জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগের প্রধান আল্লামা ড. নূরুল আবছার আযহারী বলেছেন, ইসলামকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করে থাকে, এদের মধ্যে বিশেষত দু’টি দল রয়েছে। এক দল সরাসরি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, অন্যদল ইসলামেরই মুখোশ পরে নামে-বেনামে কাজ করে যাচ্ছে। যারা মুখোশ পরে ইসলামের নামেই ইসলামের শেকড় কাটার চেষ্টা করছে, এদের মধ্যে একটি পুরাতন ফিরকার নাম ‘আহলে কুরআন’।
সম্প্রতি ফিরকাটি নতুনরূপে নতুন পদ্ধতি নিয়ে আমাদের সমাজে কাজ করছে উল্লেখ করে আল্লামা ড. নূরুল আবছার আযহারী বলেন, এরা ‘মুনকিরীনে হাদীস’ হলেও নিজেদেরকে পরিচয় দেয় ‘আহলে কুরআন’ বলে। যদিও এদের মৌলিক সবকিছুই কুরআনবিরোধী। কুরআন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন এদের চিন্তাধারা এবং দাবি-দাওয়া। এরা দ্বীনের প্রতি আগ্রহবোধ করা জেনারেল শিক্ষিতদেরকে টার্গেট করে গোমরাহীর পথে টেনে আনার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এদেরকে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনের প্রথম সেশনে প্রদত্ত বক্তব্যে ড. আল্লামা নূরুল আবছার আযহারী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ইসলামের মৌলিক উৎস দু’টি। যথা- ১ . পবিত্র কুরআন মাজীদ এবং ২. প্রিয় নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদীস শরীফ। পবিত্র কুরআন মাজীদ অতীতেও সংরক্ষিত ছিল, বর্তমানেও সংরক্ষিত আছে, ভবিষ্যতেও সংরক্ষিত থাকবে ইনশাআল্লাহ। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআ’লা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় কুরআন আমি অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তা রক্ষণাবেক্ষণ করবো। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়কে হাদীস বলা হয়। এটি ইসলামের মৌলিক দ্বিতীয় উৎস। ইসলাম পালন করতে হলে যার বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য , একদল কুচক্রী মহল সুন্নাহকে সম্পূর্ণ রূপে অস্বীকার করে যাচ্ছে । তারা ‘আহ্লুল কুরআন’ নামে পরিচিত। সাম্প্রতিকালে হাদীস অস্বীকারকারী এই গোমরাহ দলটির উপদ্রব বেড়েই চলছে ।
ড. আল্লামা নূরুল আবছার আযহারী আরো বলেন, এই ভ্রান্ত মতাদর্শী কথিত আহলে কুরআনের লোকরা দাবি করে থাকে, ‘কুরআন থাকতে সুন্নাহ-এর কোনো প্রয়োজনই নেই’। এ পর্যায়ে তারা প্রধান দলিল হিসেবে পেশ করে থাকে সূরা আনআমের ৩৮ নম্বর আয়াতটি। যাতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- ما فرطنا في الكتاب من شيء “কুরআনে আমি কোনো কিছুরই বর্ণনা বাদ রাখিনি (যাবতীয় বিষয়,সমস্যার সমাধান এখানে আছে)’।
তিনি বলেন, এই আয়াতের উল্লেখ করে তাদের বক্তব্য হলো, কুরআনের এমন সুস্পষ্ট ঘোষণার পর সুন্নাহ-এর প্রয়োজনীয়তার দাবি অবান্তর।
আল্লামা নূরুল আবছার বলেন, আমরা তাদেরকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই যে, তারা সুন্নাহর ব্যাখা- বিশ্লেষণ ও বিবরণ ছাড়া এক রাকাত নামাযও পড়ে দেখাতে পারবেন না। কারণ, কুরআনে নামায প্রতিষ্ঠা করার কথা আছে, আদায়ের পদ্ধতির বিবরণ নেই। কুরআন সংক্ষিপ্ত, অন্যদিকে হাদীস কুরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ। অতএব, একজন মুসলিমের জন্য কুরআন ও হাদীস সমানভাবে জরুরি।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
বয়ানে ড. আল্লামা নূরুল আবছার আযহারী আরো বলেন, পূর্বে হাদীস অস্বীকারকারীদের মধ্যে শীয়া সম্প্রদায় অন্যতম ছিল। তাই আপনাদের সামনে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরতে চাই। এই শিয়ারা আহলে বায়আতের আশেক হওয়ার দাবিদার। হযরত আলী (রাযি.)কে হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের (রাযি.) উপর প্রাধান্য দেয়। সাথে সাথে ১২ ইমামের প্রবক্তা। তথাকথিত বারো ইমামের ব্যাপারে তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস অবান্তর ও মনগড়া।
তিনি বলেন, শিয়াদের বিশ্বাস হলো- বারো ইমাম আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীগণের মতো মনোনীত ও নিষ্পাপ। শুধু তাই নয়, তারা মনে করে , হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমমর্যাদার অধিকারী ও অন্যান্য নবী- রাসূলগণের ঊর্ধ্বে (নাঊজু বিল্লাহ)। তাদের মতে, এই ইমামরা কোন বস্তুকে হালাল ও হারাম সাব্যস্ত করার অধিকার রাখে। তারা কবে মারা যাবে, তাও জানে। বারো ইমামকে যারা মানে না তারা কাফের শুধু তাই নয়, পরকালে তাদের কোন মুক্তি মিলবে না। এই হলো শিয়াদের অন্যতম এক ভ্রান্ত আক্বিদা।
ড. আযহারী আরো বলেন, শিয়া ও মুসলমানদের মাঝে মৌলিক চারটি বিষয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে, প্রথমত: সমস্ত নবীগণের কালিমা ছিলো দুই অংশ বিশিষ্ট। আর শীয়াদের কালিমা হলো পাঁচ অংশ বিশিষ্ট। বরং খোমেনির ভাষ্যমতে ৬ অংশ বিশিষ্ট। শিয়াদের বিশ্বাসমতে কালিমা নিম্নরূপ-
ইহুদী-খ্রিস্টানরা কালিমার একাংশ (মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) না মানার কারণে কাফের । আর শীয়ারা মূল কালিমার উপর আরো তিনটি বরং চারটি অংশ বৃদ্ধি করার কারণে কাফের। দ্বিতীয়ত রেসালত- এ বিষয়েও তাদের অনেক সমস্যা আছে । যেমন- ১. তাদের বারো ইমাম যে মর্যাদায় পৌঁছে গেছে, কোন নবী-রাসূল ও ফেরেশতা সেই মর্যাদায় পৌঁছতে পারেনি । ২. প্রিয় নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লজ্জাস্থান ( নাঊজুবিল্লাহ) জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত। কারণ, তিনি নাকি কোন মুশরিকা মেয়ের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছিলেন (নাঊজুবিল্লাহ)। ৩. কুরআন: তাদের দাবি হলো বর্তমান মুসলমানদের নিকট বিদ্যমান কুরআন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ পূর্ণাঙ্গ কুরআন নয়, বরং তা বিকৃত কুরআন। মূলত কুরআনে ১৭০০ হাজার আয়াত ছিলো। সেটি ৭০ গজ লম্বা ছিলো। সূরাতুল বিলায়া নামক একটি সূরা ছিলো। শুধু তাই নয় , পঞ্জতন তথা পাঁচ মহা ব্যক্তিত্বের আলোচনা ঐ কুরআনে ছিলো ইত্যাদি। মুসলমানরা এসব বিলুপ্ত করেছে। তাই বর্তমান কুরআন বিকৃত কুরআন। (নাউযুবিল্লাহ)।
এ পর্যায়ে ড. আল্লামা নূরুল আবছার আযহারী বলেন, আমরা বলবো, তারা এ বক্তব্যের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের আরেকটি আয়াত অস্বীকার করেছে , যার অর্থ হচ্ছে, নিশ্চয় কুরআন আমি অবতীর্ণ করেছি , আমিই তা রক্ষণাবেক্ষণ করবো।
সাহাবায়ে কেরাম নিয়ে শিয়াদের চতুর্থ ভ্রান্ত আকিদার উল্লেখ করে ড. আযহারী বলেন, তাদের বিশ্বাস হলো, মুহাম্মদ (সা.)এর মৃত্যুর পর চারজন সাহাবী ছাড়া সমস্ত সাহাবী মুরতাদ হয়ে গেছে (নাউজুবিল্লাহ)। হযরত আলী (রাযি.)সহ শুধুমাত্র পাঁচজন সাহাবিই রাসূল (সা.)এর মৃত্যুর পর ইসলামের ওপর অটল ছিলেন । আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সবাইকে শীয়াদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন ।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ