Home লাইফ স্টাইল বসকে কিভাবে জানাবেন আপনার কাজের চাপ অনেক বেশি?

বসকে কিভাবে জানাবেন আপনার কাজের চাপ অনেক বেশি?

আজকাল প্রতিটি মানুষই যেন কাজের চাপে পিষ্ট। সবাই কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছে, ইমেজ রক্ষা করতে গিয়ে অতিরিক্ত কাজ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিচ্ছে। আর এতে ব্যক্তিজীবনে চলে এসেছে অবসাদ, হতাশা; মেজাজ হয়ে উঠছে খিটখিটে। বাড়তি কাজের চাপে ‘ব্যক্তিগত জীবন’ এর আনন্দ বলেই যে কিছু থাকছে না অনেকের!

কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কোনো কাজ দিলে মুখ ফুটে তাকে ‘না’ বলার মতো অবস্থায়ও থাকেন না অনেক মানুষ। কেউই চায় না কর্মস্থলে নিজেকে অলস বা কাজের প্রতি অমনোযোগী হিসেবে দেখাতে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমী কর্মী হিসেবে নিজের ইমেজ বাঁচিয়েই কিভাবে বসকে জানাবেন যে আপনার কাজের চাপ অনেক বেশি হয়ে গেছে?

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

আপনার কাজের চাপ যত বেশিই হোক না কেন, বসকে এ বিষয়ে জানানো বেশ কঠিন কাজ মনে হতে পারে। এর পেছনে কারণগুলো হলো- প্রথমত, চাকরি হারানোর ভয়। আপনার মনে হতে পারে যে বেফাঁস কোনো কথা বলার ফলে আপনি মূল্যবান চাকরিটি হারাবেন। অথচ মনে মনে আপনি জানেন যে এত কাজ আপনার পক্ষে সেরে ওঠা সম্ভব হবে না!

দ্বিতীয়ত, মানুষের সহজাত চিন্তা। আপনার মনে হতে পারে, আপনিই হয়তো যথেষ্ট পরিশ্রম করছেন না। আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো এই কাজটা পারতো। তাই দিনশেষে বসকে কিছুই বলতে পারেন না একজন সাধারণ কর্মী। নীরবে তাকে অতিরিক্ত কাজের চাপের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।

কিন্তু এই নীরবতা আসলে আপনার ক্যারিয়ারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আপনি বসকে অখুশি করতে চান না বা নিজে চাপ নিয়ে হলেও তার সামনে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চান। কিন্তু তাড়াহুড়োয় অনেক কাজ শেষ করতে গিয়ে যদি সেই কাজ শতভাগ ভালো না হয়, তাহলে বসের মনে এই ধারণা জন্মাতেই পারে যে- আপনি আসলে যোগ্য নন! এজন্যে কাজের চাপ যখন আপনার ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে, তখন দ্রুত তা বসকে জানিয়ে দেওয়াই উচিত। কিভাবে এই কাজটি করা যাবে তারই কিছু উপায় থাকছে এখানে।

এই নীরবতা আসলে আপনার ক্যারিয়ারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আপনি বসকে অখুশি করতে চান না বা নিজে চাপ নিয়ে হলেও তার সামনে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চান। কিন্তু তাড়াহুড়োয় অনেক কাজ শেষ করতে গিয়ে যদি সেই কাজ শতভাগ ভালো না হয়, তাহলে বসের মনে এই ধারণা জন্মাতেই পারে যে- আপনি আসলে যোগ্য নন!

‘না’ মানেই নেতিবাচক নয়!

অতিরিক্ত কাজ নিজের উপরে নিয়ে নেওয়া মানেই এমন না যে আপনি গড়পড়তা নিম্নশ্রেণীর কর্মী। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান চায় কর্মীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে। তাই কাজ যদি বেশি হয় তাহলে তা সম্পাদন করার জন্য সময়ও অবশ্যই আছে।

আপনি যদি একজন নিয়মিত, ভালো পারফরম্যান্স দেখানো কর্মী হন এবং কালেভদ্রে কাজের চাপকে ‘না’ বলেন, অর্থাৎ অতিরিক্ত কাজের অনুরোধ প্রত্যাখান করেন, এতে আপনার সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে না এবং আপনাকে অলস হিসেবেও ধরা হবে না। বরং মাঝেমধ্যে ‘না’ বলতে পারলে নিজের নির্ভরযোগ্যতা বাড়বে। আপনার বসও চান, আপনি যাতে নিজের সম্পর্কে খোলামেলা থাকেন।

কাউন্সেলিং ও সহায়তা চান

আপনি যদি অনেক বেশি ব্যস্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাজের বিষয়ে বাইরের কারো দৃষ্টিভঙ্গি জানা ও পরামর্শ নিতে পারেন। বিশ্বস্ত কোনো বন্ধু বা সহকর্মীর সাথে আপনার কাজের ব্যাপারে আলোচনা করুন এবং পক্ষপাতহীন মতামত দিতে বলুন।

এমনকি আপনি চাইলে নিজের বসের সাথেও আলোচনা করতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে একটু কৌশলী হতে হবে। যেমন- আপনি বলতে পারেন: ‘এই অর্থনৈতিক প্রতিবেদনটি শেষ করতে আমার ৫ ঘণ্টা লাগবে। আপনি কি এরকম সময়েই কাজটি পাওয়ার আশা করছেন?’ অথবা ‘এ বিষয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?’

যেহেতু আপনার বস এ ধরনের কাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞ, সুতরাং তারও ধারণা থাকার কথা যে এতে কতটা সময় লাগতে পারে।

সমাধান দিন নিজেই

বসের সাথে নিজের কাজের চাপ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বেশ সাবধানী এবং ভালো মনমানসিকতা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যে এটা আপনি কোম্পানির ভালোর জন্যই করছেন।

এক্ষেত্রে বসের সাথে খোলামেলা-হালকা ধাঁচে আলাপ হতে পারে। শুরু করুন কোম্পানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দিয়ে। তারপর তাকে জানান যে সেই লক্ষ্য পূরণে কি কি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন আপনি। যতটা সম্ভব মূল পয়েন্টে থেকে কথা বলুন।

আপনি কাজের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে গেলেও পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে গেলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই হবে। কর্মক্ষেত্রে যেখানে পারবেন, সাধ্যমতো সাহায্য করুন। কিন্তু বসকে এমন বার্তা দিন যে, ‘অন্য একটা কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে পরবর্তী প্রজেক্টটা শেষ করা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু অন্য কেউ যদি কাজটা শুরু করে তাহলে আপনি তাকে সাধ্যমতো নির্দেশনা দিতে পারবেন।’

এরপর কাজটি কিভাবে আরো অল্প সময়ে করা যায়, তার জন্য কিছু সুপারিশ করতে চান বলে আগ্রহ প্রকাশ করুন। কিন্তু কাজটি সম্পন্ন করতে যে সত্যিই সময় লাগবে তা কোনোভাবেই লুকাবেন না। আপনার উদ্দেশ্য হলো তাকে আভাস দেওয়া যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের বাইরেও বেশি সময় লাগতে পারে।

কাজের গুরুত্ব নির্ণয় করুন

প্রায়ই বসেরা এমন সব কাজ চাপিয়ে দেন যেগুলো শেষ করতে কত সময় লাগবে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকে না। আপনি যখন আগের কাজের চাপেই পিষ্ট, তখন নতুন কোনো প্রজেক্ট আপনার উপর চাপানোর আগেই তাতে বাধা দিন।

তখন প্রশ্ন করুন, কোন প্রজেক্টটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? আর বাকিগুলোকে বস কতটা গুরুত্ব দিতে চান? এই প্রশ্নের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার বস কোন কাজটি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন

আপনি কাজের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে গেলেও পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে গেলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই হবে। কর্মক্ষেত্রে যেখানে পারবেন, সাধ্যমতো সাহায্য করুন। কিন্তু বসকে এমন বার্তা দিন যে, ‘অন্য একটা কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে পরবর্তী প্রজেক্টটা শেষ করা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু অন্য কেউ যদি কাজটা শুরু করে তাহলে আপনি তাকে সাধ্যমতো নির্দেশনা দিতে পারবেন।’

এর মাধ্যমে ফুটে উঠে যে আপনি সত্যি একজন দায়িত্বশীল কর্মী এবং সত্যিই যথাসাধ্য এগিয়ে নিতে চান প্রতিষ্ঠানকে।

আপনার বস যদি বারবার একই রকম অসংবেদনশীল আচরণ করতে থাকেন এবং আপনাকে সাহায্য করতে না চান, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনি এই প্রতিষ্ঠানে বেশিদিন টিকতে পারবেন না এবং আপনার এই চাকরি ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে।

সৎ থাকুন

প্রত্যেকের জীবনেই এমন কোনো ঘটনা ঘটে বা এমন সময় পার করতে হয়- যখন চাকরির এই বাধ্যবাধকতায় কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আপনি যদি এমন কোনো খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যান, তাহলে অতিরিক্ত কাজের চাপ আপনাকে আরো হতাশার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই বসকে এ বিষয়ে খুলে বলাই ভালো।

এক্ষেত্রে অবশ্যই সোজাসাপ্টা কথা বলতে হবে, কিন্তু বিনয়ী ভাব বজায় রাখাও অত্যাবশ্যক। আপনাকে বোঝাতে হবে যে সময়টা খারাপ যাচ্ছে বলেই আপনি এই প্রজেক্টটি শেষ করতে পারছেন না। আর এমন পরিস্থিতি জীবনে সবসময় আসে না, তাই এ সময়ে আপনার সাহায্য প্রয়োজন।

সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন

বসকে কাজের চাপের কথা জানানোর পর আশানুরূপ ফলাফল সবসময় নাও মিলতে পারে। বস যখন তার সিদ্ধান্ত বদলাতে রাজি না হন, তখন সহকর্মীরাই আপনার শক্তি হয়ে উঠতে পারে।

সহকর্মীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে তারা আপনার কাজের ভার হালকা করে তুলতে পারে।

কিন্তু আপনার বস যদি বারবার একই রকম অসংবেদনশীল আচরণ করতে থাকেন এবং আপনাকে সাহায্য করতে না চান, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনি এই প্রতিষ্ঠানে বেশিদিন টিকতে পারবেন না এবং আপনার এই চাকরি ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে।

  • হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ থেকে অনূদিত

সূত্র- টিবিএস।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।