Home ইসলাম সমাজ ও সভ্যতায় বিলাসিতার প্রভাব

সমাজ ও সভ্যতায় বিলাসিতার প্রভাব

জাওয়াদ তাহের

বিলাসিতা মানুষের কর্মস্পৃহা বিলীন করে দেয়। যে জাতির মধ্যে বিলাসিতার মতো দুরারোগ্য ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে তাদের কর্মদক্ষতা ধীরে ধীরে শেষ হতে শুরু করে। এক সময় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তারা পরিশ্রম, চেষ্টা-সাধনা— এসব ভুলে যায়। তাদের মাঝে প্রচণ্ডরূপে ভোগ-বিলাসের মোহ তৈরি হয়। যুগে যুগে বহু জাতি বিলাসিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। কারণ বিলাসিতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ফলে সে দুনিয়ার প্রকৃত রূপ ভুলে যায়। ফলে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত সমাজ ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। কোরআন ও হাদিসে বিলাসিতার ব্যাপারে সতর্কতা এসেছে। বিলাসিতার কারণে মানুষের কী কী ক্ষতি হয়, তারও বর্ণনা এসেছে বিস্তারিত।

নবী-রাসুলদের অস্বীকার

বিলাসী আর আরাম-আয়েশি লোকদের অভ্যাস, তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণে সবার আগে নবী-রাসুলদের অস্বীকার করে। তারা তাদের সম্পদ, সন্তান এগুলো দ্বারা গর্ব করতে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি যে জনপদেই কোনো সতর্ককারী (নবী) পাঠিয়েছি, তার বিত্তশালী লোকেরা বলেছে, তোমরা যে বার্তাসহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৪)

আরও পড়তে পারেন-

সৎকাজের আদেশ ছেড়ে দেয়

বিলাসী মানুষ সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বারণ করা ছেড়ে দেয়। তারা কী খারাপ কাজ করল তার প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপ করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের আগে যেসব উম্মত গত হয়েছে, তাদের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধির অবশেষ আছে এমন কিছু লোক কেন হলো না, যারা পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করত? অবশ্য অল্প কিছু লোক ছিল, যাদের আমি তাদের মধ্য হতে (শাস্তি থেকে) রক্ষা করেছিলাম। আর জালিমরা (অসৎ কাজে যারা বাধা দেয় না) যে ভোগ-বিলাসের মধ্যে ছিল, তারই পেছনে লেগে থাকল এবং তারা ছিল অপরাধী।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৬)

বিলাসীরা বামপন্থী

কোরআনে বামপন্থীদের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে তারা ইতঃপূর্বে বিলাসী জীবন-যাপন করত। যার ফলে তাদের আজকের অবস্থা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইতঃপূর্বে তারা (বামপন্থী) ছিল আরাম-আয়েশের ভেতর।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৪৫)

ধ্বংসের কারণ

ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত হওয়া, ধ্বংসের কারণ। বিলাসিতায় সমাজ ও সভ্যতা ধ্বংস হয়। আল্লাহ তাআলার আজাবকে ত্বরান্বিত করে। কোরআনের এই আয়াত এ দিকেই ইঙ্গিত করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তাদের বিত্তবান লোকদের (ঈমান ও আনুগত্যের) হুকুম দিই, কিন্তু তারা তাতে পাপাচারে মেতে ওঠে, ফলে তাদের সম্পর্কে কথা চূড়ান্ত হয়ে যায় এবং আমি তাদের ধ্বংস করে ফেলি।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের ভয় করছি না; বরং ভয় করছি যে তোমাদের ওপর দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হবে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। আর তোমরা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে যেমন তারা তা পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। আর তা তোমাদের আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদের আখিরাতবিমুখ করেছিল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪২৫)

পাপাচারের পথ দেখায়

প্রচণ্ড বিলাসী মানুষ পাপাচারে ডুবে থাকে এবং অবাধ্যতার পথে পরিচালিত হয়। যখনই সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে তার মাঝে সেই অবাধ্যতার মাত্রা বাড়তে থাকে। এ জন্য সম্পদ শুধু উপার্জন করলেই চলে না, সম্পদ খরচ করার পদ্ধতিও শিখতে হয়। আবু উসমান (রহ.) বলেন, আমরা আজারবাইজানে ছিলাম। এ সময় ওমর (রা.) আমাদের (দলনেতার) কাছে চিঠি লিখলেন, হে উতবাহ ইবনে ফারকাদ, এ ধন-সম্পদ তোমার কষ্টার্জিত নয়, তোমার মা-বাবারও কষ্টার্জিত নয়। তাই তুমি যেরূপে নিজ বাড়িতে পেটপুরে ভক্ষণ করো, তেমনি মুসলিমদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তাদেরও পেটপুরে ভক্ষণ করাও। আর সাবধান, মুশরিকদের ভোগ-বিলাস বেশভূষণ এবং রেশমি কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) রেশমি কাপড় পরতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, তবে এ পরিমাণ বৈধ আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর শাহাদাত ও মধ্যমা আঙুলদ্বয় একসঙ্গে আমাদের সম্মুখে তুলে ধরলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৩০৪)

পরিতৃপ্ত হয় না

বিলাসী মানুষ কখনো তৃপ্তি লাভ করতে পারে না। তার সম্পদ যদি বৃদ্ধি পেতে থাকে তার আশা-আকাঙ্ক্ষাও ততটাই উঁচু হতে থাকে। তখন তার মধ্যে এই বোধ শক্তি থাকে না যে মাল কোথা হতে উপার্জন করা হলো আর কোথায় খরচ করা হলো। নবী (সা.) বলেছেন, যদি বনি আদমকে স্বর্ণে ভরা এক উপত্যকা সম্পদ দেওয়া হয়, তথাপি সে দ্বিতীয়টার জন্য লালায়িত হয়ে থাকবে। আর তাকে দ্বিতীয়টি যদি দেওয়া হয়, তাহলে সে তৃতীয়টার জন্য লালায়িত থাকবে। বনি আদমের পেট মাটি ছাড়া ভরতে পারে না। তবে যে তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়ার প্রকৃত রূপ উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমিন

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন