Home ইসলাম ‘ইতিকাফ’ আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের ইবাদত

‘ইতিকাফ’ আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের ইবাদত

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

‘ইতিকাফ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো অবস্থান করা, আবদ্ধ করা বা আবদ্ধ রাখা। ইসলামি পরিভাষায় ইতিকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা। যিনি ইতিকাফ করেন, তাঁকে ‘মুতাকিফ’ বলা হয়।

মাহে রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে অবস্থান করা বা ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। আরবি ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশ দিন অথবা অন্য কোনো দিন জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে বা ঘরে নামাজের স্থানে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন যে, গুনাহ সমূহ হতে বেঁচে থাকা এবং তার জন্য নেক কাজ করা। (মিশকাত, ইবনে মাজাহ)।

হযরত ইরবাজ ইবনে সারীয়া (রাযি.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম হতে তাকে তিন খন্দক দূরে রাখবেন। যার দূরত্ব আসমান হতে যমীনের দূরত্বের চাইতেও বেশী। (তাবরানী, বায়হাকী)।

আরও পড়তে পারেন-

ইতিকাফ করার মূল উদ্দেশ্য হলো, মসজিদে বসে আল্লাহর আনুগত্য করা এবং সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভ, সওয়াব অর্জন ও লাইলাতুল কদর লাভ করার আশা করা। আর এজন্য প্রত্যেক ইতিকাফকারীর আল্লাহর জিকির, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, মোরাকাবা-মোশাহেদা ও অন্যান্য ইবাদতে ব্যস্ত থাকা এবং পার্থিব বিষয়ে কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ্ব ও দুই ওমরার সাওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকী)।

ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতিকাফ করল, আল্লাহ পাক তার ও দোজখের মধ্যখানে এমন তিনটি পরিখা তৈরি করে দেবেন, যার একটি থেকে অপরটির দূরত্ব হবে পূর্ব ও পশ্চিমেরও বেশি।’ (তিরমিযি ও বায়হাকী)।

রমযানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়াহ। বড় শহরবাসী প্রতি মহল্লার একজন এবং ছোট গ্রামের প্রতি বস্তি থেকে একজন করে ইতিকাফ না করলে এলাকার সকল লোক সুন্নাত পরিহারের দায়ে দায়ী হবেন। যদি একজনও ইতিকাফ পালন করে, তবে এলাকার সকলের পক্ষ হতে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। কাউকে বিনিময় দিয়ে ইতিকাফে বসালে গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।

নানা সঙ্কট ও ব্যস্ততাকে পেছনে ঠেলে দিয়ে যেসকল আল্লাহর বান্দা দুনিয়াবী সকল কাজ-কর্ম ও ব্যস্ততা-পেরেশানীকে পেছনে ঠেলে দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের মহান উদ্দেশ্যে আজকে ইফতারের আগে আগে ইতেকাফের নিয়্যাতে মসজিদে বা নিজেদের বাসাবাড়ির নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, দোয়া করি পরম করুণাময় আল্লাহ যেন তাঁদেরকে সহীহ সালামতে রাখেন। রমযানের শেষ মাগফিরাতের দশ দিন ইতিকাফস্থলে তাদেরকে ইবাদত-বন্দেগীতে কাটানোর তাওফীক দান করেন। তারা যেন পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরের বরকত লাভ করতে পারেন এবং ইতিফাকের পূর্ণ ফযীলত লাভ করেন এবং সকল ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাজতে থাকেন। আমীন।

– আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসীর ও সহকারী পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।