Home ইসলাম কেমন আছে কেনিয়ার মুসলমানরা

কেমন আছে কেনিয়ার মুসলমানরা

খ্রিস্টীয় দশম শতকে নির্মিত কেনিয়ার একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। ছবি : সংগৃহীত

 ।। আবরার আবদুল্লাহ ।।

উত্তর আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার দাপ্তরিক নাম ‘রিপাবলিক অব কেনিয়া’। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণ সুদান, উত্তরে ইথিওপিয়া, পূর্বে সোমালিয়া, পশ্চিমে উগান্ডা, দক্ষিণে তানজানিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ভারত মহাসাগর অবস্থিত। কেনিয়ার মোট আয়তন পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭ বর্গকিলোমিটার। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪৭.৬ মিলিয়ন। এর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ১০.৯ শতাংশ (প্রায় ৫.২ মিলিয়ন)। আয়তনে কেনিয়া বিশ্বের ৪৮তম, জনসংখ্যায় ২৭তম এবং সাব-সাহারান অঞ্চলে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আবহাওয়া ও ভূমির বৈশিষ্ট্যে কেনিয়া এক বৈচিত্র্যময় দেশ। নাইরোবি কেনিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে কেনিয়ায় আরব মুসলিমদের আগমন ঘটে। তারা সেখানে আগমন করেন ব্যাবসায়িক সূত্র ধরে। কেননা খোলাফায়ে রাশেদার যুগ থেকে পারস্য উপসাগর ও কেনিয়ার সোয়াহিলি উপকূলের শক্তিশালী বাণিজ্যিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে কেনিয়ায় পাওয়া সর্বপ্রাচীন মুসলিম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খ্রিস্টীয় দশম শতকের। কেনিয়ার মুসলিম নিদর্শনগুলোর মধ্যে মুসলিম বসতি গেদি ও মান্দা দ্বীপের মুসলিম শহর অন্যতম।

কেনিয়ায় মুসলিম ব্যবসায়ীদের বিচরণ ও তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে ইসলামেরও প্রসার হতে থাকে। কেনিয়ান উপজাতিগুলোর মধ্যে সোয়াহিলি ও বানতু উপজাতির লোকেরা প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করে। আরব মুসলিমদের মাধ্যমে সেখানে আরব-আফ্রিকান সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এমনকি বানতু ভাষা আরবি বর্ণে লেখা হয়। যা থেকে আরব মুসলিমদের প্রভাব সহজেই বোঝা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই কেনিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলেই মুসলিমদের বসবাস বেশি। তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করত, তবে প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলিমরা সংঘবদ্ধভাবে পৃথক আবাস গড়ে তুলত। মরক্কোর বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দে সোয়াহিলি উপকূল ভ্রমণ করেন। তিনি সেখানে মুসলমানদের সম্মানজনক উপস্থিতি দেখতে পান। ইবনে বতুতার বর্ণনা মোতাবেক কেনিয়ার মুসলিমরা ছিল ধার্মিক, সামাজিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তিনি সেখানে কাঠের তৈরি একাধিক মসজিদ দেখতে পান।

আরও পড়তে পারেন-

খ্রিস্টীয় ১৭ শতকে কেনিয়ায় পর্তুগিজ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমানের প্রভাব ও তাদের সম্মানজনক অবস্থান অব্যাহত ছিল। ঔপনিবেশিক শাসননীতি ও খ্রিস্টধর্ম প্রসারের প্রচেষ্টা মুসলিমদের এক সংঘাতময় সময়ের মধ্যে ফেলে দেয়। ঔপনিবেশিক শাসকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ১৯ শতকের শুরুভাগে নিকটবর্তী জানজিবার দ্বীপপুঞ্জ ওমানের শাসনাধীন হওয়ার পর কেনিয়ায় মুসলিমরা সুদিন ফিরে পেতে শুরু করে।

১৯৬৩ সালে স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিমরা ক্রমেই ধর্মপালনের স্বাধীনতা ফিরে পেতে থাকে। দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান মুসলমানের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়। স্বাধীন কেনিয়ায় বহু মুসলিম জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। যেমন কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ ইউসুফ হাসান আবদি, রাজনীতিক নাজিব বালালা, প্রধান বিচারপতি আবদুল মজিদ কুকরার, ক্রিকেটার ইরফান করিম, ফুটবলার রামা সেলিম, বক্সার ওপর আহমদ প্রমুখ।

ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কেনিয়া মুসলিম, দ্য সুপ্রিম কাউন্সিল অব কেনিয়া মুসলিমস, দি ইসলামিক পার্টি অব কেনিয়া ইত্যাদি সংগঠন কেনিয়ায় মুসলিম অধিকার নিয়ে কাজ করছে। ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব কেনিয়া’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশটিতে প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একাধিক ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

তথ্যসূত্র : প্রবন্ধ : ইসলাম ইন কেনিয়া; প্রবন্ধ : মুসলিমস ইন কেনিয়ান পলিটিকস; উইকিপিডিয়া

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।