Home লাইফ স্টাইল মধ্যরাতের পর মনকে জাগিয়ে রাখা উচিত নয়, বিজ্ঞানীদের সতর্কতা

মধ্যরাতের পর মনকে জাগিয়ে রাখা উচিত নয়, বিজ্ঞানীদের সতর্কতা

রাত যত গভীর হয়, সকাল তত নিকটে আসে। এই প্রবাদ বাক্য কে না শুনেছে। তবে রাত গভীর হলে মানুষের মনের ভেতর অনেক নেতিবাচক চিন্তাও উঁকি মারে। তাই এ সময় জেগে থাকলে এসব চিন্তা থেকে মানুষের ‘গিল্টি প্লেজারেরও’ জন্ম হয়।

রাতের বেলা ঘুমানোই নিয়ম। রাতের বেলায় জেগে থাকলে মানুষের মন ভিন্নভাবে কাজ করে- এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে। গভীর রাত পার হয়ে গেলে ইতিবাচক চিন্তার বদলে মনজুড়ে বসে রাজ্যের নেতিবাচক চিন্তা। তখন কোনো নিষেধও মানতে চায় না মন।

গবেষকেরা মনে করছেন, দিন-রাতের সাপেক্ষে মনের এই কার্যপ্রণালী পরিবর্তনের সঙ্গে মানবদেহের সার্কাদিয়ান রিদমের (জৈবঘড়ি) শক্তিশালী যোগ রয়েছে। রাতের বেলা মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে এ নিয়ে সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স জার্নালে নতুন একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকেরা তাদের এ অনুমানের (হাইপোথিসিস) নাম দিয়েছেন ‘মাইন্ড আফটার মিডনাইট’। এ হাইপোথিসিস অনুযায়ী, মানুষের দেহ ও মন একটি প্রাকৃতিক ২৪-ঘণ্টা ঘড়ির সাইকেল মেনে চলে। আর এটি আমাদের আবেগ ও আচরণকে প্রভাবিত করে।

সোজা কথায়, দিন ও রাতের বেলা মানুষের অনুভূতি এবং কাজের ধরনে পার্থক্য তৈরি হয়। বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায়। কারণ মানুষ দিনের বেলাতেই শিকার করত ও রাতে ঘুমাত।

তবে রাতের বেলা ঘুমালেও শিকারি হোমো স্যাপিয়েন্সের নিজেই শিকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। গবেষকদের মতে, এই ঝুঁকির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্যই রাতের বেলা মানুষের মনে নেতিবাচক উদ্দীপকের (স্টিমুলি) প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়।

কোনো একসময় এ ধরনের উদ্দীপনাই মানুষকে প্রাগৈতিহাসিক শিকারির হাত থেকে বাঁচাত। তবে নেতিবাচক চিন্তার প্রতি এরকম মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগের কারণে ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণপ্রবণও হয়ে উঠতে পারেন।

আরও পড়তে পারেন-

আর এর সঙ্গে বর্তমানে কম ঘুমানোর দিকটি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট এলিজাবেথ ক্লেরম্যান বলেন, ‘রাতের বেলা অসংখ্য মানুষ জেগে থাকেন। তাদের মস্তিষ্ক দিনের বেলা যে পরিমাণ ভালোভাবে কাজ করে, রাতে সেভাবে না করার বিষয়ে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।’

বর্তমান গবেষণায় গবেষকেরা দুইটি উদাহরণ ব্যবহার করেছেন। প্রথমটি হলো, মাদক ব্যবহারকারীরা দিনের বেলা কোনোভাবে তাদের নেশাকে দমিয়ে রাখতে পারেন, কিন্তু রাত হলেই তারা নেশা করতে শুরু করেন।

অন্য উদাহরণটি হলো, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যারা অনিদ্রায় (ইনসমনিয়া) ভোগেন, তাদের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের হলে তারা একটা সময় পর থেকে হতাশা, একাকিত্ব, ও অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করেন।

দুটো ক্ষেত্রেই পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। রাতের বেলায় আত্মহত্যা ও নিজের ক্ষতিসাধন করার ব্যাপারটি অনেক সাধারণ। ২০২০ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে, রাতের বেলা জেগে থাকাটা আত্মহত্যার জন্য একটি ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’। এছাড়া রাতেই মানুষ অবৈধ ও ক্ষতিকর মাদকগুলো ব্যবহার করে।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ঘুম কম হওয়া ও সার্কাদিয়ান রিদমে ব্যত্যয় কীভাবে ব্যক্তির ‘রিওয়ার্ড প্রসেসিং’-এ প্রভাব ফেলে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত গবেষণা হয়নি। সেজন্য পাইলট, ডাক্তারের মতো শিফট ধরে কাজ করা মানুষগুলো তাদের অস্বাভাবিক ঘুমের রুটিনের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাওয়ায় তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।