Home ইসলাম ঋণখেলাপি পরকালে পার পাবে না

ঋণখেলাপি পরকালে পার পাবে না

।। ড. ইকবাল কবীর মোহন ।।

ঋণখেলাপ বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতে একটি অতি পরিচিত বিষয়। ব্যাংকের ব্যবসা-বাণিজ্য এই ঋণখেলাপ কালচারের কারণে অত্যন্ত ক্ষতির মধ্যে পড়ে। যেসব ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করে এবং সামর্থ্য থাকার পরও তারা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করে না; তাদের ঋণখেলাপি বলা হয়। এসব ঋণখেলাপি ব্যাংকের অর্থকে নিজেদের অর্থ হিসেবে মনে করে এর যথেচ্ছ ব্যবহার করে।

তারা নিজের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে ব্যাংকের তথা জমাকারীদের সম্পদ মেরে খেতেও দ্বিধাবোধ করে না। এরূপ প্রতারক শ্রেণির খেলাপি গ্রাহককে অন্যের অধিকার হরণকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইসলামী শরিয়ায় এরূপ খেলাপি গ্রাহকের ব্যাপারে কঠোর বিধান আছে। এদের জালিম এবং ঋণ পরিশোধে তাদের টালবাহানাকে জুুলুম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না। ’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘সচ্ছল ব্যক্তির টালবাহানা করা জুলুম। ’ (সহিহ বুখারি, ২২৮৮)

আরও পড়তে পারেন-

মহানবী (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহর নিষিদ্ধ কবিরা গুনাহের পরে সবচেয়ে গুরুতর গুনাহ হলো, কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তার কাছে হাজির হলো এবং এই ঋণ পরিশোধ করার মতো কোনো ব্যবস্থা রেখে যায়নি। ’ (আবু দাউদ)

ঋণ পরিশোধ না করে কেউ মারা গেলে পাওনাদার যদি ঋণগ্রহীতাকে মাফ না করে বা ঋণ মওকুফ না করে অথবা ঋণীর ওয়ারিশরা সেই ঋণ পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন নেক আমল দানের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে (কিয়ামতের দিন) তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য কোনো দিনার বা দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না; বরং পাপ ও নেকি অবশিষ্ট থাকবে। ’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২২২২)

অন্যত্র রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে, সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয় তার ভাইয়ের পক্ষে তার কাছ থেকে পুণ্য কেটে নেওয়ার আগেই। কারণ সেখানে কোনো দিনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে তাহলে তার (মজলুম) ভাইয়ের গুনাহ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮৫)

সমাজের একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করে না। ফলে এই অপকর্মের খেসারত গুনতে হয় গোটা জাতিকে। এভাবে ঋণখেলাপিরা হক্কুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার নষ্ট করে চলেছে। যথাযথ আইনের অনুশাসন এবং দ্বিনবিমুখিতাই এই লাগামহীন ঋণখেলাপির মূল কারণ। আমাদের স্মরণ রাখা উচিত, হক্কুল ইবাদ নষ্টকারীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না। আর জনগণের সম্পদ লুট করার পরিণাম আরো ভয়াবহ। কেননা ব্যাংকঋণের সঙ্গে অগণিত মানুষের সম্পদ জড়িত।

মানুষের হক নষ্টকারী এমন মানুষ পরকালে নিঃস্ব হয়ে উঠবে। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।