Home পরিবার ও সমাজ ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব

ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

ইসলাম সুন্দর জীবন ব্যবস্থা ও শান্তির ধর্ম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মুসলমানের জন্য এমন কোনো বিষয় নেই, যা সম্পর্কে ইসলাম ধর্মে আলোচিত হয়নি। সমাজে নিয়ম-শৃঙ্খলা, প্রেমপ্রীতি ও শ্রদ্ধা-সম্মানের মহৎ গুণে শান্তি নেমে আসে। এ ক্ষেত্রে সমাজ জীবনে চরিত্র গঠনের জন্য ইসলাম যে ভূমিকা পালন করে, তা দিয়ে কোনো জাতি নিজেদের আত্মশুদ্ধি করতে পারে। কেননা, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন ও সামাজিক বন্ধন বজায় রাখার নীতি ইসলামের মৌলিক বৈশিষ্ট্য।

পবিত্র কুরআন ও হাদিস মারফত আমরা জানতে পারি, ইসলাম ব্যক্তিচরিত্রে যেসব গুণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে তা হলো চারিত্রিক আদর্শ। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের উৎকর্ষের জন্য নৈতিক আদর্শবোধই হলো যে কোনো নির্মল চরিত্রের মূল উৎস। কোনো জাতি যতক্ষণ পর্যন্ত এই নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলবে, তারা কখনও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে না।

আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করি। সমাজই আমাদের জীবনের প্রথম বিচরণ ক্ষেত্র। ইসলাম সমাজ গঠনে ব্যক্তির সৎ আচরণ, সচ্চরিত্র, সৎ স্বভাব এবং নম্রতা, কোমলতা ও সৌজন্যবোধের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। জীবনের প্রকৃত বিকাশ সমাজ সংগঠনের মাধ্যমেই প্রথম প্রকাশিত হয়। ব্যক্তির সামাজিক সম্পর্ক ও আচরণ যত উন্নত হবে, সামাজিক মর্যাদাও তত বেশি প্রকাশিত হবে।

আরও পড়তে পারেন-

সামাজিক জীবনে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের সঙ্গে সৎ স্বভাব ও আচরণের সঙ্গে কথাবার্তা ও আলাপ করো। তিনি আরও ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমাকে মানুষের সৎ স্বভাব, প্রকৃতি এবং আচরণের সৌন্দর্যরাশিকে পরিপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “আল্লাহর রাসূলেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ”।

আমাদের নবী করিমের (সা.) পূর্ণ জীবনটাই ছিল উত্তম আদর্শের প্রতীক। সমাজ জীবনে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সামাজিক সম্পর্ক উন্নততর হবে এবং সমাজ জীবনে নেমে আসবে অপার শান্তি ও কল্যাণ। শুধু তাই নয়, পার্থিব ও পারলৌকিক জীবন হবে সৌন্দর্যমণ্ডিত। মূলত ব্যক্তিচরিত্রই সমাজ কল্যাণের প্রথম সোপান। মানব চরিত্র সুষ্ঠু ও সত্যনিষ্ঠভাবে সমাজে বিকশিত হলে সমাজ হবে কল্যাণকামী।

আগেই বলেছি, ইসলাম শান্তি ও সুশৃঙ্খলার ধর্ম। সমাজে শান্তি ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে হলে আচার-ব্যবহারে ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্টতা ও নমনীয়তা দেখানো অপরিহার্য। আর এসবের মধ্যে নিহিত রয়েছে সামাজিক সৌজন্যবোধের পরিচয়।

ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভ্রাতৃত্ববোধের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা, প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই। মানবিক মূল্যবোধে একে অপরের জন্য সমানভাবে সহমর্মিতায় আবদ্ধ। ইসলাম তাই সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে, তুমি যা খাবে বা পরবে, তোমার প্রতিবেশীকে তা-ই দেবে। সামাজিক সুসম্পর্ক গড়া ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে এ নির্দেশ আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, যার হাত ও জিহ্বা থেকে আল্লাহর সৃষ্ট জীবরা নিরাপদ থাকে, সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলমান। তাই আমাদের সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে অবশ্যই সদাচার, নম্র ব্যবহার, সম্মান প্রদর্শন, পরনিন্দা পরিহার, সালাম, মোছাফাহা, সেবা ও সৎ পরামর্শ এবং পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা, মহানুভবতা ইত্যাদি সৎ গুণাবলির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এভাবেই আমরা পারি একটা সুন্দর ও সহনশীল শান্তিময় সমাজ গড়ে তুলতে।

দয়াময় আল্লাহ আমাদের সকলকে পারস্পরিক সম্মান, মর্যাদাবোধ, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রেখে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ ও দেশ গড়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম, সিইও- এম.জেড. ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।