Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ জনসংখ্যায় বিশ্বের ছোট ১০ দেশ!

জনসংখ্যায় বিশ্বের ছোট ১০ দেশ!

ভ্যাটিকান সিটি। ছবি: শাটারস্টোক।

বিশ্বে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ১৯৫টি দেশ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু দেশ আয়তনের দিক দিয়ে বেশ বড়, রয়েছে কোটি কোটি জনসংখ্যা। আবার কিছু দেশ আছে যা আয়তনে বেশ ছোট এবং জনসংখ্যা লাখেরও কম। বিশ্বের এমনি ১০টি দেশের কথা উঠে এসেছে এ-জেড এনিমেলস ডট কমের প্রতিবেদনে।

ভ্যাটিকান সিটি (জনসংখ্যা ৫১০)

আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক দেশটিতে যাতায়াত করলেও স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা হাজারেরও কম। ১০৯ একর আয়তনের দেশটিতে স্থায়ীভাবে বাস করে মাত্র ৫১০ জন। ইতালির রোম শহরের ভেতর অবস্থিত দেশটি সম্পূর্ণভাবে দেয়াল দিয়ে ঘেরা।

আয়তনে সবচেয়ে ছোট হলেও দেশটি রোমান ক্যাথলিক চার্চের কেন্দ্রস্থল হওয়ার এর বেশ গুরুত্ব রয়েছে। বিশ্বের বড় বড় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে ক্যাথলিক বহু অনুসারী দেশটিতে ভ্রমণ করে থাকেন। একইসাথে সমৃদ্ধ ইতিহাস থাকায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বহু পর্যটক ভ্যাটিকান সিটিতে ভ্রমণ করেন। এর আইকনিক স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও ম্যুরাল পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।

ভ্যাটিকানের জাদুঘর ও সংগ্রহশালায় রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক নথিপত্র। দেশটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। নাগরিকেরা সাধারণত ইতালিয়ান ভাষাই ব্যবহার করে থাকেন। তবে অফিসিয়াল ও আনুষ্ঠানিক কাজে অনেক সময় ল্যাটিন ভাষাও ব্যবহার করা হয়।

টুভালু (জনসংখ্যা ১১,৩১২)

নয়টি প্রবাল দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত টুভালু প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দেশ। মাত্র ১০ বর্গমাইল আয়তনের দেশটিতে ১১,৩১২ জন মানুষের বসবাস। ভৌগলিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রত্যন্ত দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দেশটি অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।

দেশটি খুবই ছোট হওয়ায় ফসল ফলানোর মতো এতে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যদিও প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক খাবারের যোগান রয়েছে, তবে সুষম খাদ্য তালিকার জন্য জাহাজে করে চড়া দামে খাদ্য আমদানি করতে হয় তাদের। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো কাছে মাছ ধরার স্বত্ব বিক্রি করে দেশটি বেশ ভালো পরিমাণে অর্থ আয় করে। এছাড়াও অন্য দেশ থেকে টুভালুতে প্রবাসী নাগরিকেরা অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।

প্রশান্ত মহাসাগরের অন্য দেশগুলোর মতো টুভালুতেও ইউরোপীয় দেশগুলোর উপনিবেশ ছিল। ১৫৬৮ সালে স্প্যানিশরা এখানে কলোনি স্থাপন করে। ১৯ শতকের শেষের দিক থেকে ১৯৭৮ সালে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত দেশটিতে ইংরেজদের কলোনি ছিল।

স্বাধীনতার পরেও দেশটি ব্রিটেনের রাজপরিবারের প্রধানকেই রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। উপনিবেশের প্রভাবে দেশটিতে ইংরেজি ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। তবে এর নাগরিকেরা একইসাথে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, গান ও সামাজিক মূল্যবোধ টিকিয়ে রেখেছে।

নাউরু (জনসংখ্যা ১২,৬৮৮)

টুভালুর মতোই নাউরু প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রত্যন্ত দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটির একটি দ্বীপেই মোট জনসংখ্যার (১২,৬৮৮) সবাই বসবাস করেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেশটিতে বিশ্বের সবচেয়ে কম মানুষ ভ্রমণ করেছে। নিজস্ব জনসংখ্যার বাইরে মাত্র ১৫ হাজার মানুষ দেশটিতে ভ্রমণ করেছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ অন্যতম।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হলেও দেশটি উপনিবেশের কবল থেকে রক্ষা পায়নি। সময়ের পরিক্রমায় জার্মানি, জাপান দেশটিতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। অবশেষে ১৯৬৮ সালে নাউরু স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটিতে ছিল মূল্যবান ফসফেটের খনি। খনিজটি সার হিসেবে ও ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। তাই বহু শক্তিধর দেশ নাউরুর ব্যাপারে আগ্রহী ছিল।

বর্তমানে দেশটি অস্ট্রেলিয়ার সাহায্যর ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। বহু বছর ধরেই দেশটির নাগরিকদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্য উন্নত অঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার আলোচনা চলছে। তবে এখনও এ বিষয়ে কোনো আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।

কুক আইল্যান্ডস (জনসংখ্যা ১৫,০৪০)

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত কুক আইল্যান্ডসে রয়েছে মোট ১৫টি দ্বীপ। মাত্র ৯৩ বর্গমাইল আয়তনের দেশটির জনসংখ্যা ১৫,০৪০। আয়তনে ছোট হলেও সমুদ্রে দেশটির রয়েছে ৭৫৬,৭৭১ বর্গ মাইলের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এলাকা।

অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ৮০ হাজার ও নিউজিল্যান্ডে প্রায় ২৮ হাজার মানুষ রয়েছে যারা জন্মসূত্রে কুক আইল্যান্ডের ঐতিহ্যকে ধারণ করছে। দেশটির নামকরণ করা হয়েছে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন জেমস কুকের নামানুসারে, ১৭ শতকের দিকে আইল্যান্ডটি খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।

প্রতি বছর দেশটিতে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো পর্যটক ভ্রমণ করেন। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং, সি-ফুড, ফল ও মুক্তা রপ্তানি দেশটির অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।

পালাউ (জনসংখ্যা ১৮,০৫৫)

প্রায় ৩৪০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশ পালাউয়ের অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। মাত্র ১৮০ বর্গ মাইল এলাকার দেশটির জনসংখ্যা ১৮,০৫৫। প্রতিবেশী দুই দেশ ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সাথে এর সামুদ্রিক সীমানা রয়েছে।

যদিও বহু নাগরিক ইংরেজিতে কথা বলে, দেশটির মূল ভাষা আসলে পালাউয়ান। দেশটির অর্থনীতি মূলত পর্যটন, মাছ ধরা ও কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

কলোনিয়াল যুগের বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের শাসনাধীন ছিল। ১৯৯৪ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমানে দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের খুব গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন ডলারকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা দেশটির প্রতিরক্ষা ও সেবা খাতেও যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করে থাকে।

সান মারিনো (জনসংখ্যা ৩৩,৬৬০)

ভ্যাটিকান সিটির মতোই ইতালির ভেতরে সান মারিনো দেশটির অবস্থান। ১৮ শতকের দিকে ইতালির একীকরণের সময় বহু নাগরিক এর বিরোধিতা করেছিল এবং অপেক্ষাকৃত দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল সান মারিনোয় আশ্রয় নিয়েছিল।

আরও পড়তে পারেন-

ইতালি পাল্টা প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং ১৮৬২ সালে চুক্তির মাধ্যমে দেশটিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশটি নিরপক্ষ ভূমিকায় ছিল। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশটি বেশ স্বাবলম্বী ও নাগরিকদের জীবনযাত্রাও বেশ উন্নত।

সান মারিনোর স্থাপত্য পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। দেশটির রাজধানীর মধ্যযুগীয় ঐতিহাসিক ডাউনটাউন এলাকাটিকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নাগরিকেরা বছরের পর বছর ধরে ‘ফিস্ট অফ সান মারিনো’ এর মতো নিজেদের ঐতিহাসিক উৎসবগুলো ধরে রেখেছে। একইসাথে দেশটিতে ঐতিহাসিকভাবে এমব্রয়ডারি ও কাঠের কারুকাজের মতো বেশ কয়েকটি শিল্পের চর্চা করা হয়।

মোনাকো (জনসংখ্যা ৩৬,৪৬৯)

ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত শহর-রাষ্ট্র মোনাকোর জনসংখ্যা মাত্র ৩৬,৪৬৯ জন। তবে এত কম জনসংখ্যার দেশ হয়েও মোনাকো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। কারণ দেশটির মাত্র ৪৯৯ একরের জায়গাতেই সবাই বসবাস করেন। প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ করেন।

বিশ্বজুড়ে দেশটির খ্যাতি থাকায় বহু বড় বড় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী দেশটিতে নিয়মিত ভ্রমণ করেন। এখানে পাঁচ তারকা হোটেল, স্পোর্টস কার এবং বিলাসবহুল ব্যক্তিগত ইয়ট, ক্যাসিনো সবই রয়েছে।

দেশটিতে ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান ও ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে। পর্যটকদের মধ্যে দেশটির ওশেনোগ্রাফিক মিউজিয়াম ও মোনাকো ন্যাশনাল মিউজিয়ামও বিখ্যাত।

লিশটেনস্টাইন (জনসংখ্যা ৩৯,৩২৭)

সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার মধ্যকার সীমান্তে অবস্থিত লিশটেনস্টাইন একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। দেশটির প্রধান ভাষা জার্মান, তবে ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চও বেশ প্রচলিত। অনেকটা ত্রিভুজাকৃতির দেশটির অবস্থান আল্পস পর্বতমালার রাইন নদীর উপত্যকার হওয়ার দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি।

দেশটির রাজধানীর নাম ভাদুজ। এর কুনসট মিউজিয়ামে বিশ্ববিখ্যাত আধুনিক ও সমসাময়িক সময়ের শিল্প সংগ্রহ রয়েছে।

দেশটি পর্যটন, ব্যাংকিং ও ম্যানুফেকচারের ওপর ভিত্তি করে একটি শক্ত অর্থনীতি গড়ে তুলেছে।

মার্শাল আইল্যান্ডস (জনসংখ্যা ৪১,৫৬৯)

প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত পাঁচটি দ্বীপের সমন্বয়ে মার্শাল আইল্যান্ডস গঠিত। দেশটির প্রায় ৯৭.৮ ভাগ এলাকা জলভাগ; যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ। ১৫২০ এর দশকে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজরা এই দ্বীপে বসতি স্থাপন করেন।

সময়ের পরিক্রমায় দেশটি স্পেন, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসনে ছিল। এর বিকিনি এটল দ্বীপেই কুখ্যাত ক্যাসল ব্রাভো নিউক্লিয়ার টেস্ট করা হয়েছিল। যার ফলে দ্বীপটি আজও তেজস্ক্রিয়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে দেশটির অপূর্ব সৌন্দর্য থাকলেও অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভঙ্গুর। তাই দেশটিকে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।

কৃষিজ উপাদানের মধ্যে নারকেল, টমেটো, তরমুজ, ফল, শূকর, মুরগি ইত্যাদি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। পর্যটন শিল্প, টুনা মাছ, কারুশিল্পের পণ্য রপ্তানি করে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে।

সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস (জনসংখ্যা ৪৭,৬৫৭)

মাত্র ১০১ বর্গমাইল আয়তনের দেশ সেন্ট কিটস এন্ড নেভিসের জনসংখ্যা ৪৭,৬৫৭ জন। আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় দিক থেকেই দেশটি পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে ছোট দেশ। এটি ১৯৮৩ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।

ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপন করা দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি প্রথম দিকের। তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস’ যার ইংরেজি অর্থ ‘দ্য মাদার কলোনি অফ ওয়েস্ট ইন্ডিজ’।

দেশটি স্বাধীনতা লাভ করলেও ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রধানকেই রাষ্ট্রের প্রধান বলে বিবেচনা করা হয়। দেশটিতে বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে যার মধ্যে ব্রিমস্টোন হিল ফরট্রেস ন্যাশনাল পার্ক ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

সূত্র- টিবিএস।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।