Home ইতিহাস ও জীবনী প্রয়াত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি এবং মহাসচিবগণের সংক্ষিপ্ত জীবনী

প্রয়াত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি এবং মহাসচিবগণের সংক্ষিপ্ত জীবনী

।। মাওলানা নূর হোসাইন সবুজ ।।

ঈমান-আকিদা সংরক্ষণের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ইসলাম ও রাসুলকে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবি’সহ ১৩ দফা দাবী নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল লংমার্চ ও ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই আলোড়নে নেপথ্য কারিগর ছিলেন একবিংশ শতাব্দীর কয়েকজন মুসলিম লিডার। তারা যেই ময়দানে অগ্রসর হয়েছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা তাদের পদচুম্বন করেছে। বাতিল যখনি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে, তারা তখনই গর্জে উঠেছেন। তারা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের নেতা, এই ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।

সে সংগ্রামী কাফেলায় তৌহিদী জনতার হৃদয়ে চিরস্মরণীয় কয়েকটি নাম- আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.), আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রাহ.), আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.), আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (রাহ.), আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ (রাহ.), আল্লামা আশরাফ আলী (রাহ.), আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জি (রাহ.), আল্লামা আব্দুল মোমেন শায়খে ইমামবাড়ী (রাহ.), আল্লামা মোস্তফা আজাদ (রাহ.), আল্লামা আহমদুল্লাহ আশরাফ (রাহ.), প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবিবুর রহমান( রাহ.), মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী (রাহ.), মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রাহ.), মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী (রাহ.), মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেল (রাহ.), মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী (রাহ.) প্রমুখ।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি এবং মহাসচিবগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.)

নাম ও জন্মঃ নাম- আহমদ শফী। পিতার নাম- বরকত আলী। ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম।

শিক্ষাজীবনঃ চট্রগ্রামের রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর জিরি মাদরাসায় কিছুদিন পড়াশোনা করেন। এরপর হাটহাজারী মাদরাসার ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন। সেখানে হাদীস, তাফসীর, ফিকহ ও দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবনঃ ১৯৪৬ সালে হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের সুচনা করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান ও পরবর্তীতে শায়খুল হাদীসের দায়িত্বও পালন করেন। ২০০৮ সালে কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের চেয়ারম্যান ও ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে ৬ বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷

রচনাবলীঃ তিনি বাংলা ও উর্দুতে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ফয়জুল জারী (বুখারীর ব্যাখ্যা), আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক্ব ওয়াল বাতিল, ইসলাম ও ছিয়াছাত, ইজহারে হাকিকাত, হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ইসলাম ও রাজনীতি, সত্যের দিকে করুন আহবান, সুন্নাত ও বিদ’আতের সঠিক পরিচয় ইত্যাদি।

ইন্তেকালঃ দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। হাটহাজারী মাদরাসায় জানাজা শেষে মাদরাসা ক্যাম্পাসের সামনের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রাহ.)

নাম ও জন্মঃ নাম- জুনায়েদ। উপাধী- বাবুনগরী। পিতার নাম-আবুল হাসান। ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম।

শিক্ষাজীবনঃ চট্টগ্রামের বাবুনগর মাদরাসায় মক্তব, হিফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৭৬ সালে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। ১৯৭৬ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য পাকিস্তানের করাচিতে জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। ২ বছর হাদিস নিয়ে গবেষণার পর হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।

কর্মজীবনঃ ১৯৭৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা হয়। ২০০৩ সালে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২০ সালে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.)এর ইন্তেকালের পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর আমির নির্বাচিত হন। এছাড়াও কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহ-সভাপতি, নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ও মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব পালন করেন।

গ্রেফতারঃ ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের পর ষড়যন্ত্রমূলক কয়েকটি মিথ্যা মামলায় ৭মে পুরান ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে ১৩ দিনের রিমান্ডে দেয়া হয়। রিমান্ডে তাঁকে অমানুষিক নির্যাতন ও চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন। পরবর্তীতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি মুক্তি পান।

রচনাবলীঃ তিনি আরবি, উর্দু ও বাংলায় বহু গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামার আরবি পত্রিকা আল বাসুল ইসলামি, দারুল উলুম দেওবন্দের মাসিক পত্রিকা আদ দায়ী, দারুল উলুম হাটহাজারীর মুখপাত্র মাসিক মুঈনুল ইসলাম’সহ বিভিন্ন সাময়িকীতে অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। উল্লেখযোগ্য কিতাবাদী- সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী, বিশ্ববরেণ্যে মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে ইমাম আবু হানিফা (রহ.), তালিমুল ইসলাম (আরবি), বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ির কবলে শবে-বরাত, ইসলামে দাড়ির বিধান, তাওহীদ ও শিরক: প্রকার ও প্রকৃতি, দারুল উলুম হাটহাজারীর কতিপয় উজ্জ্বল নক্ষত্র, আকাবিরে দেওবন্দের সিলসিলায়ে সনদ, ইলমে হাদীসের ভূমিকা، খুতবার ভাষা, মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.), ইসলাম আওর সায়েন্স, নাস্তিক মুরতাদের শরয়ী বিধান, মুকাদ্দামায়ে তানযীমুল আশতাত, খতমে নবুয়ত ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়, সিয়াম সাধনা, ইতেকাফ ও ঈদ মোবারক, মিলাদ কিয়াম ও সুন্নাত বিদআত, হক বাতিলের লড়াই, সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, ইলমে দ্বীনের গুরুত্ব ও ফযীলত ইত্যাদি।

ইন্তেকালঃ দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিস’সহ বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। রাত ৯টায় জানাজা শেষে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। 

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)

নাম ও জন্মঃ নাম- নূর হোসাইন। পিতা- মাওলানা আবদুল ওয়াদূদ। উপাধি- কাসেমী। ১৯৪৫ সালের ১০ই জানুয়ারী রোজ শুক্রবার বাদ জুমা কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে তাঁর জন্ম।

শিক্ষাজীবনঃ বাবা মায়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর নিজ গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কাশিপুর মাদ্রাসায় মুতাওয়াস-সিতাহ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর বরুড়ার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া দারুল উলুমে ভর্তি হয়ে হেদায়া পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। অতঃপর বাবার ঐকান্তিক ইচ্ছায় উচ্চশিক্ষার জন্য দারুল উলূম দেওবন্দে পাড়ি জমান। কিন্তু ভর্তির নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পারায় সাহারানপুর জেলার বেরিতাজপুর মাদরাসায় জালালাইন জামাত পড়েন। তারপর ভর্তি হন দারুল উলূম দেওবন্দে। আপন মেধা ও প্রতিভায় আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে অন্যান্য ছাত্রদের মধ্য হতে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নেন। তাকমিল জামাত পড়ার পর আরো তিন বছর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিগ্রি অর্জনে নিমগ্ন থাকেন। এ সময় তাকমিলে আদব, তাকমিলে মাকুলাত, তাকমিলে উলুমুল আলিয়া সমাপ্ত করেন। দেওবন্দে থাকাকালীন বাংলাদেশী ছাত্রদের নিকট তিনি সদরে বাঙ্গাল হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

কর্মজীবন: আল্লামা কাসেম নানুতুবী (রাহ.)এর প্রতিষ্ঠিত ভারতের মুযাফফার নগরে মুরাদিয়া মাদরাসায় তার উস্তাদ মাওলানা আব্দুল আহাদ (রাহ.)এর পরামর্শে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের সুচনা করেন। সেখানে একবছর শিক্ষকতার পর ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে এসে সর্বপ্রথম শরীয়তপুর জেলার মুহিউস সুন্নাহ মাদরাসায় শাইখুল হাদিস ও মুহতামিম পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন এবং দীর্ঘদিন যাবত দারুল ইকামার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে সদরুল মুদাররিস পদে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ মাদ্রাসায় যোগদান করেন। এখানে তিরমিজি শরিফের দরস দেন। মালিবাগে ৬ বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসা এবং ১৯৯৮ সালে তুরাগ থানায় জামিয়া সুবহানিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। ইন্তিকালের আগ পর্যন্ত তিনি এই দুই প্রতিষ্ঠানে প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

এছাড়াও তিনি চৌধুরীপাড়া মাদরাসা, শামসুল উলূম কাওলা মাদরাসা, টিকরপুর জামেয়া, জামেয়া ইসহাকিয়া মানিক নগর’সহ প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন। 

তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বিভিন্ন পদে থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ আঞ্জাম দিয়ে দিয়েছেন। ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং হাইয়্যাতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আধ্যাত্মিক জীবন: ১৯৭৩ সালে শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (রাহ.)এর কাছে প্রথমে বায়াআত হন। তার ইন্তেকালের পর মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.)এর কাছে বায়আত হন। ১৯৯৫ সালে মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.) বাংলাদেশে আসলে সেসময় তাঁর কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭৫ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে যোগদান করেন। ১৯৯০ সালে জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন। ২০১৫ সালের ৭ই নভেম্বর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। মৃত্যু পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে করেন। তিনি মহাসচিব হওয়ার পর দেশব্যাপী সংগঠন বিস্তৃতি লাভ করে।

এছাড়াও ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সময় থেকেই কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগরীর আমিরের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ এবং ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচী বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রাহ.)এর ইন্তিকালের পর গত ১৬ নভেম্বর তিনি কেন্দ্রীয় মহাসচিবের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

ইন্তিকালঃ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর, রবিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরদিন সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে তাঁর জানাজা শেষে তুরাগস্থ জামিয়া ছোবহানিয়ার গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী (রাহ.)

নাম ও জন্মঃ নাম- নূরুল ইসলাম জিহাদী। পিতার নাম- আব্দুর রশীদ। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার ধুরুং গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম।

শিক্ষাঃ বাল্যকালে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় হিফজ সম্পন্ন করে একই মাদ্রাসায় হেদায়াতুন্নাহু জামাত পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। অতঃপর দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে সেখান থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন।

কর্মজীবনঃ পটিয়া থানার কৈয়গ্রাম মাদ্রাসায় শিক্ষাদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। একবছর পর বাবুনগর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। অতঃপর ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। এরপর পুনরায় বাবুনগর মাদ্রাসায় যােগদান করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই ঢাকার খিলগাঁও-এ প্রতিষ্ঠা করেন আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম এবং মৃত্যু তিনি মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও তিনি চট্রগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা, কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মজলিশে শুরা ও আমেলার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলাম বিদ্বেষী অপতৎপরতা রোধে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অরাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলন পরিষদ। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব ও ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

রচনাবলীঃ তিনি বেশ কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, আখলাকে রাসূল (সা.), উজ্জ্বল নক্ষত্র, কাদিয়ানী ফিতনা ও মুসলিম মিল্লাতের অবস্থান, কুরবানীর আহকাম, গুলশানে নুর, আসমানে ইলম কি চাঁন্দ দরখসান্দে সিতারে, তাজকেরায়ে খতীবে আজম, শেখ সাদীর (রহ.) এর উপদেশ ভান্ডার, কাদিয়ানের বহুরূপী ভন্ড নবী, নুকুশে জিন্দেগী ও পান্দে নামায়ে নছীর, কওমি মাদ্রাসা, উদ্দেশ্য পদ্ধতি ফলাফল, ইত্যাদি।

ইন্তেকালঃ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ২৯ নভেম্বর সোমবার দুপুর ১২ টায় রাজধানী গুলশানের ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রাত ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে জানাজা শেষে হাটহাজারীতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরী (রাহ.)এর পাশে তাঁকে দাফন করা হয়৷

– মুহাম্মদ নূর হোসাইন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, শিক্ষার্থী-জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া উত্তরা, ঢাকা।