Home ইসলাম বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র কোরআন

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র কোরআন

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ: প্রাচীন দুর্লভ বস্তু ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে সমাজে। নিজস্ব প্রচেষ্টায় সংগৃহীত বিরল সামগ্রী একসময় অনন্য মর্যাদায় নিয়ে যায় ব্যক্তিকে। তেমনই জর্দানের ইবরাহিম আহমদ নাওয়ার ঐতিহ্যবাহী নানা বস্তু সংরক্ষণ করে স্থান পেয়েছেন খবরের পাতায়।

আনাদোলু এজেন্সির খবরে জানা যায়, আহমদ নাওয়ারের সংরক্ষণে আছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কোরআনের কপি। কোরআনের সবচেয়ে ছোট কপি ছাড়াও তাঁর কাছে আরো অনেক দুর্লভ সামগ্রীও আছে। ওমানের আল সালত নামক শহরে ‘জাতীয় ঐতিহ্য জাদুঘর’ নামে তিনি একটি স্থায়ী সংরক্ষণাগার স্থাপন করেছেন।

৬২ বছর বয়সী নাওয়ার বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের এই কপি দেখতে আসা বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই সবচেয়ে ছোট আকৃতির কোরআন। এর প্রস্থ ১.৫ সেন্টিমিটার এবং দৈর্ঘ্য ২.৫ সেন্টিমিটার।’

আরও পড়তে পারেন-

তিনি আরো বলেন, ‘দর্শনার্থীদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকৃতির কোরআনের মুদ্রিত কপির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১.৭৫ সেন্টিমিটার ও ২.৫ সেন্টিমিটার। কিন্তু আমার সংরক্ষিত কপি এর চেয়েও বেশি ছোট। তাই সবাই মনে করেন যে আমার সংরক্ষিত এই কপি সবচেয়ে ছোট আকৃতির কোরআন।’

ক্ষুদ্রাকৃতির কোরআনের কপিতে এর মুদ্রণ ইতিহাস সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। তবে তাতে পুরো কোরআন রয়েছে। সূচিপত্রসহ এই কপির পৃষ্ঠাগুলো খুবই পাতলা ও কোমল। পাতার মধ্যে আছে নানা রকমের সাজ। তবে তা ম্যাগনিফাইং মাইক্রোস্কোপ ছাড়া পড়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নাওয়ার বলেন, ‘১৯৮০ সালের দিকে আল সালত এলাকার এক ব্যক্তির কাছ থেকে তা সংগ্রহ করি। ৪০ বছর আগে সেই লোকের বয়স ছিল ৭৫ বছর। তিনি ছিলেন শহরের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি। তাঁর বাবার কাছ থেকে তিনি কোরআনের এই দুর্লভ কপি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত শতাব্দীর আশির দশকে জাতীয় পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে বেশ লেখালেখি হয়েছিল। তা দেখে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন যে এর বয়স এক শর বেশি হবে। ধারণা করা হয়, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে তা মুদ্রিত হয়েছিল।’

নাওয়ার জানান, কাগজের ইতিহাস সম্পর্কে অভিজ্ঞরা এই কপির উন্নতমানের পৃষ্ঠা, মজবুত বাঁধাই ও সুন্দর মুদ্রণ দেখে অবাক হন। এত সূক্ষ্মভাবে তা বাঁধাই করা কেবল ইরানি কিংবা তুর্কিদের পক্ষেই সম্ভব। তবে অনেকের বিশ্বাস যে তা তুর্কিরাই করেছেন। কারণ কোরআনের মুদ্রণ আরবি ভাষায় হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর কৃপায় আমি মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে এই কপির সুরা বাকারা অংশটুকু পাঠ করেছি। অত্যন্ত ছোট্ট লিপি হওয়ায় এতে প্রায় ১০ দিন লেগেছে। এ ছাড়া এক শুক্রবার এর সুরা কাহাফ অংশটুকুও পড়েছি।’

আল সালত শহরে প্রাচীন সামগ্রী সংরক্ষণে ‘জাতীয় ঐতিহ্য জাদুঘর’ নিজস্ব প্রচেষ্টায় গড়ে উঠলেও তাতে দুর্লভ ও অভিনব নানা সামগ্রী সংরক্ষিত আছে। সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও জাদুঘরটি ২৫ হাজারের বেশি প্রাচীন সামগ্রীতে সমৃদ্ধ। উনিশ শতাব্দীর শুরুর কাল থেকে নানা বস্তু স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরে।

এসব দুর্লভ সামগ্রী সংরক্ষণ করতে নাওয়ারকে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। নিজের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তিনি বিভিন্ন দেশ ও প্রাচীন শহরের লোকদের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তা সংগ্রহ করেন। ফলে তাঁর জাদুঘর জর্দানের আল সালত শহরে ঘুরতে আসা সব পর্যটকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য ঘিরে গড়ে উঠেছে জর্দানের আল সালত শহর। গত ২৭ জুন জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি এই শহরকে ‘সহনশীলতা ও ঐতিহ্য আতিথেয়তার শহর’ হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দেয়।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।