Home ইসলাম আল্লাহ’র কাছে চাওয়ার নাম দোয়া

আল্লাহ’র কাছে চাওয়ার নাম দোয়া

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

কোন প্রয়োজনে আল্লাহ্কে ডাকা দেওয়া এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার নাম হল দু‘আ। মানুষের কাছে চাওয়ার নাম ভিক্ষা। তাই কোন প্রয়োজন দেখা দিলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার কাছেই দু‘আ করতে হবে।  দু‘আ করলে আল্লাহ্ খুশি হন আর  দু‘আ না করলে নারায হন। আমরা যেমন দু‘আ করি অন্যান্য নবীর উম্মতগণও  দু‘আ করতেন, কিন্তু আমাদের বেলায়  বলা হয়েছে, “দু‘আ কর; আমি কবুল করব”। (সূরা আল মু’মিন)। পূর্ববতী উম্মতদের বেলায় এ ওয়াদা ছিল না। শুধু পয়গাম্বরগণের সঙ্গেই এ কথাটি খাস ছিল। কিন্তু  উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)এর জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ শ্বাশ্বত আদেশ ও ওয়াদাকে আ’ম করে দিয়েছেন। যা উম্মতে মুহাম্মদীর এক অন্যতম বৈশিষ্ট। (ইবনে কাসির)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যার জন্য দু‘আর দ্বার খুলে দেওয়া হয়, তার জন্য রহমতের দ্বার খুলে দেওয়া  হয়। (তিরমিযী)।

অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহর কাছে দু‘আর চেয়ে অধিক সম্মানিত কোন বিষয় নেই। (তিরমিযী)। তিনি আরো বলেন- দু‘আ ইবাদতের মগজ, দু‘আ মু’মিনের হাতিয়ার, দু‘আ দ্বীনের খুঁটি, দু‘আ আসমান-জমিনের নূর। (হাকেম)।

অপর এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে রহমতের জন্য দু‘আ কর। কেননা, তিনি অনুনয় বিনিনয় ও দু‘আকে খুবই পছন্দ করেন। অভাব-অনটনের সময় সচ্ছলতার জন্যে দু‘আ করে রহমত পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা সবচেয়ে বড় ইবাদত। (তিরমিযী)।

অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা দু‘আ করতে অপারগ হয়ো না। কেননা, দু‘আসহ কেউ ধবংসপ্রাপ্ত হয় না। (ইবনে হাব্বান)।

সুতরাং সকল অভাব-অনটন, রোগ-ব্যাধি, চিন্ত-ভাবনা, দুঃখ-দুর্দশা ও বিপদাপদে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। কেননা একমাত্র তিনিই তাঁর অপার মহিমায় সমস্ত দুনিয়ার সকলের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেন।

একবার সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরজ করলেন, আমরা আল্লাহর কাছে কিসের দু‘আ করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আফিয়াতের’ দু‘আ কর। কেননা নিরাপত্তা চাওয়ার চেয়ে কোন উত্তম দু‘আ নেই।

আরও পড়তে পারেন-

‘আফিয়াত’ অর্থাৎ ‘নিরাপত্তা’ শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবহ শব্দ। তাই সব সময় আমরা আফিয়াতের দু‘আ করবো এবং সেই সাথে আল্লাহর কাছে দু‘আ কবুলের প্রত্যাশা রাখবো। কারণ দু‘আ করে নিরাশ হতে নেই। বান্দা আল্লাহর কাছে যে দু‘আ করে, তাই কবুল হয়। তবে দু‘আকারীর ফায়দার জন্য কখনো কখনো দেরী হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- বান্দা আল্লাহর কাছে যে দু‘আই করে, আল্লাহ তা‘আলা  তা কবুল করেন; যদি তা কোন গোনাহ বা সর্ম্পকচ্ছেদের দু‘আ না হয়।

দু‘আ কবুল হওয়ার উপায় তিনটি। তন্মধ্যে কোন না কোন উপায়ে দু‘আ কবুল হয়ে থাকে। (১) যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া। (২) প্রার্থনাকৃত বিষয়ের পরিবর্তে পরকালের কোন সওয়াব ও পুরষ্কার দান করা এবং (৩) প্রার্থনাকৃত বিষয় না পাওয়া। কিন্তু কোন সম্ভাব্য বিপদাপদ সরে যাওয়া। (মাযহারী)।

দু‘আ এমন এক গুরুত্বপূর্ণ আ‘মাল যা কবুলের জন্য  কোন বিষয় ও সময়কে শর্ত সাব্যস্ত করা হয়নি। এমন কি মুসলমান হওয়াও দু’আ কবুলের শর্ত নয়। কাফেরের দু‘আও আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন। ইবলিশ কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকার দু‘আ করেছিল এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তা কবুল করেছেন। তবে নেক বান্দাদের দু‘আ বেশী  কবুল হয়ে থাকে। যদিও দু‘আর জন্যে কোন সময় ও অযু শর্ত নয়। তবে হাদিসে পাকে কোন কোন বিষয়কে দু‘আ কবুলের পথে বাধা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এসব বিষয় থেকে আমাদের বেঁচে থাকা খুবই জরুরী।

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন কোন লোক খুব সফর করে এবং আকাশের দিকে হাত তুলে ‘ইয়া রব, ইয়া রব’ বলে দু‘আ করে; কিন্তু তাদের পানাহার ও পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম পন্থায় অর্জিত। এমতাবস্থায় তাদের দু‘আ কীভাবে কবুল হবে? (মুসলিম)।

অতএব, আমরা সর্বদা হালাল বস্তু পানাহার  করবো- যেন আমাদের  দু‘আ কবুল হওয়ার যোগ্য হয়। সেই সাথে আমাদের প্রয়োজনসমুহ আল্লাহর সামনে কায়োমনে পেশ করে দু‘আর দ্বারা সেগুলো সমাধান করতে সচেষ্ট হবো। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হারাম থেকে বেঁচে থাকার এবং সকল সমস্যায় তাঁর  শাহী দরবারে সাহায্য চাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন!!

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল বাশার ইন্টারন্যাশনাল, প্রধান উপদেষ্টা- আল মাদানী ফাউন্ডেশন-ঢাকা, প্রকাশক- উম্মাহ২৪ডটকম।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।