Home ইসলাম তরুণদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ৮ গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ

তরুণদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ৮ গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ: মানুষের জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তারুণ্যের সময়। জীবনের অন্যান্য অংশের চেয়ে তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল তথা ১৪ বা এর কম বেশি সময় থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত সবার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে তারুণ্যের এ সময়কে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। যুগে যুগে নবীদের দাওয়াতের প্রচার-প্রসার ও স্থিতিশীলতায় তরুণদের ভূমিকা বড় ছিল। পবিত্র কোরআনে ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে স্বজাতির কথা বর্ণিত হয়েছে, ‘আমরা এক যুবকের কথা শুনেছি, মানুষের কাছে সে ইবরাহিম বলে পরিচিত …।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৬০) 

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করায় কিছু তরুণ পালিয়ে গুহায় আশ্রয় নেন। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন, ‘যখন গুহায় কিছু তরুণ আশ্রয় নিয়ে বলল, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন এবং আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন। … আমি আপনাদের কাছে তাদের ঘটনা সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি, তারা কয়েকজন যুবক তাদের প্রতিপালকের ওপর ঈমান এনেছিল, আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়েছিলাম।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ১০-১৩) 

মহানবী (সা.) জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ সময়কে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। তাই তরুণ সাহাবিদের বিভিন্ন সময় তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো : 

১. আল্লাহর ওপর ভরসা : আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন তিনি বাহনে রাসুল (সা.)-এর পেছনে ছিলেন। তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বলেছেন, ‘হে কিশোর, আমি তোমাকে কিছু কথা শেখাব। তুমি আল্লাহর নির্দেশ সংরক্ষণ করবে। তোমাকেও তিনি সংরক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর নির্দেশনা পালন করবে, তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। কোনো কিছু চাইলে আল্লাহর কাছে চাও। কারো কাছে সাহায্য চাইতে হলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। জেনে রাখো, পুরো জাতি তোমার উপকার করতে চাইলেও আল্লাহ যতটুকু তোমার জন্য লিখে রেখেছেন ততটুকুই হবে। তারা তোমার ক্ষতি করতে চাইলেও আল্লাহ যতটুকু তোমার জন্য লিখে রেখেছেন ততটুকু হবে। (কারণ তাকদিরের) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠাগুলো শুকিয়ে গেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ২৫১৬)

২. যৌবনে আল্লাহর ইবাদত : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা সাত ধরনের ব্যক্তিকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। (তারা হলেন)

এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক।

দুই. এমন যুবক (ও যুবতী), যে রবের ইবাদতে (জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে) বেড়ে উঠেছে ।

তিন. এমন যুবক (ও যুবতী), যে রবের ইবাদতে (জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে) বেড়ে উঠেছে।

চার. এমন ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে।

পাঁচ. যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে, তার সন্তুষ্টির জন্য একত্রিত হয় এবং বিচ্ছিন্ন হয়।

ছয়. ওই ব্যক্তি, যাকে সুন্দরী ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন নারী ডাক দিলেও সে জবাবে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।

সাত. যে ব্যক্তি এমনভাবে সদকা করে যে তার বাম হাত জানে না তার ডান হাত কী দিয়েছে।

আট. যে ব্যক্তি একাকিত্বে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ১৪২৩)

আরও পড়তে পারেন-

৩. বিয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান : আলকামা (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আমি আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় ওসমান (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বললেন, হে আবু আবদুর রহমান, আপনার সঙ্গে আমার কথা আছে। তারা পৃথক হয়ে কথা বললেন। ওসমান (রা.) বললেন, হে আবু আবদুর রহমান, আমরা তোমাকে পুনরায় বিয়ে দিতে চাই, তোমার কী মত? এতে তোমার আগের কথা মনে পড়বে। অতঃপর তিনি বললেন, রাসুল (সা.) আমাদের বলেছিলেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়, তোমাদের কেউ সামর্থ্যবান হলে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা দৃষ্টি রক্ষা করে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করে। আর কেউ তা না পারলে সে যেন রোজা রাখে। কারণ তা তাকে নিয়ন্ত্রণ রাখবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর : ৫০৬৫)

৪. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ : মালিক বিন আল হুওয়াইরিস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর কাছে আসি। আমরা সমবয়সী কয়েকজন যুবক ছিলাম। মহানবী (সা.)-এর কাছে আমরা প্রায় ২০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করি। রাসুল (সা.) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহপরায়ণ। তিনি ভাবলেন যে আমরা হয়তো পরিবারের সাক্ষাৎ করতে চাইছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের কে কে আত্মীয়-স্বজন রেখে এসেছে? আমরা তাঁকে বললাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমরা পরিবারের কাছে ফিরে যাও। তোমাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাও। তাদের শিক্ষা দাও। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ জানাও। আর নামাজের সময় যেন তোমাদের একজন আজান দেয়। অতঃপর তোমাদের কোনো প্রবীণ ব্যক্তি যেন তোমাদের ইমাম হন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৩১) 

৫. দোয়া পাঠের পরামর্শ : মুআজ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘হে মুআজ, আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আল্লাহর শপথ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ অতঃপর তিনি বলেছেন, ‘হে মুআজ, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর কখনো এই দোয়া পড়া ছাড়বে না : আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদিকা।’ অর্থ : হে আল্লাহ, আমাকে সহযোগিতা করুন যেন আমি আপনাকে স্মরণ করি, কৃতজ্ঞতা জানাই ও আপনার ইবাদত সুন্দরভাবে করি। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১৫২২) 

৬. মেধাবীদের জ্ঞানার্জনে উৎসাহ : জায়েদ বিন সাবিত (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) মদিনা আগমন করলে আমার বাবা আমাকে নিয়ে তাঁর কাছে যান। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এ কিশোর বনু নাজ্জার গোত্রের সন্তান। ইতিমধ্যে সে আপনার ওপর মহান আল্লাহর অবতীর্ণ কোরআনের প্রায় ১০টি সুরা মুখস্থ করেছে। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) খুবই মুগ্ধ হলেন। তিনি বললেন, ‘হে জায়েদ, তুমি আমার জন্য ইহুদিদের কিতাব শিখে নাও। আল্লাহর শপথ, আমি নিজের কিতাবের ব্যাপারে ইহুদিদের নিরাপদ মনে করি না।’ জায়েদ (রা.) বলেন, অতঃপর আমি তাদের কিতাব শিখতে শুরু করি। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই আমি তাতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করি। আমি রাসুল (সা.)-কে তাদের পাঠানো চিঠিপত্র পড়ে শোনাতাম। তাঁর পক্ষ থেকে চিঠির উত্তর দেওয়া হতো। (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর : ৭১৯৫)

৭. জীবন সুন্দর করার পরামর্শ : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‌‘হে আবু হুরাইরা, আল্লাহভীরু হও- অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত বিষয় পরিহার করো, তুমি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ইবাদতগুজার হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকে সন্তুষ্ট হও, সবচেয়ে ধনী হবে। তুমি নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য যা পছন্দ করো তা অন্য মুসলিম ও মুমিনের জন্য পছন্দ করো। নিজের জন্য যা অপছন্দ করো তা অন্যের জন্য অপছন্দ করো। তাহলে তুমি পরিপূর্ণ মুমিন বলে গণ্য হবে। পড়শীর সঙ্গে সুন্দরভাবে থাকো, তুমি পরিপূর্ণ মুসলিম বলে গণ্য হবে। বেশি হাসা পরিহার করো। কারণ বেশি হাসা অন্তর মৃত হওয়ার মতো।’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ২৩০৫) 

৮. জান্নাত লাভে সচেষ্ট হওয়া : মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। একদিন সকালে তাঁর পাশ দিয়ে চলছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন আমল সম্পর্কে বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললে, ‌‘তুমি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। তবে আল্লাহ সহজ করলে তা করা সহজ। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দেবে, রমজানে রোজা রাখবে ও  হজ করবে।’ অতঃপর বলেন, ‘আমি কি তোমাকে কল্যাণের পথ দেখাব না? রোজ ঢালের মতো, সদকা পাপ মোচন করে যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়। গভীর রাতে নামাজ আদায় করা। তিনি তিলাওয়াত করেন, ‘তারা বিছানা ত্যাগ করেন, মহান রবের কাছে দোয়া করেন।’ (সুরা : সিজদা, আয়াত : ১৬)। … তিনি বললেন, ‌‘আমি কি তোমাকে এসব কিছুর মূলকথা বলব না? আমি বললাম, অবশ্যই বলুন। অতঃপর তিনি নিজের জিহ্বা ধরে বলেন, তুমি এটা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা কি আমাদের কথার কারণে পাকড়াও হব? তিনি বললেন, হে মুয়াজ, জিহ্বার কর্মফল ছাড়া আর এমন কী জিনিস আছে যা মানুষকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে?’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ২৬১৬)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।