Home লাইফ স্টাইল হিংসামুক্ত হৃদয়: জান্নাতি জীবনের চাবিকাঠি

হিংসামুক্ত হৃদয়: জান্নাতি জীবনের চাবিকাঠি

মানুষের জীবনে আত্মিক শান্তি এবং সামাজিক সম্প্রীতি অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এমন কিছু মানসিক ব্যাধি আছে, যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়কেই ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেয়। হিংসা ও বিদ্বেষ তেমনই দুটি মরণব্যাধি, যা শুধু ব্যক্তিকেই নয়, একটি সুস্থ সমাজকেও কলুষিত করে তোলে। ইসলামে এই দু’টি ক্ষতিকর স্বভাবকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে এবং এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। বক্ষমান প্রবন্ধে কুরআন ও হাদিসের আলোকে হিংসা ও বিদ্বেষের কুফল; এর থেকে বাঁচার উপায় এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

।। মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ।।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ করো না, হিংসা করো না, ষড়যন্ত্র করো না ও সম্পর্ক ছিন্ন করো না। তোমরা পরস্পরে আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও”। (বুখারী- ৬০৭৬, মুসলিম- ২৫৫৯)।

এই হাদিসে মানবতাকে ধ্বংসকারী কিছু মারাত্মক ব্যাধির কথা বলা হয়েছে, যা একটি ইসলামী সমাজকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়। এর মূল উৎস হলো ‘হিংসা’। এই বিষবৃক্ষ থেকেই বাকি ক্ষতিকর বৈশিষ্ট্যগুলো বেরিয়ে আসে।

হিংসা অর্থ হলো- ‘আল্লাহ অন্যকে যে নেয়ামত দান করেছেন তাকে হিংসা করা এবং উক্ত নেয়ামতের ধ্বংস কামনা করা’। আর হিংসুক হলো, ‘হিংসাকৃত ব্যক্তির নেয়ামত ধ্বংসের আকাক্সক্ষী’। হিংসার পিছে পিছে আসে বিদ্বেষ। হিংসুক তখন সর্বদা ঐ ব্যক্তির মন্দ কামনা করে। যেমন মুমিনদের বিরুদ্ধে মুনাফিকদের আচরণ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে, তাতে তারা অসন্তুষ্ট হয়। আর যদি তোমাদের কোনো অকল্যাণ হয়, তাতে তারা আনন্দিত হয়”। (আলে ইমরান- ৩/১২০)।

প্রকৃতপক্ষে, এই দুটি বদস্বভাবের মধ্যে ঈমানের কোনো অংশ নেই। কারণ মুমিন সর্বদা অন্যের শুভ কামনা করে, যেমন সে নিজের শুভ কামনা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- “তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেই বস্তু ভালোবাসবে, যা সে নিজের জন্য ভালোবাসে”। (মিশকাত- ৪৯৬১)।

যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তার ঈমান ত্রুটিপূর্ণ হয়। হিংসা তার সমস্ত নেকিকে গ্রাস করে ফেলে, যেমন আগুন কাঠকে পুড়িয়ে ফেলে। এভাবে সে নিজের আগুনে নিজে জ্বলে মরে। পরিণামে তার পূর্বে করা সৎকর্মের নেকিগুলোও নিঃশেষ হয়ে যায়। এই অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে নিঃস্ব অবস্থায় আল্লাহর কাছে চলে যায়।

সাদা মনের গুরুত্ব ও ঈমানের মানদণ্ড

একজন মুসলিমের কর্তব্য হলো সর্বদা সাদা মনের অধিকারী হওয়া। তার অন্তরে যেন কারো প্রতি হিংসার কালিমা না থাকে। যদি কোনো কারণবশত তা কখনো এসেই যায়, তবে বুদবুদের মতো যেন তা উবে যায়, কচুপাতার পানির মতো যেন তা ঝরে যায়। হৃদয় যেন সকলের প্রতি উদার থাকে এবং শত্রু-মিত্র সকলের জন্য হেদায়াতের আকাক্সক্ষী থাকে।

ভালোবাসা ও বিদ্বেষের মানদণ্ড হবে কেবল ঈমান। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ- এটিই হলো আসল মানদণ্ড। কোনো মুমিন কোনো কাফিরকে কখনোই উদারভাবে ভালোবাসতে পারে না। কারণ, কাফিরের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। এক্ষেত্রে কাফিরকে তার কুফর থেকে ঈমানের দিকে ফেরানোর সাধ্যমতো চেষ্টা করাই হবে তার প্রতি ভালোবাসার সঠিক নমুনা। কেননা, মুমিন ও কাফির উভয়ে একই পিতা আদমের সন্তান। আদম (আ.) মুসলিম ছিলেন। তাই উভয়ে বংশসূত্রে মুসলিম। যদি কেউ না বুঝে অথবা বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে কাফির-মুশরিক হয়ে থাকে, তবে তাকে বুঝিয়ে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।

তাই কাফির-মুশরিক, মুনাফিক ও ফাসিকদের প্রতি বিদ্বেষের অর্থ হলো, তাদের অবিশ্বাস ও অপকর্মকে ঘৃণা করা এবং নিজেকে তা থেকে বাঁচিয়ে রাখা। তবে সকল আদম সন্তানের হিদায়াতের জন্য নিজের হৃদয়কে সদা উন্মুক্ত ও বিদ্বেষ মুক্ত রাখাটাই হলো প্রকৃত মুমিনের নিদর্শন।

হিংসা ও বিদ্বেষ হলো অন্তরের বিষয়, কিন্তু তার বিষফল হিসেবে ষড়ষন্ত্র-চক্রান্ত ও সম্পর্কচ্ছেদ ইত্যাদি হলো কর্মের বিষয়। তাই অন্তর বিদ্বেষমুক্ত না হলে কর্ম অন্যায়মুক্ত হয় না। যদি কোনো মুমিন পাপকর্ম করে, তাহলে তার পাপকে ঘৃণা করবে, কিন্তু ঈমানের কারণে তাকে ভালোবাসবে। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই মুমিনগণ সকলে ভাই ভাই” (হুজুরাত ৪৯/১০)।

প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন হলো ফাসেক-মুনাফিকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং সত্যের পক্ষে সমর্থন ও মিথ্যার বিপক্ষে ক্রোধ প্রকাশ করা। যেমন, হযরত আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “যে আল্লাহর জন্য অপরকে ভালোবাসে ও আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ করে, আল্লাহর জন্য দান করে ও আল্লাহর জন্য বিরত থাকে, সে তার ঈমানকে পূর্ণ করল”। (আবুদাঊদ- ৪৬৮১, তিরমিযী- ২৫২১, মিশকাত- ৩০)।

আরও পড়তে পারেন-

রাসূলুল্লাহ (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো, শ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, “প্রত্যেক শুদ্ধহৃদয় ও সত্যভাষী ব্যক্তি।” লোকেরা বলল, সত্যভাষীকে আমরা চিনতে পারি। কিন্তু শুদ্ধহৃদয় ব্যক্তিকে আমরা কীভাবে চিনব? জবাবে তিনি বললেন, “সে হবে আল্লাহভীরু ও পরিচ্ছন্ন হৃদয়; যাতে কোনো পাপ নেই, সত্যবিমুখতা নেই, বিদ্বেষ নেই, হিংসা নেই”। (ইবনু মাজাহ- ৪২১৬)।

হিংসুক থেকে বাঁচার পথ

হিংসুকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়-

১. ক্ষমতা থাকলে প্রতিরোধ: যেমন রাসূল (সা.) মদীনার ইহুদী গোত্রগুলোর বিরুদ্ধে করেছিলেন।

২. সত্য প্রকাশ ও আল্লাহর উপর ন্যস্ত করা: সত্যকে স্পষ্ট করে প্রকাশ করা এবং হিংসুক ব্যক্তি বা দলকে এড়িয়ে চলা উচিত। তাদের শাস্তির বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করা উত্তম। যেমন আল্লাহ হিংসুক ইহুদী সম্পর্কে বলেন- “তোমরা তাদের ক্ষমা করো ও উপেক্ষা করে চলো যতক্ষণ না আল্লাহ স্বীয় আদেশ নিয়ে আগমন করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান”। (বাকারাহ- ১০৯)।

মানুষ অনেক সময় ভালো জিনিসের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। যেমন, নবী-রাসূলগণ, কুরআন ও হাদিস, ইসলাম, সমাজের সত্যসেবী দ্বীনদারগণ এবং বিশেষ করে সমাজ সংস্কারক মুত্তাক্বী আলেমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা পাপী মানুষের স্বভাবগত বিষয়। এর কিছু ঐতিহাসিক উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো-

ইবলীসের হিংসা: সৃষ্টির সূচনায় প্রথম পাপ ছিল আদম (আ.)এর প্রতি ইবলীসের হিংসার পাপ। আদমের উচ্চ সম্মান দেখে সে হিংসায় জ্বলে উঠেছিল এবং সিজদা করতে অস্বীকার করে।

কাবিলের হিংসা: আদম-পুত্র কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে হিংসাবশে। কারণ, হাবিলের কুরবানী কবুল হয়েছিল।

ইহুদিদের হিংসা: ইহুদিরা মুসলমানদের হিংসা করে তাদের নিকট শেষনবী (সা.)এর আগমনের কারণে, কারণ তারা ভেবেছিল শেষনবীর আগমন তাদের মধ্য থেকে হবে।

আবু জাহলের হিংসা: আবু জাহল শেষনবী মুহাম্মাদ (সা.)কে সত্য বলে স্বীকার করেও মেনে নেয়নি। কারণ তাঁর জন্ম বনু হাশেম গোত্রে হয়েছিল।

এভাবে ভালোর প্রতি হিংসার ইতিহাস চিরন্তন। ঐসব হিংসুকরা নিজেদের হিংসা গোপন করার জন্য ভালোর বিরুদ্ধে নানাবিধ মিথ্যা রটনা করে, কষ্ট দেয়, এমনকি দেশ ত্যাগে বাধ্য করে ও হত্যার চেষ্টা করে। সেকারণে হিংসুকদের অনিষ্টকারিতা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা করতে বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্ট হতে যখন সে হিংসা করে” (সূরা ফালাক- ৫)।

যে সমাজে হিংসার প্রসার যত বেশি, সে সমাজে অশান্তি তত বেশি। যামরাহ বিন ছা’লাবাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, “মানুষ ততক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা পরস্পরে হিংসা না করবে”। (তাবারানী, হাদিস- ৮১৫৭, সহীহাহ, হাদিস- ৩৩৮৬)।

হিংসার ভয়াবহ পরিণতি

হিংসুক ব্যক্তি অন্যকে ক্ষতি করার আগে সে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কেননা শুরুতেই সে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। হিংসা দূর না হওয়া পর্যন্ত এটাই তার জন্য স্থায়ী দুনিয়াবী শাস্তি। তার চেহারা সর্বদা মলিন থাকে। অন্যের ক্ষতি করার চক্রান্তে ও ষড়ষন্ত্রে সে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। তার অন্তর সদা সংকুচিত থাকে। তারই মতো শঠেরা তার বন্ধু হয়। ঘুণ পোকা যেমন কাঁচা বাঁশকে ভেতর থেকে কুরে কুরে খায়, হিংসুক ব্যক্তির অন্তর তেমনি হিংসার আগুন কুরে কুরে খায়। একসময় সে ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে দুনিয়ায় সে হিংসার আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরে। আর মৃত্যুর পরে তাকে গ্রাস করে জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন। আল্লাহ বলেন- “অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে ধূলি ধূসরিত”, “কালিমালিপ্ত”, “তারা হলো অবিশ্বাসী পাপিষ্ঠ”। (সূরা আবাসা- ৪০-৪২)।

হযরত যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- “তোমাদের মধ্যে পিপীলিকার ন্যায় প্রবেশ করবে বিগত উম্মতগণের রোগ। আর তা হলো হিংসা ও বিদ্বেষ, যা হলো সাফকারী। আমি বলি না যে চুল সাফ করবে, বরং তা দ্বীনকে সাফ করে ফেলবে”। অর্থাৎ- হিংসা ও বিদ্বেষ দ্বীনকে বিদূরিত করে দেয়। (তিরমিযী; মিশকাত- ৫০৩৯)।

ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানদের উন্নতি ও বিশ্ব বিজয়ের মূলে কারণ ছিল তাদের পারস্পরিক মহব্বত-ভালোবাসা ও বিদ্বেষমুক্ত হৃদয়ের সুদৃঢ় বন্ধন। তারা অন্যের দুঃখ-বেদনাকে নিজের সাথে ভাগ করে নিতেন। হযরত আনাস ইবনু মালেক (রাযি.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এক জান্নাতী ব্যক্তির কথা উল্লেখ আছে, যিনি তার অন্তরে কোনো মুসলিমের প্রতি বিদ্বেষ রাখতেন না এবং কারো প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণের উপর হিংসা পোষণ করতেন না।

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযি.) বলেন, “এটিই আপনাকে উক্ত স্তরে পৌঁছেছে। এটি এমন এক বস্তু যা আমরা করতে সক্ষম নই”। (হাকেম- ৩/৭৯, আহমাদ- ১২৭২০, আরনাঊত্ব সহীহ বলেছেন; আলবানী প্রথমে সহীহ পরে যঈফ বলেছেন, হাকেম সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন)।

হৃদয়কে হিংসামুক্ত রাখার উপায়

১. শয়তানের প্রতি ঘৃণা ও আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ: হিংসা হলো, শয়তানি আমল। শয়তান সর্বদা মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। তাই তার হাত থেকে বাঁচার জন্য শয়তানের প্রতি তীব্র ঘৃণা থাকা এবং আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করে সর্বদা সূরা ফালাক ও নাস পড়া উচিত।

২. দোয়া পাঠ: আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীকে শিখিয়ে দিয়েছেন, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের সেইসব ভাইকে তুমি ক্ষমা করো, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর তুমি আমাদের অন্তরে মুমিনদের বিরুদ্ধে কোনো রূপ বিদ্বেষ সঞ্চার করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই তুমি স্নেহশীল ও দয়াবান”। (সূরা হাশর- ১০)।

এটা কেবল তখনই সম্ভব, যখন হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত মনে আমরা পরস্পরকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারব এবং এর বিনিময়ে স্রেফ আল্লাহর নিকটে পারিতোষিক কামনা করব।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।