Home ইসলাম যেসব জায়গায় তাড়াহুড়া নিষিদ্ধ

যেসব জায়গায় তাড়াহুড়া নিষিদ্ধ

।। জাওয়াদ তাহের ।।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে ত্বরাপ্রবণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের স্বভাবের মধ্যেই আল্লাহ তাআলা এই গুণাগুণ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ত্বরাপ্রবণ করে। আমি অচিরেই তোমাদের আমার নিদর্শনাবলি দেখাব।

সুতরাং তোমরা আমার কাছে ত্বরা চেয়ো না। ’ (সুরা : আল-আম্বিয়া, আয়াত : ৩৭)। এখানে কোনো কাজে তড়িঘড়ি করার নিন্দা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের অন্যত্রও একে মানুষের দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মানুষ অতিব তাড়াহুড়াপ্রবণ। ’ (সুরা : ইসরা, আয়াত : ১১)

আলোচ্য আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, মানুষের মজ্জায় যেসব দুর্বলতা নিহিত রয়েছে, তন্মধ্যে এক দুর্বলতা হচ্ছে তড়িঘড়ি করার প্রবণতা। (মাআরেফুল কোরআন)

তবে কিছু কাজ এমন আছে, যেগুলোতে তড়িঘড়ি করা কাম্য, আর কিছু কাজ এমন আছে, যেগুলোতে তাড়াহুড়া করা নিন্দনীয়। নিম্নে যেসব কাজে তাড়াহুড়া কাম্য তা নিয়ে আলোচনা করা হলো—

দোয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা: দোয়া করার পর, দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা অপছন্দনীয় কাজ। কারণ বান্দার জন্য কোনটা উপযোগী আর কোনটা অনুপোযোগী তা একমাত্র ভালোভাবে জানেন দয়াময় আল্লাহ তাআলা। এ জন্য বান্দা যেটা প্রার্থনা করেছেন সেটা যদি বান্দার জন্য বাস্তবে অকল্যাণকর হয়, তখন আল্লাহ তাআলা তা বান্দাকে দেন না। এ কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়ার মধ্যে তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করেছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) নবী (সা.) বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা গৃহীত হয় যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দোয়া করে এবং (দোয়ায়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), (দোয়ায়) তাড়াহুড়া করা কী? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি তো দোয়া করেছি, আমি দোয়া তো করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে তিনি আমার দোয়া কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দোয়া করা পরিত্যাগ করে। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮২৯)

আরও পড়তে পারেন-

নামাজে তাড়াহুড়া না করা: নামাজ হচ্ছে বান্দা ও তার প্রভুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার এক সেতু। এই নামাজে সিজদার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার সর্বোচ্চ নৈকট্য লাভ করে। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ এবাদতে তাড়াহুড়া করা বান্দার জন্য একদমই বেমানান। হাদিসের মধ্যে এদের ব্যাপারে নিন্দা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে ইমামের আগে মাথা তোলে, আল্লাহ তার আকৃতিকে গাধার আকৃতির মতো করে দেবেন—এ ব্যাপারে সে নিজেকে নিরাপদ মনে করছে নাকি?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৫০)

সংবাদ শোনামাত্রই প্রচার না করা: যেকোনো বিষয়ে শোনামাত্রই তা প্রচার করা, তা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো এটি মারাত্মক গুনাহ। এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকা উচিত, কোনো ধরনের তাড়াহুড়া করা উচিত নয়। আমাদের একটু অসতর্কতার কারণে অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শুনে (সত্যতা যাচাই না করে) তা-ই বলে বেড়ায়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫)

কারো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তাড়াহুড়া না করা: কোনো ব্যক্তির বাহ্যিক অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত না নেওয়া। কারো ব্যাপারে মন্তব্য করতে ভেবে-চিন্তে করা উচিত। ভালোভাবে, পরিপূর্ণ অবগত না হয়ে অনেক সময় আমরা এমন এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই, যার কারণে পরবর্তী সময়ে লজ্জিত হতে হয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বসো। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়। ’ (সুরা : আল-হুজরাত : ৬)

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।