Home ইসলাম অন্যকে খুশি করার কিছু উপায়

অন্যকে খুশি করার কিছু উপায়

।। ড. আবদুর রহমান আল-আরেফি ।।

ইসলাম সাম্য ও সামাজিকতার ধর্ম। ব্যক্তিগত ইবাদতের চেয়েও সামাজিক ইবাদতের পরিধি অনেক বিস্তৃত। কোরআন ও হাদিসের বেশির ভাগ অংশজুড়েই আছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করার তাগিদ। মানবতা, মানবিকতা ও মানব কল্যাণ এ ধর্মের প্রাণ। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে গোটা বিশ্বের হিতাকাঙ্ক্ষীরূপে পাঠানো হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

এই রহমত ও করুণা পৃথিবীর সব মুসলিম-অমুসলিম, প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদজগৎ এমনকি জড় পদার্থের জন্য।

একবার জনৈক ইহুদি মহানবী (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত দিল। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খুশি করার জন্য তার ডাকে সাড়া দিলেন। প্রিয় নবী (সা.)-এর মনে এই চিন্তা উদ্রেক হয়নি যে আমি কাফিরের ঘরে যাব না। তিনি এটা ভাবেননি যে একজন ইহুদিকে খুশি করলেই কী বা আসে যায়।’

প্রিয় নবী (সা.) তুচ্ছ প্রাণীকেও খুশি করতে তৎপর ছিলেন। একবার তিনি এমন দুই লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যারা দুটি উটের ওপর সওয়ার হয়ে কথা বলছিল। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রাণীকে চেয়ার হিসেবে গ্রহণ কোরো না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৬৫০)

অন্যকে খুশি করার একটি পন্থা হলো সীমারেখার মধ্যে থেকে কৌতুক-রসিকতা করা।

প্রিয় নবী (সা.) কখনো সহমর্মিতার জন্য হাসি ঠাট্টা করতেন। কখনো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে, কখনো দাওয়াতি কাজ হিসেবে, কখনো বিপদগ্রস্তকে সহমর্মিতা জানাতে, কখনো বহির্বিশ্বে ইসলামী সংস্কৃতি প্রচারের নিমিত্তে।

ইসলাম হাসি ও আনন্দে পরিপূর্ণ একটি ধর্ম। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাসা সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা কোনো ভালো কাজকে ছোট মনে করবে না, যদিও তা অন্যের সঙ্গে মুচকি হাসা হোক না কেন।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ২৬২৬)

ইসলামে অপরকে আনন্দ, খুশি করার জন্য অনেক ইবাদতের প্রবর্তন করা হয়েছে। যেমন: মৃতপরিবারকে সান্ত্বনা প্রদান, রোগীর সেবা-শুশ্রূষা, প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া ইত্যাদি। আমরা মৃতকে জীবিত করতে পারব না; কিন্তু তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে পারি। যেন আল্লাহ তাআলা তাদের দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘব করেন।

আরও পড়তে পারেন-

অন্যকে খুশি করার কিছু সাধারণ পদ্ধতি

১. হাদিয়া উপহার দেওয়া। হাদিয়া অনেক দামি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি যদি কোনো বন্ধুর বাসায় যান, আর তার সন্তানাদি থাকে, তাহলে কিছু খাবার, খেলনা নিয়ে যান। এটা তাদের আনন্দিত করবে।

২. মানুষের সঙ্গে মুচকি হাসুন।

৩. অন্য ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করুন।

৪. উত্তম কথা সদকাস্বরূপ। তাই উত্তম কথা বলুন।

৫. বন্ধু-বান্ধবের খোঁজখবর নিন।

৬. ইসলামী ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে অতীতে মুসলিমসমাজে মসজিদের পাশে অনেক (ওয়াকফকৃত) আওকাফ তথা সহায়তাকেন্দ্র (কেয়ার সেন্টার) ছিল। সেখানে শুধু অসুস্থ ও গরিবদের জন্য নামে ওয়াকফকৃত বিশেষ সেন্টার ছিল। সেখানে নিয়মিত কিছু কারি ও সাধারণ ধর্মীয় বইপাঠক থাকতেন। যেন রোগীরা সারা রাত কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পারেন। বিছানায় শায়িত অবস্থায়ও ধর্মীয় পুস্তকপঠন শুনে শুনে ইসলামী জ্ঞানার্জন করতে পারেন। ফলে রোগীরা রোগযন্ত্রণা ও বিষণ্নতার কথা ভুলে যেতেন এবং আনন্দ উপভোগ করতেন।

৭. বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়িল, জিকির-আজকার শিক্ষা দিয়ে অন্যকে খুশি করা যায়।

সৌদি আরবের বিখ্যাত লেখক ও দাঈ ড. আবদুর রহমান আল-আরেফির লেখা থেকে পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।