Home ইসলাম যেসব ক্ষেত্রে মৌখিক সাক্ষ্যই ঈমান হিসেবে গণ্য

যেসব ক্ষেত্রে মৌখিক সাক্ষ্যই ঈমান হিসেবে গণ্য

।। মুফতি আতাউর রহমান ।।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো ঈমান মৌখিক অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক সাক্ষ্য ও আমলের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। এর মধ্যে অন্তরের বিশ্বাসকেই ঈমানের প্রধান স্তম্ভ বিবেচনা করা হয়। কারো যদি অন্তরে ঈমান থাকে; কিন্তু পারিপার্শ্বিক কারণে মৌখিক সাক্ষ্য ও আমল করতে ব্যর্থ হয়, তবে চূড়ান্ত বিবেচনায় সে মুমিন হিসেবে গণ্য হবে। যদিও বলা হবে তার ঈমান পূর্ণ নয়।

বিপরীতে অন্তরে ঈমান না থাকলে মানুষের মৌখিক স্বীকৃতি ও বাহ্যিক আমল অর্থহীন বিবেচিত হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বেদুঈনরা বলে, আমরা ঈমান আনলাম। বলুন! তোমরা ঈমান আনোনি; বরং তোমরা বলো—আমরা আত্মসমর্পণ করেছি। কেননা ঈমান এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। ’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১৪)

আরও পড়তে পারেন-

কিন্তু পার্থিব আইন-আদালতের ক্ষেত্রে ইসলাম মৌখিক স্বীকৃতিকেই ঈমান হিসেবে গণ্য করেছে। অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে ঈমান মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং মুমিনের আইনি হিসাব ভিন্ন হয়, যেসব পার্থিব বিষয়ে ব্যক্তির মৌখিক স্বীকৃতিই ঈমান হিসেবে গণ্য হবে। যদিও তাঁর অন্তরে বিশ্বাসের দুর্বলতা এবং আমলে কমতি থাকে। যেমন যে ব্যক্তি সমাজজীবনে মুসলিম হিসেবে পরিচিত তার কাফন মুসলমানের মতোই হবে। যদি না সে নিজে কুফরির ঘোষণা দেয়। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি যুদ্ধের ময়দানে ঈমানের ঘোষণা দেয়, তবে মুসলিম বাহিনীর কাছে সে জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা লাভ করবে। উসামা বিন জায়েদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের আল-হুরুকাত (নামক স্থানে) অভিযানে প্রেরণ করলেন।

আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে শত্রুরা পালিয়ে গেল। আমরা তাদের এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলতে যখন ঘেরাও করলাম, তখন সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করল। এ সত্ত্বেও আমরা তাকে আঘাত করে হত্যা করলাম। পরে ঘটনাটি নবী (সা.)-কে জানালাম। তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তোমার বিরুদ্ধে বাদী হলে কে তোমার জন্য সুপারিশ করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, সে তো তরবারির ভয়ে কলেমা পাঠ করেছে। তিনি বললেন, সে তরবারির ভয়েই কলেমা পাঠ করেছে, তা কি তুমি তার অন্তর ফেড়ে দেখেছ? কিয়ামতের দিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-এর সামনে কে তোমাকে নাজাত দেবে? (বর্ণনাকারী বলেন,) তিনি বারবার এ কথা বলতে থাকলেন। এমনকি আমার মনে হচ্ছিল, আমি যদি এ দিনটির আগে মুসলিম না হতাম! (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৬৪৩)

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর নিম্নোক্ত বক্তব্যে আইন ও আদালতের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সময়ে কিছু ব্যক্তিকে ওহির ভিত্তিতে পাকড়াও করা হতো। এখন যেহেতু ওহি বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আমাদের সামনে তোমাদের যে ধরনের ‘আমল প্রকাশ পাবে, সেগুলোর ভিত্তিতেই তোমাদের বিচার করব। কাজেই যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভালো প্রকাশ করবে তাকে আমরা নিরাপত্তা দান করব এবং নিকটে আনব, তার অন্তরের বিষয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই। আল্লাহই তার অন্তরের বিষয়ে হিসাব নেবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের সামনে মন্দ ‘আমল প্রকাশ করবে, তার প্রতি আমরা তাদের নিরাপত্তা প্রদান করব না এবং সত্যবাদী বলে জানব না; যদিও সে বলে যে তার অন্তর ভালো। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৪১)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।