Home ইসলাম তরুণদের ধর্মানুরাগে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন

তরুণদের ধর্মানুরাগে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন

।। সাইয়েদ রাবে হাসানি নদভি ।।

এখন থেকে ২০ বছর আগে (১৯৯৯ সালের লেখা) যখন হিজরি ১৫ শতকের সূচনা হয়, তখন বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের ক্রমবর্ধমান হার দেখে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা মন্তব্য করেছিলেন আগামী শতাব্দী হবে ইসলামের। আগামী শতাব্দীতে ইসলামের জাগরণ ঘটবে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, তাদের অবস্থান সুদৃঢ় হবে।

এটাকে ইসলামের এমন উত্থান মনে করা হচ্ছিল, যা পৃথিবীর সব ধর্মহীন সভ্যতা-সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং নাস্তিক্যবাদ ও আত্মপূজার স্রোতকে থামিয়ে দেবে। এতে ধর্মহীনতা ও ভোগবাদের শিকার ইউরোপীয় জাতিগুলো ইসলামের অগ্রযাত্রাকে নিজেদের জন্য হুমকি বিবেচনা করতে লাগল।

ফলে কয়েক বছরের মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও সমাজে ইসলামের ওপর অপবাদ ও অপপ্রাচার আরোপ শুরু হলো। ইসলামের ধারক-বাহক ও তা পরিপালনকারীকে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগল।

ইসলামের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে পৃথিবীর প্রধান প্রধান শক্তিগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মসূচি গ্রহণ করে, বহু সংগঠন ও সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও প্রচারমাধ্যমের সর্বোচ্চ ব্যবহার শুরু হলো। পরিস্থিতি এত খারাপ হলো যে জামাতে নামাজ আদায় ও দাড়ি রাখার মতো সাধারণ দ্বিনদারিকেও সন্দেহের চোখে দেখা হলো। নারীদের মাথা ঢেকে চলাকে অপরাধ ঘোষণা করা হলো। ইসলামী সংস্কৃতি ও জীবনাচার, ইসলামী নিদর্শনগুলো আইন করে নিষিদ্ধ করা হলো। অমুসলিম দেশগুলোর ভেতর ফ্রান্স এবং মুসলিম দেশগুলোর ভেতর তুরস্কে এই চিত্র ছিল সবচেয়ে প্রকট ও ভয়াবহ।

আরও পড়তে পারেন-

ফলে চলতি শতকের প্রথম দুই দশক অতিক্রম করার পর অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আগামী শতাব্দীকে ইসলামের শতাব্দী বলা প্রায় অসম্ভব মনে হচ্ছে। এই শতাব্দীর আগে অমুসলিম দেশেও ইসলামকে লক্ষ্য বানানোর উল্লেখযোগ্য ঘটনা চোখে পড়ে না। কিন্তু এখন অমুসলিম দেশ তো দূরের কথা, বহু মুসলিম দেশেও ইসলামকে প্রকাশ্যে লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে।

এত বিরোধিতা ও শক্তি প্রয়োগের পরও আগামী দিনের জন্য খুশির খবর হলো, আগে ইসলামের প্রতি অনুরাগ শুধু বৃদ্ধ মুসলমানের ভেতর পাওয়া যেত। তরুণরা দ্বিন থেকে দূরে থাকত এবং জীবনের আনন্দ-উল্লাস নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যে ইসলামের প্রতি অনুরাগ বৃদ্ধি পেয়েছে; বরং তারুণ্যের দাবি অনুসারে তাদের ভেতর দ্বিনের জন্য মেধা ও শ্রম ব্যয় এবং আত্মোৎসর্গের স্পৃহা প্রবল। এ জন্য যেখানেই ইসলামকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে সেখানেই মোকাবেলা ও সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও ইসলাম সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে, তবু বলতে হবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কেননা মানুষ আত্মমর্যাদার সঙ্গে, সত্য ও ন্যায়ের সঙ্গে বেঁচে থাকতে চায়। ইসলামের অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করলেও দেখা যাবে তরুণরাই দ্বিনের প্রচার-প্রসার, স্পৃহা-উদ্যম, আত্মত্যাগ ও কোরবানিতে অগ্রগামী ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে ইসলামের অনুসৃত পথ ও পদ্ধতি অন্যসব ধর্ম ও মতাদর্শ থেকে ভিন্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলাম প্রচারকারীদের শিখিয়েছেন যে নিজের কথা জোরপূর্বক নয়, বরং ভালোবাসা ও মমতার সঙ্গে, কল্যাণকামিতা ও সহমর্মিতার সঙ্গে উপস্থাপন করবে। সে তাঁর মেধা, মনন ও ধী-শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে। দ্বিনের পথে সে যদি কারো রূঢ় আচরণের শিকার হয়, তবে সে সংঘাতের পথ পরিহার করে পরকালে তার প্রতিদানের প্রত্যাশা করবে। কঠোরতার সময়ও ন্যায় ও সুবিচার থেকে সরে যাবে না। এ কারণেই ইসলাম ও মুসলমানকে দমিয়ে রাখার শত চেষ্টার পরও পৃথিবীতে ইসলামের জাগরণ অব্যাহত আছে। তার আহ্বান ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ ইসলামকে জানতে চাচ্ছে, দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। সুতরাং বুঝে নিতে হবে, আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য কষ্ট করা এবং কষ্টের পরও সত্যের ওপর ধৈর্যধারণ ও সন্তুষ্টির সঙ্গে থাকা ইসলামের অগ্রযাত্রাকে শক্তিশালী ও বেগবান করে। ইসলাম সর্বযুগেই প্রসারমাণ। ভবিষ্যতেও ইসলামের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। অসম্ভব নয়, এই শতাব্দী হবে ইসলামেরই শতাব্দী। তবে শর্ত হলো তরুণসমাজকে সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালিত করা।

তামিরে হায়াত থেকে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।