Home সোশ্যাল মিডিয়া আমরা কেন ‘ক্রিয়েটিভ কৌমি’দের সমালোচনা করি?

আমরা কেন ‘ক্রিয়েটিভ কৌমি’দের সমালোচনা করি?

।। ইফতিখার জামিল ।।

ক) দুই হাজার তেরো সালের পরে শাপলা-শাহাবাগ উভয় তরফেই অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এসব প্রশ্ন থেকে কওমি তরুণদের একাংশ ‘শাহাবাগি-আম-বামদের’ সাথে মেশা শুরু করেন। সম্পর্ক-যোগাযোগে কোন অসুবিধা নেই, তবে অযোগ্য-অপরিণত যোগাযোগে ক্ষতিটাই হয় বেশি। এখন, পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি পরিচিতদের অনেকে অজানার পথে হাটা শুরু করেছেন।

পরিচিত বিশজনের মধ্যে অন্তত তিনজন এখন প্রকাশ্যে লিভ-টুগেদার করেন, চার-পাঁচজন নিয়মিত মদের বারে যান। ফেসবুকে পার্টনার-মদের ছবিও শেয়ার করেন। প্রায় দশজনের মতো বাম-কালচাঁড়াল রুচি-জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছেন, তারা এখন ইসলামি সমাজের প্রতি বিরক্ত। আপনি আমাকে বলেন, এটা কি খুব স্বাভাবিক ঘটনা?
খ) দেখুন, আমরা সবাই গুনাহগার, কেউই ফেরেশতা না। তবে প্রকাশ্যে গুনাহ করা শুরু করলে/গুনাহগারদের রুচি-ওয়ার্ল্ডভিউয়ে মুগ্ধতা পোষণ করলে সেটা স্বাভাবিক না, এলারমিং। মুসলিম সমাজে গুনাহ করলে আপনার মধ্যে তৈরি হবে অপরাধবোধ, আপনি নিজেকে সবসময় জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে রাখবেন। সেকুলার-বাম সমাজে এসব জিজ্ঞাসা নেই, বরং তারা একে মানবিক প্রবৃত্তি-চাহিদা বলে মহিমান্বিত করেন। একসময় ‘ক্রিয়েটিভ কৌমি’দের গুনাহটা স্বাভাবিক হয়ে যায়, ধার্মিকদের বিরক্ত লাগে, সেকুলার রুচিতে তারা আরাম-আশ্রয় খুঁজে নেন। অজানার পথে হাটার সবগুলো গল্পই এমন।

গ) আপনাদের মনে করিয়ে দেই, ত্রিশের দশকে ঢাকাস্থ শিখা গোষ্ঠীকেও আমরা একই বর্গে চিহ্নিত করতে পারি। পশ্চিমা চিন্তা-ব্যবস্থায় মুগ্ধতা, প্রথাগত মুসলিম সমাজের সাথে দূরত্ব, ইসলামি ঐতিহ্যের প্রতি বিরক্তি।

শিখা গোষ্ঠীতে অনেকেই ছিলেন। তারা সবাই সমান সেটা কখনোই বলা যাবে না। শিখা গোষ্ঠী হিন্দু শিক্ষিত সমাজ ও তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনে প্রভাবিত ছিল, তারা তাদের পত্রিকায় কামাল আতাতুরকের মহিমা গাইতেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ-বামপন্থার জন্ম হয়।

আরও পড়তে পারেন-

উদ্যোক্তাদের একজনের ব্যাখ্যা তুলে দিচ্ছি, ‘‘কেহ হয়তো মনে করবেন এ সমাজের নাম মুসলিম সাহিত্য সমাজ হওয়ায় হিন্দু সাহিত্যিকদের কোনো সম্পর্ক এতে নেই; কিন্তু, এই বার্ষিক রিপোর্ট হতে আপনারা বুঝবেন যে এ সমাজ কোনো একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ নয় কিংবা এ কোনো এক বিশেষ সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য গঠিত হয়নি। সাহিত্য সৃষ্টি এর উদ্দেশ্য, আর সেই সাহিত্যে মুসলমানের প্রাণ ও জীবন ফুটিয়ে তোলাই ইহার অন্যতম উদ্দেশ্য।’

ননবাইনারি, অসাম্প্রদায়িকতা, শিল্প-সাহিত্য, বুদ্ধির মুক্তি এগুলোই ছিল শিখা গোষ্ঠীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। ‘ক্রিয়েটিভ কৌমি’দের সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছেন?

ঘ) আপনাদের মনে করিয়ে দেই, বদরুদ্দিন ওমর-মাহফুজ আনামের বাবারা ছিলেন, ‘ক্রিয়েটিভ’ ধারার লোক। পাকিস্তান আমলে এর আকছার দৃষ্টান্ত পাবেন। প্রখ্যাত বাম রাজনীতিবিদদের জীবনী খুলে দেখেন, তাদের বাবারা হয়তো ‘ক্রিয়েটিভ’ শ্রেণীর ছিলেন, অথবা বাবাদের অজান্তে ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে/শিল্প-সাহিত্যে এসে রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছিলেন। এক প্রজন্মের মধ্যে তারা হয়ে উঠলেন প্রথাগত মুসলিম সমাজের বিরোধী শক্তি। অজানার পথে হাটার সবগুলো গল্পই এমন।

নোট: আমি তাদের কথাই বলেছি, যারা প্রকাশ্যে ফেসবুকে ছবি দেন, অযথা নির্দিষ্ট কাউকে সন্দেহ করবেন না। অবশ্য তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রাখে আরও অনেকে। একে ‘ব্যক্তিগত’ বিষয় হিসেবে না দেখে সামাজিক ঘটনা হিসেবে দেখাই শ্রেয়। , এসবকিছুর পরেও ব্যক্তিগত প্রাইভেসিটা গুরুত্বপূর্ণ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।