Home ওপিনিয়ন ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালবাসা দিবস এ কাদের আয়োজন?!

ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা ভালবাসা দিবস এ কাদের আয়োজন?!

বিনতে জাহাঙ্গীর

ভালবাসা মানবের পত্রিতম একটি অনুভূতি। নিস্বার্থ ভালবাসার জন্য রয়েছে সাওয়াব। নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আজ আমার সুমহান ইজ্জতের খাতিরে যারা পরস্পরে ভালবাসা স্থাপন করেছিল আজ তারা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় স্থান দিব। আজ এমন দিন, আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া নেই। (মুসলিম)

নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, সর্বোত্তম আমলসমূহের মধ্যে এটিও, (তা হল) আল্লহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা রাখা। (আবূ দাঊদ)

ভালবাসা যখন হয়ে যায় অশ্লীলতা ও গোনাহের কারণ, তখন তা হয় হারাম। আমাদের দেশে ‘ভালবাসা দিবস’ নামে উৎযাপিত দিনটির আসল নাম কি? এ দিবসের তাৎপর্য কি? উইকপিডিয়ার ভাষায়-

“ভালোবাসা দবিস বা সন্টে ভ্যালন্টোইন দবিস যাকে অন্যভাবে সইেন্ট ভ্যালন্টোইন্স উৎসব]ও বলা হয়, একটি র্বাষকি উৎসবরে দনি যা ১৪ই ফব্রেুয়ার[িভালোবাসা এবং অনুরাগরে মধ্যে দযি়ে উদযাপতি হয়। প্রথম দকিে এটি সইেন্ট ভ্যালন্টোইন নামক একজন অথবা দুজন খ্রষ্টিান শহদিকে সম্মান জানাতে খ্রষ্টির্ধমীয় উৎসব হসিবেে পালতি হয়ে আসছলি, পরর্বতীতে লোক ঐতহ্যিরে ছোঁয়ার মধ্যে দযি়ে এটি বভিন্নি দশেে আস্তে আস্তে প্রমে ও ভালোবাসার সাংস্কৃতকি, র্ধমীয় ও বাণজ্যিকি একটি আনুষ্ঠানকি দবিসে পরণিত হয়” ।

নব-উদ্ভবিত পালনীয় বিষয়ে ইসলামের রীতিঃ

ইসলাম একটি সহজ-সরল জীবন ব্যবস্থা। একজন মুসলিমকে হতে হবে চিন্তাশীল ও সতর্ক। নতুন আগত যে কোন বিষয়ে তাকে জানতে হবে ইসলামের সীমারেখা। যুগের স্রোতে গা ভাসিয়ে বেপরোয়াচিত্তে সে লিপ্ত হতে পারেনা যে কোন কাজে। মুসলিমের প্রতিটি কাজই হয় স্রষ্টার বাধ্যতায় অর্থপূর্ণ, যুক্তিনির্ভর। তাই অহেতুক কথা-কাজ ও আচরণকে রব্বে কারীম অপছন্দ করেছেন একজন মুমিনের জন্য। নতুন কোন আয়োজন সামনে এলে প্রথমে আমাদের দুবিষয়ে অবশ্যই যাচাই করতে হবে। এর উপরই নির্ভর করে তা পালন বা বর্জন এর বিধান।

১. এই আয়োজন তথা দিবসটির সাথে কোনো ধর্মীয় চেতনা সম্পৃক্ত কিনা। হলে, তা ইসলামের পক্ষে নাকি বিপক্ষে।

২. তাতে পালনীয় নিয়ম-রীতি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা।

যাচাইপর্বঃ

১. উইকিপিডিয়ার তথ্য হতে স্পষ্ট বুঝা যায়, ভ্যালেন্টাইন্স নামক খ্রিষ্টানপাদ্রীর মৃত্যুদন্ডের দিন ছিল এটি। আর তাকে জাগরুক করে রাখতেই খ্রিষ্টানভক্তরা পালন শুরু করে এ দিবস। সুতরাং স্পষ্ট ভিন্ন ধর্মীয় কালচার এটি। ‘সেন্ট ভ্যালন্টাইন্স ডে’ নামটিই তার সবচে বড় প্রমাণ। কিন্তু পশ্চিমাপ্রেমী এদেশীয় কিছু গোলাম কৌশলে আসল নামটি আড়াল করতে তৎপর! ‘ভালবাসা দিবস’ প্রচারিত করে তা পালনে সহজীকরণের কৌশল! মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত সতর্ক হওয়া।

২. নব উদ্ভাবিত আয়োজনে পালনীয় রীতি নীতি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা? অনেকেই বলতে চান, নাযায়েজ-গোনাহের বিষয় না রেখেও তো হালালে আমরা ভালবাসা বিনিময় পালন করতে পারি! কিন্তু দিবসের প্রবর্তকগণই নির্ধারিত করেছেন পালনীয় বিষয়Ñ ‘অভিবাদন কার্ড, উপহার প্রেরণ, ডেটিং, গির্জা পরিসেবা’।

আরও পড়তে পারেন-

আমরা যত ভাল বিষয় দিয়েই পালন করিনা কেন এ দিবস, তা অনর্থকই হবে। পালনীয় বিষয় নির্ধারিত হওয়ার পরও, যুগ-সংস্কৃতির উসিলা দিয়ে তা পালনের সুযোগ নেই। ব্যাপারটা এমন হল, যেমন: ভিন্ন ধর্মীয় কোন ‘পূজা-অনুষ্ঠানের দিন’ আমি পালন করলাম, যায়েজ পর্যায়ের আয়োজনের মাধ্যমে। কিন্তু যখন তা অন্যধর্মের অনুষ্ঠান হিসেবে প্রমাণিত, তখন হালাল আয়োজন দিয়েও তা সেলিব্রেশনের সুযোগ নেই।

হে মুসলিম যুব-সমাজ! হও সতর্ক-সাবধান!

মিডিয়ার নতুন বর্ষ শুরু হয় যেন ফেব্রুয়ারিতে! ফেব্রুয়ারি এলে তথাকথিথ ভালবাসা দিবস’ নিয়ে শুরু হয়ে যায় তাদের প্রচারণা ও নব পায়তারা! রঙিন ফাঁদ দেখিয়ে উন্মাদ-উল্লসিত করে যুব সমাজকে। নাটক, গান কত কি আয়োজন! সমাজে বিবাহ বহির্ভূত ‘অবৈধ ভালবাসা’-কে সহজ, অতি স্বাভাবিক ও কাম্য বিষয় হিসেবে প্রমোট করা হচ্ছে। বিভিন্ন শো তে অবৈধ ভালবাসার গল্পগুলো বলতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে! এমনকি পুরস্কৃতও করা হচ্ছে! বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে অবৈধ ভালবাসার প্রতি। সবসময়ই নাটক-সিনেমাগুলোতে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়ে থাকে। তবে ফেব্রুয়ারিতে চলে যেন তার বার্ষিক প্রচারণা!

বিভিন্ন নিউজে তথাকথিত অবৈধ ভালবাসা পালনের টিপস দেয়া হচ্ছে। রোজ ডে, প্রপোজ ডে, চকলেট ডে, টেডি ডে, প্রমিজ ডে, হাগ ডে, কিস ডে -এই সাত দিনের পর অষ্টম দিবসে পূর্ণতা পায় ভালবাসা দিবসের! অর্থ্যৎ এসব সপ্ত দিন সাজিয়ে ‘ভালবাসা দিবস’ -এ সরাসরি হারামে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে তরুণ-তরুণীদের। নায়ুযুবিল্লাহি মিন যালিক।

রব্বে কারীম ইরশাদ করেন-
إنَّ هذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَا تَّبِعُوهُ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه – – ‘আর নিশ্চই আমার এ পথ সহজ-সরল। সুতরাং তোমরা এ পথের অনুসরণ করো। এছাড়া অন্য পথসমূহের অনুসরণ করো না, তা তোমাদের সরলপথ হতে সরিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেবে’।(সূরা আনআম:১৫৩)

নবী করীম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যাক্তি যেই জাতির অনুসরণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।’(আবূ দাঊদ:৪০৩৩,শুআবুল ঈমান:১১৯৯)

আসুন রবকে ভালবাসি, ভালবাসার হক আদায় করি। প্রিয় রাসূলকে ভালবাসি, ভালবাসার দাবি রক্ষা করি। আল্লহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসার হক ও দাবি কি? আল্লাহকে ভালবাসার হক হল তাঁর আনুগত্য করব নির্দ্বিধায়। নবীজিকে ভালবাসার দাবি হল তাঁর অনুসরণ আবশ্যক করে নেব নিজ পথচলায়!

পরিবারকে ভালবাসুন, স্বজন-পরিজনের সাথে সুস্পর্ক-হৃদ্যতা বজায় রাখুন। ইসলাম এসব পবিত্রতম ভালবাসাকেই সমর্থন করে এবং তা সর্বদা-বছরজুড়েই। ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ যেই ভালবাসার কথা বলে, ইসলামে তা হারাম। সংযত থাকি, অপর মুসলিমকেও ফিরিয়ে রাখি এ দিনের অশ্লীলতা হতে। হারামের ক্ষণিকের স্বাদ, কেড়ে নিতে পারে ইহ-পরকাল দু জগতের আত্মিক স্বাদ!

নবীজি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই সৎকাজে আদেশ দিবে, খারাপ হতে ফিরিয়ে রাখবে, অন্যথায় অচিরেই আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ করবেন অত:পর তোমরা তাঁকে ডাকবে, কিন্তু তিনি ডাক শোনবেন না (দুআ কবুল করবেন না)। ( জামে তিরমিযী :২১৬৯)

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।