Home জাতীয় মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিত মানবিক ও শিক্ষা সেবা দিয়ে...

মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিত মানবিক ও শিক্ষা সেবা দিয়ে আসা এক বীর আলেম

উম্মাহ প্রতিবেদন: মিয়ানমারের জাতিগত নির্মূল অভিযান ও হত্যার মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার শুরুর দিক থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে খাদ্য ও ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন মানবিক সেবামূলক কাজে নিজেকে ধারবাহিকভাবে এখনো পর্যন্ত সম্পৃক্ত রেখেছেন মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী। শুধু ত্রাণ বিতরণ নয়, তিনি রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর জন্য শত শত টয়লেট এবং নারীদের জন্য টিন ঘেরা দিয়ে ফ্লোর পাকা গোসলখানা নির্মাণ এবং নলকূপ স্থাপনের কাজ করেছেন। এই পর্যন্ত করেই তিনি থেমে থাকেননি। রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ কয়েকটি বড় পরিসরের মসজিদ নির্মাণ, শিশুদের মাঝে পড়ালেখার আলো ছড়িয়ে দিতে মসজিদ ভিত্তিক মক্তব চালু এবং কিশোর-তরুণদের জন্য কয়েকটি বড় মাদ্রাসাও স্থাপন করেছেন তিনি। এর মধ্যে একটি মহিলা মাদ্রাসাও রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, তাঁর এই সহযোগিতা মূলক কার্যক্রম তিনি এখনো ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রেখেছেন। মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়মিত বেতনও পরিশোধ করে আসছেন।

সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবর তিনি ৩ দিনের জন্য কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প, যেখানে তার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, মক্তব ও মাদ্রাসা রয়েছে, সেগুলো পরিদর্শনে সফর করেন। এ সময় তিনি উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত মাদরাসায়ে মাহাদে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)এর ১৫ জন শিক্ষক, থেইংখালী মাদানী মসজিদ এর ইমাম-মুয়াজ্জিন, কাসেমী মক্তবের ৪ জন শিক্ষককে মাসিক বেতন পরিশোধ করেন। এছাড়াও একই দিনে তিনি টেকনাফের মুছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মেশকাত পর্যন্ত মাদ্রাসার ১৯ জন শিক্ষককেও মাসিক বেতন পরিশোধ করেন। অপরাপর মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে স্থানীয় সহযোগিদের হাতে টাকা দিয়ে আসেন। তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের পড়াশোনার খোঁজ-খবর নেন। মাদ্রাসার জিম্মাদারদের কাছ থেকে গভীর মনোযোগের সাথে শুনেন- কার কি কি প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষকদেরকে অনুরোধ করেন, ছাত্রদেরকে যেন মায়া-মমতার সাথে যত্ন করে ক্লাস দেওয়া হয়।

মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা মাহাদ ওমর বিন খাত্তাব (রাযি.) হেফজখানা ও এতিমখানা। ছবি- উম্মাহ।

মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীর হাতে গড়ে ওঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহে প্রাথমিক থেকে শুরু করে স্নাতক স্তর পর্যন্ত ৬টি বড় বড় মাদ্রাসা ও বেশ কয়েকটি মক্তব। এসব মাদ্রাসায় প্রায় ৩ হাজারের অধি রোহিঙ্গা ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে আসছে। প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা আলেম চাকুরির সুযোগ পেয়েছে। তিনি এসব মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজনীয় টিনের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। বিছানাপাতি ও টেবিলের যোগান দিয়েছেন। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে লাইট-ফ্যানের ব্যবস্থা করেছেন। প্রয়োজনীয় বাথরুম, গোসলখানা ও অজুখানার ব্যবস্থা করেছেন। মাদ্রাসাসমুহে ছাত্র-শিক্ষকদের নামাযের জন্য একটা করে মসজিদও নির্মাণ করে দিয়েছেন। মসজিদসমূহেও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন।

শুধু মানবিক যোদ্ধা নয়, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীর আরো পরিচয় রয়েছে। তিনি হেফাজতের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের এক সংগ্রামী বীর ও সদা সক্রিয় নেতা হিসেবে যুগ্মমহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি তিনি ওলামায়ে দেওবন্দের নীতি-আদর্শে পরিচালিত রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামেরও সক্রীয় যুগ্মমহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একই সাথে তিনি ঢাকার মিরপুরে ২টি মাদ্রাসা পরিচালনার সাথেও যুক্ত আছেন। আলেম সমাজের মাঝে তিনি অত্যন্ত ভদ্র, সুহৃদ এবং সক্রীয় দায়ী হিসেবে বেশ সমাদৃত ও সুপরিচিত। তাবলীগের চলমান সংকটের নিরসনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আমরা দেখেছি।

কীভাবে এত ব্যয়বহুল সেবামূলক কাজ তিনি আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন- এই প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী বলেন, এক মাস যাবত ঢাকা ও আশপাশের জেলায় তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পরিচিত বিভিন্ন দানবীর মানুষজনের কাছে গিয়ে গিয়ে এই সেবামূলক দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখতে তাঁদের সহযোগিতা চেয়ে অর্থ সংগ্রহ করেন এবং মাস শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে খরচ করেন। ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া-মিরপুর মাদ্রাসাসমুহ তত্ত্বাবধানে ব্যাপক সহযোগিতা করে থাকেন। তাঁর এই সেবামূলক কাজে কক্সবাজার হেফাজতের বেশ কয়েকজন কর্মীও শ্রমসেবা দিয়ে তাঁকে সহযোগিতা করেন বলে জানান।

গত রমযানেও তিনি কয়েক হাজার রোহিঙ্গার মাঝে লাকড়ি, ইফতার সামগ্রী এবং শিশুদের জন্য ঈদের জামা-কাপড় বিতরণ করে আসেন। গত কোরবানীর ঈদের তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬টি গরু কোরবানীর ব্যবস্থা করে আসেন। সেসব গোস্ত রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

আর্তমানবতার সেবায় মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী এক অনুকরণীয় ও উৎসাহ জাগানিয়া ব্যক্তিত্ব। আমরা তাঁর সকল কাজে বরকত, সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূর জন্য দোয়া করছি।