Home ইসলাম ইসলামী শিল্পকলার বাতিঘর

ইসলামী শিল্পকলার বাতিঘর

।। আতাউর রহমান খসরু ।।

ইসলামী শিল্পকলা তার অনন্য সৌন্দর্য, সূক্ষ্ম ফুলের কারুকাজ, জ্যামিতিক ও ক্যালিগ্রাফিক-শৈলীর জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এর বিস্তৃত অঙ্গনে স্থাপত্য, ক্যালিগ্রাফি, অঙ্কন, গ্লাস, সিরামিকস ও বুননশিল্পসহ শিল্পের প্রায় সব ধারা অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী শিল্পকলার অস্তিত্ব শত শত বছর ধরে টিকে আছে। পূর্ব-পশ্চিমের সাম্রাজ্যগুলো যুগে যুগে যেসব রাজপ্রাসাদ ও সমাধি নির্মাণ করেছে তাতে এবং আধুনিক সময়ের জাদুঘরগুলোতে তার সরব অস্তিত্ব আছে।

ইসলামী শিল্পকলার এই বিস্তৃতি ও ঐশ্বর্য তুলে ধরার একটি উদ্যোগ ‘দ্য হাউস অব ইসলামিক আর্ট’।

সৌদি আরবের ব্যতিক্রমধর্মী এই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন দেশের এক হাজারেরও বেশি ঐতিহাসিক নিদর্শন। নিদর্শনগুলো থেকে বিভিন্ন যুগে ইসলামী শিল্পকলার বৈচিত্র্য সম্পর্কে সহজেই ধারণা লাভ করা যায়। দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম ও গবেষণার ফসল ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক নিলাম ও ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে। সৌদি ব্যবসায়ী ও ‘দ্য মুহাম্মদ সালেহ সিরাফি ফাউন্ডেশন’-এর স্বত্বাধিকারী সালিহ বিন হামজা সিরাফি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

সৌদি মিউজিয়ামস কমিশনের সিইও স্টেফিনো কার্বোনির অনুমোদনের পর ২৩ সেপ্টম্বর ২০২১ সালে তা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যাশা, নতুন জাদুঘরটি জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠবে এবং তা সারা বিশ্বের দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সংলাপের বাতিঘর হবে। জাদুঘরের কিউরেটর মুহাম্মদ আল-কুরবি বলেন, ‘জাদুঘরের পরিকল্পনা শুরু হয় সাত বছর আগে। যখন প্রতিষ্ঠাতার ছেলে আনাস সিরাফি তাঁর সংগ্রহশালার জন্য নিদর্শনগুলো সংগ্রহ শুরু করেন। এরপর চিন্তা আসে জাদুঘরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার। ’

আরও পড়তে পারেন-

‘দ্য হাউস অব ইসলামিক আর্টস’-এর প্রধান প্রদর্শনী হলো ছয়টি। যাতে ইসলামী শিল্পকলার পৃথক পৃথক ধারা তুলে ধরা হয়েছে। মুহাম্মদ আল-কুরবি বলেন, জেদ্দা জাদুঘর পৃথক ছয়টি হলে বিভক্ত। তা হলো—মৃৎ ও কাচশিল্প, মুদ্রা, যেসব শিল্প মুসলিম ও অমুসিলমদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন তৈরি করে, ক্যালিগ্রাফি, পাণ্ডুলিপি, কাপড় ও বুননশিল্প, যাতে কাবাঘরের গিলাফ ও মাহমালকে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, প্রতিটি বিভাগে বিশেষ নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করতে। বিশেষত প্রত্যেক বিভাগে যেন এমন কিছু থাকে, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

মৃিশল্প বিভাগে তুলে ধরা হয়েছে পৃথিবীতে কিভাবে মৃিশল্পের বিকাশ ঘটেছিল এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ইসলামী শিল্পকলার সহযাত্রায় রঙিন, সুসজ্জিত ও অলংকৃত হয়ে উঠেছিল। বুননশিল্প বিভাগে প্রধান কাবার গিলাম ও ‘মাহমাল’ তথা কাবার গিলাফ বহনকারী বিশেষ হজযাত্রার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

জাদুঘরের মুদ্রা বিভাগটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে স্থান পেয়েছে উমাইয়া, আব্বাসীয়, সাসানি, বাইজান্টাইন থেকে আধুনিক সৌদি আরবের প্রায় পাঁচ শ মুদ্রা। যার কোনো কোনোটি মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে ব্যবহৃত হতো। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগের স্বর্ণ, রৌপ্য ও তামার মুদ্রা আছে। যাতে লেখা আছে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। ’

ক্যালিগ্রাফি বিভাগে আছে আরবি ক্যালিগ্রাফি খচিত ১২টি বিরল পাণ্ডুলিপি। এর মধ্যে উসমানীয় আমলের পবিত্র কোরআনের একটি অনুলিপি উল্লেখযোগ্য। যা প্রায় তিন শ বছর আগের। প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফিশিল্পী ইসমাইল জুহরি অনুলিপি প্রস্তুত করেন। ‘দ্য হাউস অব ইসলামিক আর্ট’ আশা করছে, দ্রুততম সময়ে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ওপর বিশেষ দুটি হল উদ্বোধন করতে পারবে, যাতে পবিত্র দুই মসজিদের দুর্বল ছবি ও নিদর্শনাবলি তুলে ধরা হবে।

আরব নিউজ অবলম্বনে

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।