দুয়ারে কড়া নাড়ছে মৃত্যু, বুঝতে পারছেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাবেন… ঠিক ওই মুহূর্তে একজন মানুষের মস্তিষ্কে কী চলে? অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেলেন গবেষকরা। এমনকি মৃত্যুর আগমুহূর্তে মানুষের মস্তিষ্ক তরঙ্গ কিভাবে কাজ করে তা রেকর্ডও করেছেন তারা!
মৃগীরোগে আক্রান্ত, ৮৭ বছর বয়সী জনৈক বৃদ্ধের মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরিমাপ করতে গিয়েছিলেন একদল বিজ্ঞানী। কিন্তু নিউরোলজিক্যাল রেকর্ডিং এর সময় হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি, সেই সাথে দিয়ে যান এক অদ্ভুত আবিষ্কার!
ওই রেকর্ডিংয়ে দেখা যায়, মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড আগে-পরে বৃদ্ধের মস্তিষ্ক তার জীবনের বিভিন্ন স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
গত মঙ্গলবার ‘ফ্রন্টিয়ারস ইন এজিং নিউরোসায়েন্স’- এ প্রকাশিত গবেষণায় মস্তিষ্কের এ ধরনের কার্যক্রমকে জীবনের ‘অন্তিম স্মৃতিচারণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা।
কানাডার ভ্যাংকুয়েভারভিত্তিক গবেষক দলটির সদস্য ও গবেষণার সহ-লেখক ড. আজমল জেমার জানান, অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া এই রেকর্ডিংই মৃত্যুশয্যায় থাকা কোনো মানুষের মস্তিষ্কের প্রথম রেকর্ডিং।
সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে ড. জেমার বলেন, “এটা আসলে ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেছি আমরা, মস্তিষ্কের এই সিগন্যাল রেকর্ডের কোনো পরিকল্পনা আমাদের ছিল না।”
তার মানে কি জীবনের শেষ সময়টায় আমরা প্রিয়জনদের সাথে কাটানো, সুন্দর স্মৃতিগুলো এক ঝলক দেখতে পাবো? ড. জেমার বলছেন, এখনই তা বলে দেওয়া সম্ভব নয়।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
“আমি যদি দার্শনিকভাবে চিন্তা করি তাহলে বলবো, মৃত্যুর আগমুহূর্তে খারাপ স্মৃতির চাইতে ভালো স্মৃতি মনে করাই উত্তম। কিন্তু ব্যক্তিভেদে স্মৃতিচারণের ধরন আলাদা হয়”, বলেন ড. জেমার।
বর্তমানে লুইসভিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোসার্জন হিসেবে কর্মরত ড. জেমার আরও জানান, মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড আগে ওই বৃদ্ধের হৃদযন্ত্র থেকে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দেওয়া, স্বপ্ন দেখা বা স্মৃতিচারণের সময় আমাদের মস্তিষ্ক যে প্যাটার্নে কাজ করে, ওই মুহূর্তে বৃদ্ধের মস্তিষ্কের তরঙ্গও সেই একই প্যাটার্ন অনুসরণ করেছে। রোগীর হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার পরেও ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত এই অবস্থা চলমান ছিল এবং এক পর্যায়ে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা নতুন আরও একটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তা হলো- মানুষের মৃত্যু আসলে কখন হয়? যখন হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় তখন? নাকি যখন মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়?
তবে ড. জেমার ও তার দল এও জানিয়েছে যে মাত্র একটি গবেষণা থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না। তাছাড়া ওই বৃদ্ধ ছিলেন মৃগীরোগী; তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল যা বিষয়গুলোকে আরও জটিল করে তোলে।
“আমি কখনোই একটা কেস নিয়ে রিপোর্ট করতে পছন্দ করি না”, বলেন ড. জেমার। কারণ ২০১৬ সালে প্রাথমিক রেকর্ডিংটি পাওয়ার পর তিনি এ ধরনের আরও কেস খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি।
তবে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্যবান ইঁদুরদের উপর চালানো একটি গবেষণা হয়তোবা জেমারকে সাহায্য করতে পারে! ওই গবেষণার মধ্য দিয়ে মার্কিন গবেষকেরা দেখিয়েছিলেন যে, ইঁদুরদের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী ৩০ সেকেন্ডে তাদের মস্তিষ্কে উচ্চমাত্রার তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।দুটি গবেষণার মধ্যে এই সাদৃশ্যকে ‘আশ্চর্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন ড. জেমার। গবেষক দলটির প্রত্যাশা, তাদের প্রকাশিত গবেষণার হাত ধরে মানুষের জীবনের অন্তিম মুহূর্ত সম্পর্কে নতুন এক জ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত হবে।
ড. জেমার বলেন, “আমার মনে হয়, মৃত্যু ব্যাপারটাই খুব রহস্যময় এবং আধ্যাত্মিক। আর এরকম চমকপ্রদ কিছু খুঁজে বের করাই বিজ্ঞানীদের জীবনের সফলতা।”
সূত্র: গার্ডিয়ান।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ