ভিদ। তাতে কিছুটা দুর্গন্ধ আছে।

নবীজি বিস্মিত হয়ে উত্তর দিলেন, ‘কই, না তো!’

‘তাহলে আপনার মুখে গন্ধ কিসের?’

স্ত্রীদ্বয়ের কথা শুনে নবীজির মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। এরপর তিনি মধু না খাওয়ার সংকল্প করেন। তাঁর এমন সংকল্পকে ‘না’ বলে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন—‘এবং স্মরণ করো, যখন নবী তার কোনো এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন। তারপর সেই স্ত্রী যখন সে কথা (অন্য কাউকে) বলে দিল এবং আল্লাহ তা নবীর কাছে প্রকাশ করে দিলেন, তখন তিনি তার কিছু অংশ জানালেন এবং কিছু অংশ এড়িয়ে গেলেন। তখন সে (স্ত্রী) বলতে লাগল, আপনাকে এ কথা কে জানাল? নবী বলেন, আমাকে জানিয়েছেন তিনি, যিনি সর্বজ্ঞ, সব কিছু অবগত।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ০৩)

আল্লাহ নবীজিকে এ ব্যাপারে অনেক কিছু জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নবীজি স্ত্রীদের বিস্তারিত জানাননি। যতটুকু জানানো একান্ত জরুরি ছিল, ঠিক ততটুকুই জানিয়েছেন। অন্য বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছেন। নবী ইউসুফ (আ.)-এর জীবনেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তাঁর ভাইদের রোষাণলের শিকার হয়ে তিনি পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হন। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ইউসুফ (আ.) একদিন মিসরের খাদ্যমন্ত্রী হন। তাঁর ভাইয়েরা দরিদ্রতার চাপে পড়ে তাঁর কাছে খাদ্য প্রার্থনা করে।

নবী ভাইদের চিনলেও ভাইয়েরা তাঁকে চিনতে পারেননি যে—তিনিই কূপে ফেলে দেওয়া সেই ইউসুফ। ঘটনাচক্রে তাঁর সহোদর ভাই বিন ইয়ামিনের খাদ্যের পাত্রের মাঝে হারানো পানপাত্র পাওয়া যায়। বড় ভাইয়েরা বলেছিলেন, ‘সে যদি চুরি করে তবে আশ্চর্যের কিছু নেই। কেননা এর আগে তার ভাইও চুরি করেছিল।’ তাঁর সামনেই তাঁকে চোর বলা হচ্ছে—অথচ এটা ডাহা মিথ্যা কথা। নির্ঘাত অপবাদ। তিনি এড়িয়ে গেলেন। ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাননি। ঘাঁটাঘাঁটি করেননি। কোরআনে এ প্রসঙ্গটি উল্লেখ হয়েছে এভাবে—‘তখন ইউসুফ তাদের কাছে প্রকাশ না করে চুপিসারে (মনে মনে) বলল, এ ব্যাপারে তোমরা তো ঢের বেশি মন্দ।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৭৭)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় যে কারো ব্যাপারে কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় জানা থাকলেই তা দিয়ে তাকে আক্রমণ করা উচিত নয়। বা তা নিয়ে অহেতুক ঘাঁটাঘাঁটি করা উচিত নয়। বরং কারো কোনো ত্রুটি চোখে পড়লে গোপনে তাকে সংশোধন করে দেওয়াই উত্তম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।