Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন কুরআন তিলাওয়াত উচ্চস্বরে উত্তম, না অনুচ্চস্বরে?

কুরআন তিলাওয়াত উচ্চস্বরে উত্তম, না অনুচ্চস্বরে?

।। মাওলানা মুহাম্মদ ওমর কাসেমী ।।

উচ্চস্বরে তিলাওয়াত উত্তম না অনুচ্চস্বরে? এ বিষয়টার সমাধান কিছুটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। কেননা উভয়ের সমর্থনেই হাদীস বর্ণিত রয়েছে। যেমন, মিশকাত গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত রয়েছে। নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন স্বরকে যত না পছন্দ করেন কোন নবীর মধুর স্বরে সরবে কুরআন পড়াকে।

উক্ত হাদীস থেকে উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করা উত্তম বলে প্রমাণিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে মেশকাত শরীফে অন্য একটি হাদীস উকুবা ইবনে আমের (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ ফরমান, প্রকাশ করে কুরআন পাঠক প্রকাশ্য দান ছদকাকারীর ন্যায়। আর চুপেচুপে কুরআন পাঠক চুপেচুপে দান কারীর ন্যায়।

আর একথা স্বতঃসিদ্ধ যে নফল দান ছদকা গোপনে করাই উত্তম, এমন কি অন্য হাদীসে বলা হয়েছে যে, এমন গোপনীয়তা অবলম্বন করে দান কর যেন নিজের বাম হাতও অবগত না হয়। কেননা প্রকাশ্যে রিয়া, অহংকার, লোকদেখানোর সম্ভবনা থাকে। যার কারণে ছাওয়াবের পরিবর্তে পাপের বোঝা বহন করতে হবে। অতএব এই হাদীস থেকে কুরআন তেলাওয়াত চুপেচুপে করাই উত্তম বলে অনুমেয়।

প্রিয় পাঠকমণ্ডলী। উভয়ের সমর্থনে মজবুত প্রমাণাদি থাকায় বিষয়টা নিঃসন্দেহে জটিল তাই ব্যাখ্যাউত্তর সমাধান সম্ভব। আল্লামা নববী (রহ.) উভয় হাদীসের সামনা পুর্ণ সমাধান এই বলে করেছেন যে, আসলে উচ্চ-অনুচ্চ ব্যাপারটা স্থান ও সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এর বিধান ও বিভিন্ন অবস্থায় রূপান্তরিত হবে।

অতএব, যেক্ষেত্রে উচ্চ স্বরে পাঠ করার দ্বারা গর্ব অহংকার এবং নামাজরত ও ঘুমন্তব্যক্তির কষ্ট ও ক্ষতির ভয় বা সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে চুপেচুপে পড়াই উত্তম, বরং জরুরী, আর যদি এরূপ কোন ভয় বা সমস্যার সম্ভবনা না থাকে তবে উচ্চ আওয়াজে পড়াই উত্তম কেননা, তখন বহুমুখী লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

আরও পড়তে পারেন-

একদিকে যেমন শ্রোতাবৃন্দ কুরআন শ্রবন করার সুযোগ পায়। অন্যদিকে স্বয়ং তেলাওয়াতকারীর অন্তর সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকে, নিদ্রা আসার সুযোগ থাকে না। কুরআনের ভাবার্থের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে এবং তেলাওয়াতের মধ্যে প্রফুল্লতা বৃদ্ধি পায়।

ইমাম নববী (রহ.) কর্তৃক উভয়হাদীসের বর্ণিত ব্যাখ্যা এবং সামঞ্জস্যতার সত্যয়নে নিম্নোক্ত হাদীসটি সমর্থন করে। ছাহাবী হযরত আবু ছায়ীদ (রাযি.) রলেন যে, একদা নবী (সা.) মসজিদে নববীতে চাদর বেষ্টিত অবস্থায় ই’তেকাফ করছিলেন। ইত্যবসরে কয়েকজন ছাহাবী (রাযি.) উচ্চ আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করা আরম্ভ করলেন। নবী (সা.) পর্দা সরিয়ে বললেন সাবধান হে লোকসকল। নিশ্চয় তোমরা সকলেই আল্লাহর সংগে নিভৃতে কথোপকথনকারী।

অতএব, তোমরা একে অপরকে যেন কষ্ট না দাও। একজনের তিলাওয়াতের ধ্বনি অন্যজনের চেয়ে উচ্চ না হয়। (জামউল ফাওয়ায়েদ, ২য় খন্ড)। সুতরাং তিলাওয়াত উচ্চ না অনুচ্চস্বরে হবে সেটা পরিস্থিতির উপরই নির্ভর করবে।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।