Home ইসলাম নামাজ ও রোজার চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ যে কাজ

নামাজ ও রোজার চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ যে কাজ

।। মো. আবদুল মজিদ মোল্লা ।।

একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে পারস্পরিক সৌহার্দ্য রক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু মানবিক দুর্বলতা, স্বভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে কখনো কখনো সমাজে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ দেখা দেয়। ইসলাম বিরোধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানুষকে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের পথে চলার নির্দেশ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা ভাইদের মধ্যে শান্তি স্থাপন কোরো আর আল্লাহকে ভয় কোরো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। ’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১০)

বিরোধ নিরসন কেন প্রয়োজন

বিবাদ ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষত যখন কোনো পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তখন তারা নেতৃত্বের যোগ্যতা ও সুযোগ হারায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪৬)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।

তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কোরো : তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

বিরোধ নিরসনে করণীয়

পারস্পরিক বিরোধ নিরসনে কোরআনের নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

১. পারস্পরিক ভালোবাসা : হৃদ্যতা ও ভালোবাসা বিরোধ নিরসনের প্রধান অবলম্বন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হও। তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ে অবহিত করব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫১৯৩)

২. অন্যের ভালো-মন্দের বিবেচনা : মানুষ যদি পরস্পরের ভালো-মন্দের বিবেচনা না করে, তবে তাদের বিরোধ কোনোভাবেই মীমাংসা করা সম্ভব নয়। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুহাম্মদের প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম! তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ না করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে থাকে। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫০১৭)

আরও পড়তে পারেন-

৩. নিষ্পত্তির প্রত্যাশা : পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে উভয় পক্ষকে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৫)

৪. অনুকূল গুণাবলী ধারণ : যেসব গুণাবলী বিরোধ নিষ্পত্তির অনুকূল তা মুসলমানরা ধারণ করবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলে। যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা কোরো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কোরো এবং কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কোরো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

৫. প্রতিকূল স্বভাব ত্যাগ : মানুষের কিছু স্বভাব-চরিত্র পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে। মুমিন এমন স্বভাব-চরিত্র ত্যাগ করবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা পরস্পরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান কোরো না। তোমরা পরস্পরের পেছনে নিন্দা কোরো না।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)

উদ্যোগ নিতে পারে অন্যরা

যদি কোনো দুই পক্ষ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিরসনে আগ্রহী না হয়, তবে অন্য কোনো পক্ষ তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে পারে। কেননা বিরোধ নিরসন করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ, সাদাকার চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ কাজের কথা বলব না? সাহাবিরা বললেন- হ্যাঁ, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, তা হলো পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো ধ্বংসের কারণ।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯১৯)

আল্লাহ সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠনের তাওফিক দিন। আমিন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।