Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ দ্বীনের প্রচার-প্রসারে মিডিয়া ও প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা

দ্বীনের প্রচার-প্রসারে মিডিয়া ও প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা

।। মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী ।।

প্রযুক্তি আমাদের অনেক কাজ সহজ করে দিয়েছে। বাঁচিয়ে দিয়েছে অনেক মূল্যবান সময়। নিঃসন্দেহে এটা আল্লাহ্ তায়ালার অনেক বড় নিয়ামত; যা তিনি আমাদের অধীন করে দিয়েছেন। যেন আমরা তা ব্যবহার করে তার অস্তিত্বকে আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারি। এক সময় সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে চিঠি আসতে প্রায় এক মাস সময় লাগত। অপেক্ষা করতে করতে কখনো প্রিয় মুহূর্তটাই পার হয়ে যেত। এখন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ই-মেইল বা ইলেক্ট্রনিক বার্তা। বোতাম টিপ দেয়ার এক সেকেন্ডের মধ্যেই চিঠি পৌঁছে যায় আরবে, আমরিকায়, পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে।

মিডিয়া কী? মিডিয়া কাকে বলে? ‘মিডিয়া’ ইংরেজী শব্দ, যার বাংলা অর্থ মাধ্যম। যে বস্তু দ্বারা ঘটনা-দূর্ঘটনা, সংবাদ-দুঃসংবাদ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায়, বর্তমান যুগে সে বস্তুকেই মিডিয়া বলা হয়। সুতরাং মিডিয়া শব্দ কানে আসতেই পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, টিভি, রেডিও, ই-ইমেল ও ইন্টারনেট ইত্যাদি বুঝে নেয়া হয়। সাধারণতঃ এই মিডিয়া দুই প্রকার- ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়া। ইলেকট্রনিক মিডিয়া বলতে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টিভি, রেডিও, টেলিফোন, ফ্যাক্স ইত্যাদি বুঝানো হয়। প্রিন্ট মিডিয়া বলতে পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, নিউজলেটার ইত্যাদি বুঝানো হয়।

আমার মতে মিডিয়া এখন আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন- বক্তৃতা, মঞ্চ, ওয়ার্কশপ, চলচ্চিত্র, অডিও, ভিডিও, ওয়েবসাইট, সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ, হার্ডডিক্স, ফোন, মোবাইল, ফটোস্ট্যাট, বই-পুস্তক, লাইব্রেরী, সংগীত, অভিনয়, নাটক, এমনকি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, খ্রীস্টান মিশনারী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ ইত্যাদিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মিডিয়া বিশ্বকে যেমন উন্নয়ন-অগ্রগতির দিকে উৎসাহিত করতে পারে, তেমনি ক্ষেত্র বিশেষ নিরুৎসাহিত এবং দুর্র্বলও করতে পারে। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকারীরা নিজেদের স্বার্থে যেমন একজন বিশ্বনিন্দিতকে নন্দিত করতে পারে, তেমনি আরেকজন বিশ্বনন্দিতকে অনায়াসে নিন্দিতও করতে পারে।

বর্তমান বিশ্বে মিডিয়া এমন এক শক্তি, যা সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। তাই মৌলিকভাবে মিডিয়ার বিরোধিতা না করে ইসলামের স্বার্থে, দ্বীনে ইসলামকে যথাযথ প্রচার ও প্রসারের স্বার্থে এবং সাম্রাজ্যবাদী ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া সন্ত্রাসীদের প্রপাগা-ার বিরুদ্ধে সত্য ও বাস্তব তথ্যটি তুলে ধরে বিশ্ববাসীর জনমত নিজেদের পক্ষে আনার স্বার্থে মিডিয়ার সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকেও এই দ্বীন ও উম্মাহ্কে তার স্বকীয়তায় স্থিতিশীল রাখতে শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শত্রুর মোকাবেলায় যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের যে নির্দেশ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সা.) আমাদের দিয়েছেন, সেই নির্দেশের প্রকৃত মর্ম আমাদের অনুধাবন করতে হবে এবং সর্বপ্রথম আমাদের দেখতে হবে, শত্রুরা আমাদের উপর আক্রমণ করতে কি ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করছে। ঠিক একই অস্ত্র আমরা যদি আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। কেননা আদর্শের মাপকাঠিতে আমরাই শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। আল্লাহ পাক অবশ্যই আমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন। তাই সময়ের দাবীকে উপেক্ষা না করে ইসলামের ন্যায় কালজয়ী সুমহান আদর্শ যথাযথ মর্যাদায় সুদৃঢ় রাখতে মিডিয়াতে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।

মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (রাহ.) এক জায়গায় বলেছেন, রাসূল কারীম (সা.) যে যুগে ও পরিবেশে বড় হয়েছিলেন, সে যুগ হিসেবে যত প্রকার প্রচার-পদ্ধতি ছিল, তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ তিনি করেছিলেন তার নবুওয়াতী দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে। সে যুুগের সর্বোচ্চ প্রচার পদ্ধতি ছিল, কোন বিষয়ে মানুষকে আহ্বান বা সতর্ক করতে হলে পাহাড়ে আরোহণ করে দাওয়াত দেয়া। প্রিয় নবীজী (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠে সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আল্লামা নদভী (রাহ.) দাওয়াত ও তাবলীগের অলৌকিক পদ্ধতি নামক বইয়ে কুরআনের আয়াত ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর হেকমত ও সুপদেশ দ্বারা’-এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, দায়ী ইলাল্লাহ্র, অর্থাৎ- আল্লাহ্র দিকে আহ্বানকারীর স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতার পরিধি কতটুকু? কতটুকু সে যেতে পারবে এবং কোথায় গিয়ে থমকে দাঁড়াতে হবে? এই বাণী দ্বারা দাওয়াতের ব্যাপকতা ও দাবীর স্বাধীনতা প্রমাণিত হয়। এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, ঈমানের প্রতি আহ্বান কর, সঠিক আক্বীদা ও বিশ্বাসের প্রতি আহ্বান কর, কিংবা উন্নত চরিত্র গঠনে উৎসাহ দান কর, মানুষকে সম্মান করার উপদেশ দাও। বরং ব্যাপক অর্থবোধক “ইলা সাবিলি রাব্বিকা তথা তোমার প্রতিপালকের পথে” শব্দ উল্লেখ করে সবকিছু বুঝানো হয়েছে। এ একটি শব্দই দায়ী’র চিন্তা ও কর্মের সুবিশাল ক্ষেত্র উন্মোচন করে দিয়েছে। ‘উদয়ূ’ তথা আহ্বান কর।

এ শব্দটিও এত ব্যাপক অর্থবোধক যে, এতে এমন কোন শর্তারোপ করা হয়নি যে, শুধুমাত্র ওয়াজ ও বক্তৃতার মাধ্যমে দাওয়াত দিবে, কিংবা লেখনী উপদেশ নসিহতের মাধ্যমে দাওয়াত দিবে। বা শুধু মাইক দ্বারা দাওয়াত দিবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়া যাবে না ইত্যাদি। বরং তা দাওয়াতের সম্ভাব্য সকল প্রকার মাধ্যম, উপকরণকেই শামিল করে। আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (রাহ.)এর এই দর্শন অনুযায়ী আমরা আজকের যুগের যেসব প্রচারমাধ্যম রয়েছে, সে মাধ্যমে কি আমরা আমাদের ইসলামের দাওয়াত কার্যক্রম চালাতে পারছি? আমরা কি এই যুুগের স্বীকৃত সকল প্রচার মাধ্যমে দাওয়াতের বাণী নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছি? বর্তমান মিডিয়ার প্রচার মাধ্যমে এমন শক্তি আছে কি, যা ইসলাম ও মুসলমানদের কাজে ব্যবহার হলে ইসলামের ক্ষতি হয়ে যাবে? যদি তা পরিচালনা করেন ইসলামের কোন দরদীপ্রাণ ব্যক্তি, গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমাদের আরব বিশ্বে রাজা-বাদশাহ্দের যে শত-সহস্র রাজপ্রাসাদ আছে, তার যে কোন একটি নির্মাণ কাজের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেই রয়টার্স, এএফপি’র মত আন্তর্জাতিক মানের মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, মুসলিম বিশ্বের কর্ণধাররা সে দিকে মোটেও লক্ষ্য করেন না। অথচ এই তো সে দিনও যেই ইয়াহুদিরা ইউরোপের পথে পথে ফেরী করে বেড়াতো এবং ইউরোপের রেস্টুরেন্টে লেখা থাকতো, এই রেস্তোরায় কুকুর ও ইয়াহুদিদের প্রবেশ নিষেধ, দেশহীন সেই জাতি আজ দুনিয়ার ৯৫ ভাগ মিডিয়া ও ব্যাংক বীমার মালিক হয়ে বিশ্বব্যাপী মিডিয়া সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের আবাসভূমি, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে ব্যবসা-বাণিজ্য, তাহযীব-তামাদ্দুনসহ সকল বৈধ অধিকার তারা খর্ব করছে। মানবতা বিরোধীরা তাদের এই সন্ত্রাসীর কর্মকা-ের পক্ষে বিশ্ববাসীর মতামত গড়ে তুলতে তাদের মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন প্রচার মাধ্যমগুলোতে অনবরত তথ্যসন্ত্রাস ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাসীর ম্যান্ডেট জয় করা দূরে থাক, তাদের নির্যাতনে নির্যাতিত, তাদের জুলুমে নিষ্পেষিত মুসলমানরা নিজেদের আর্তনাদটুকু প্রকাশ করতে পারে, এমন কোন প্রচার মাধ্যমও আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।

প্রযুক্তির সর্বাধুনিক আবিস্কার ইন্টারনেট। পৃথিবীর কোটি কোটি কম্পিউটারকে একটি কমন নেটওয়ার্কের অধীনে নিয়ে আসে যে প্রযুক্তি, তারই নাম ইন্টারনেট। তারযুক্ত বা তারবিহীন তরঙ্গের উপর ভেসে আমাদের তথ্য উপাত্ত মুহূর্তের মধ্যেই বিশ্বের আনাচে-কানাচে পৌঁছে দেয় এই প্রযুক্তি। মার্কিন মিলিটারীদের জন্য বিশেষভাবে চালু হওয়া এই প্রযুক্তি আজ পৃথিবীর সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত। অন্য ভাষায়, ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে আমরা বিশ্বের সর্বাধুনিক ও সবচে’ শক্তিশালী মিডিয়া বলেও অভিহিত করতে পারি। টেক্সট, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি সবই আদান প্রদান করা সম্ভব এর মাধ্যমে।

ইন্টানেটের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় যে সুবিধা আমরা পেয়ে থাকি, তাহলো প্রেরক ও প্রাপকের মাঝে প্রতিক্রিয়ার তাৎক্ষণিক আদান-প্রদান। প্রিন্ট মিডিয়া বা ইলেক্ট্র্রনিক মিডিয়াতে বার্তাটা একপক্ষীয় হয়। একপক্ষ বার্তা প্রদান করে যায়, আর আরেক পক্ষ তা কেবল গ্রহণ করেন। প্রতিক্রিয়া জানানোর কোনো ব্যবস্থা থাকে না সেখানে। কিন্তু ইন্টারনেট মিডিয়া এই দিক দিয়ে ভিন্ন। যে কোন বার্তায় তাৎক্ষণিক মন্তব্য-প্রতিক্রিয়া জানানোর সুবিধা দর্শক, শ্রোতা বা পাঠকের থাকে। পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দেয়া এই প্রযুক্তিকে আমরা কাজে লাগাতে পারি ইসলামের দাওয়াতে ও আমাদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বইপত্র, জুমার বয়ান, বড় বড় ওয়াজ মাহফিল সব কিছুই রাখা যেতে পারে ইন্টারনেটের আলমারিতে এবং খুব সহজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষের কাছে এসব পৌঁছে দেয়া যেতে পারে। ইন্টারনেট মিডিয়ার বড় একটি সুবিধা হল, অন্য সব মিডিয়ার মত এখানে কোন তথ্য পঁচে যায় না, নষ্ট হয় না, সার্চ ইঞ্জিনসমূহের কল্যাণে অনেক পুরানো তথ্যও ফিরে পায় সজীবতা। আবার সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়, হয় সমালোচনাও।

আরও পড়তে পারেন-

প্রযুক্তি জীবনকে খুব সহজ করে তোলে। যেসব কাজ আমরা দৈনন্দিন করে থাকি, প্রযুক্তি সেগুলোই করে দেয়। তবে অল্প সময়ে, নিখুঁতভাবে। এতে সময় বাঁচে, বরকতও হয়। ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের বড় বড় পাঠাগার এখন মাউসের ক্লিকে এক্সেস করা যায়। বাংলা, আরবী, ইংরেজী, উর্দু সব ভাষায় পর্যাপ্ত জ্ঞানের উপকরণ আছে ইন্টারনেটে।

ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায়, আমাদের বাংলাদেশের ক্বওমী মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ বরাবরই প্রযুুক্তি থেকে দূরে থাকেন। অথচ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। এমনকি ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়ার যে মূল উদ্দেশ্য দ্বীনের খেদমত করা, তাও অনেক বড় পরিসরে খুব সহজে করা যায়। এ ছাড়াও গবেষণা, মোতালায়া এবং আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে এ কম্পিউটার ও ইন্টারনেট মাধ্যম। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মত সব কিছুরই ভাল মন্দ দু’টি দিক থাকে। প্রযুক্তি এর বাইরে নয়। তবে মন্দ দিকের ভয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার পরিত্যাগ করা কতটুকুই যুক্তিযুক্ত, তা একবার ভেবে দেখা দরকার।

ইন্টারনেট বাজে উপকরণের সয়লাব, ঈমান দুর্বলকারী উপকরণ বেশী ইত্যাদি কারণে অনেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান না; এটা মোটেও ঠিক না। আমার মতে ইন্টারনেট একটা আলাদা পৃথিবী। বাস্তব পৃথিবীতেও যেমন বাজে জিনিসের সয়লাব থাকে, প্রয়োজন হয় সংযমের, তেমনি করে ইন্টারনেট পৃথিবীতে প্রয়োজন সংযমের। আসল কথা হল, প্রযুক্তি সাগরের স্রোততুল্য। স্রোতকে বাঁধা দেয়া সম্ভব নয়। ইন্টারনেট ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে নিশ্চিতভাবে। তবে ইন্টারনেটের সুব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখন থেকেই নিতে হবে।

ইতিহাস সাক্ষী, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী শত্রুর মোকাবেলায় সর্বদাই শত্রুর ব্যবহৃত অস্ত্র ও কৌশলের চেয়েও উন্নত ও আধুনিক অস্ত্র ও কৌশল প্রয়োগ করতেন। ইসলামের শত্রুদের সংখ্যা অধিক হলেও অস্ত্রশস্ত্র এবং কৌশলের দিক দিয়ে সর্বদায় মুসলমানগণ প্রতিপক্ষের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরুতে তুরস্কে ইসলামী খেলাফত পতনের মাধ্যমে তা ব্যাহত হয়। পরাজয় আর ব্যর্থতার অথৈ সমূদ্রে সেই বিশ্বজয়ীদের হাবুডুবু খাওয়া পরাজয়ের ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। বরং দেড় যুগ থেকে তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কেন এ পরাজয়?

বিগত মুসলিম মিল্লাতের এ চরম পরিণতির হেতু তালাশ করলে প্রথমে যা বেরিয়ে আসে তাহল, আমাদের শত্রুরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করেছে। আর সেই পরিবর্তীত কৌশলের বিপরীতে তাদের চেয়ে উন্নত বা সমপর্যায়ের কৌশল প্রণয়নে মুসলমানগণ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের সেই কৌশলটি হল, তথ্য প্রযুক্তিতে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। সময়ের ব্যবধানে যা আজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের সব চেয়ে মারাত্মক ও সফল অস্ত্র হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

শুধুমাত্র মিডিয়ার বদৌলতেই সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রবাহিনী আমাদের পবিত্র ভূমি ইরাক ও আফগানিস্তানে মানব ইতিহাসের জঘন্য ও বর্বরতম গণহত্যাকে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের মহান অভিযান বলে চালিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। শুধু কি তাই? তাদের নির্বিচার গণহত্যাকে ইরাক ও আফগানিস্তানের বীর সন্তানেরা প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল, আগ্রাসী শক্তির হাত থেকে নিজ নিজ মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এগিয়ে আসল। সেই লড়াইকে তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী তৎপরতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই মিডিয়ার বদৌলতেই। চোখের সামনে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহর ধারক-বাহক উলামায়ে কেরাম একবিংশ শতাব্দীর এই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর মরণাস্ত্রটির কার্যকারিতা উপলব্ধি করতে অক্ষম। মহান আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন। আমীন॥

লেখক: গ্রন্থকার, জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা এবং মুহাদ্দিস- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন