Home লাইফ স্টাইল চামচের পরিবর্তে হাত দিয়ে খাওয়ার স্বাস্থ্যকর ৫ উপকারিতা

চামচের পরিবর্তে হাত দিয়ে খাওয়ার স্বাস্থ্যকর ৫ উপকারিতা

অনেকেই চামচ দিয়ে খাওয়াকে স্মার্টনেসের অংশ মনে করেন। একটা দলে যে চামচ দিয়ে খায়, সে অন্যদের তুলনায় বেশি সমাদর পায়, এমনও হয়। চামচ দিয়ে খাওয়াতে বিশেষ অসুবিধা নেই। তবে আপনি যদি জানতে চান, চামচ দিয়ে খাওয়া আর হাত দিয়ে খাওয়ার ভেতর কোনটি বেশি উপকারী? স্কুপহুপ ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন বলছে, অবশ্যই হাত দিয়ে খাওয়া। ‘ইটিং উইথ স্পুন অর হ্যান্ড’ নামের সেই প্রতিবেদন অনুসারে জেনে নেওয়া যাক কেন হাত দিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

১. হাতের পাঁচ আঙুলের সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগ

আমাদের শরীরের একেকটা অঙ্গের একেকটা কাজ। হাতের কাজগুলোর ভেতর অন্যতম হলো খাওয়া। ভারতবর্ষের প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে, হাতের পাঁচটি আঙুলের সঙ্গে প্রকৃতির পাঁচটি উপাদানের সম্পর্ক রয়েছে। স্থানের সঙ্গে বৃদ্ধাঙ্গুলি, বাতাসের সঙ্গে তর্জনী, আগুনের সঙ্গে মধ্যমা, পানির সঙ্গে অনামিকা ও কনিষ্ঠা মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পাঁচ আঙুলের সাহায্যে যখন খাবার খাওয়া হয়, তখন এই পাঁচ আঙুল সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক উপাদানগুলো উদ্দীপিত হয়। আর তখন আপনি খাবার থেকে পর্যাপ্ত শক্তি পান। কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত না হলেও প্রাচীনকাল থেকে এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী প্রজন্মের পর প্রজন্ম আয়ুর্বেদ–ভক্তরা। বিষয়টি আপনি বিশ্বাসও করতে পারেন, অবিশ্বাসও করতে পারেন, আবার বিশ্বাস–অবিশ্বাসের মাঝামাঝি মিথ বলেও চালিয়ে নিতে পারেন।

আরও পড়তে পারেন-

২. রক্ত চলাচল বৃদ্ধি

ওপরের অংশটি সরাসরি বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত না হলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে হাত দিয়ে খাবার মাখার সময়ে আঙুলের ব্যবহার হয়। আর সেই সময় হাতের পাশাপাশি সারা শরীরের রক্ত চলাচলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া আমরা যখন হাত দিয়ে খাবার খাই, তখন একাধিক পেশির সঞ্চালন হয়। ফলে হাতের পাশাপাশি সারা শরীরে রক্তের সরবরাহ বেড়ে যায়। এভাবে হাত দিয়ে মেখে খাবার খেলে অজান্তেই হয়ে যায় শরীরচর্চার কাজ। আমাদের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্তও পৌঁছে যায়। ফলে শরীরের প্রতিটি অংশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।

৩. পরিমাণে কম খাওয়া হয়

চামচে করে খাওয়ার চেয়ে হাত দিয়ে মেখে খাবার খেতে বেশি সময় লাগে। তাই হাতে খাবার খেলে চামচের তুলনায় কম খাওয়া হয়। কেননা, আমাদের মস্তিষ্ক ১৪ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি চিবুতে পারে না। আমরা যতই ক্ষুধার্ত থাকি না কেন, খাবারের মেনুতে যা কিছুই থাকুক না কেন, পরিমাণ যেটাই হোক না কেন—কোনো খাবারই ১৪–১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে আমরা চিবুতে পারব না। ১৪ মিনিট ধরে চিবুতে থাকলে আমাদের মগজ শরীরকে সংকেত পাঠাবে যে খাবার খাওয়া হয়ে গেছে, পাকস্থলী পরিতৃপ্ত, এবার থামো। তাই হাত দিয়ে খেলে যেহেতু বেশি সময় লাগে, তাই ১৫ মিনিটে অল্প খেলেও পেট ভরে যায়। কম খাওয়ায় ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে।

৪. হজমের সুবিধা

প্রথমত, হাত দিয়ে খেলে খাবার চিবানোর জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়। তাতে খাবার বেশি মাত্রায় হজম হয়। আর খাবার ঠিকমতো হজম হলে শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান পেয়ে যায়। তা ছাড়া হাতে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে, সেগুলো খাবার হজমের জন্য সহায়ক। চামচ দিয়ে খেলে এই সুবিধা পাওয়া যায় না। হাত দিয়ে খাওয়ার সময় হাতের ছোঁয়া জিবে লাগায় স্বাদকোরক বেশি উদ্দীপ্ত হয়, ফলে খাবার সুস্বাদু লাগে ও মানসিক তৃপ্তি ঘটে। এ ছাড়া চামচ দিয়ে খেলে ধাতুর স্পর্শ পাওয়ায় খাবারের স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করা যায় না। এ ছাড়া রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনও কম ক্ষরিত হয়।

৫. ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমে

‘ক্লিনিক্যাল নিউট্রশন’ প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান বলছে, যাঁরা হাত দিয়ে খাবার খান, তাঁদের মধ্যে টাইপ–২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা তুলনায় কম। চামচ দিয়ে খেলে খাওয়া সহজ ও দ্রুত হয়। কিন্তু এর ফলে রক্তের চিনির মাত্রা বৃদ্ধি পায় বলে টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। ২০১২ সালে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব এন্ডোক্রাইনোলজিতে প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে যাঁরা দ্রুত খান, তাঁদের টাইপ–২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি, যাঁরা আস্তে খান তাঁদের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। তাই বলা যায় যে দ্রুত খাওয়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। হাতে খেলে সময় লাগে। অল্প খাবার মুখে নেওয়া হয়। ধীরে খাওয়া হজমের উন্নতিতে সাহায্য করে। আর আপনাকে পেট ভরার অনুভূতি দেয়, ফলে কম খাবার খাওয়া হয়।

উম্মাহ২৪ডটকম:এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।