Home পরিবার ও সমাজ আত্মিয়তার সম্পর্কচ্ছেদের ভয়াবহ পরিণতি

আত্মিয়তার সম্পর্কচ্ছেদের ভয়াবহ পরিণতি

।। মুফতি আমিনুল ইসলাম ।।

মহান আল্লাহ পৃথিবীতে প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) ও প্রথম মানবী হযরত হাওয়া (আ.)-কে পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ করে পাঠান। পারিবারিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটে। ইসলাম পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার নির্দেশ দিয়ে এই বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

সম্পর্ক রক্ষার অর্থ

সাধারণত মানুষ তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক রক্ষা করে, যে তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এমন ব্যক্তি হলো প্রতিদান দানকারী। বিচ্ছিন্নতার পর যে সম্পর্ক রাখে সেই প্রকৃত আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রতিদানকারী আত্মীয় হক সংরক্ষণকারী নয়; বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা বজায় রাখে।’ (সহিহ বোখারি : ৫৯৯১)।

বিপর্যয় থেকে রক্ষা

পারিবারিক সম্পর্ক অটুট থাকলে মানুষ বহু ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। কেননা তারা পরস্পরকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়রা আল্লাহর বিধানের একে অন্য অপেক্ষা অধিক হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (সুরা আনফাল- ৭৫)।

বিচ্ছিন্নতার প্রতি হুঁশিয়ারি

আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারীদের প্রতি পবিত্র কোরআনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ তাদেরই অভিশাপ করেন আর করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন।’ (সুরা মুহাম্মদ- ২২-২৩)

সম্পর্কচ্ছেদের ভয়াবহ পরিণতি

আত্মীয়তা ও পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণতি ভয়াবহ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম- ২৫৫৬)।

আরও পড়তে পারেন-

পরিবার থেকে দূরত্ব নয়

পারিবারিক জীবনে নানা ধরনের সংকট তৈরি হয়। ভুল বোঝাবুঝি ও মতভিন্নতা দেখা দেয়। ইসলাম এমন সমস্যাগুলো উপেক্ষা করে পারিবারিক জীবনযাপনের নির্দেশ দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে, তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছো।’ (সুরা নিসা- ১৯)।

দায়িত্ব পালন

পারিবারিক ব্যয় নির্বাহকে অনেকে সামাজিক দায় মনে করেন। কিন্তু ইসলাম একে দায়িত্ব আখ্যা দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘লোকে কী ব্যয় করবে সে সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে। বলুন, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। উত্তম কাজের যা কিছু তোমরা করো না কেন আল্লাহ তো সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা আল বাকারা- ২১৫)।

সংকট দূরের উদ্যোগ নেওয়া

পারিবারিক জীবনে কোনো সংকট দেখা দিলে তা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা তার পরিবার থেকে একজন ও তার পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে; তারা উভয়ের নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা নিসা- ৩৫)।

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়; বরং পরিবারের সন্তানসন্ততিদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হলে পরিবারের অভিভাবকরা দ্রুততম সময়ে তা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।