Home ইসলাম রাসুল (সা.) যেভাবে প্রতিদিনের কল্যাণ চেয়ে দোয়া করতেন

রাসুল (সা.) যেভাবে প্রতিদিনের কল্যাণ চেয়ে দোয়া করতেন

।। জাওয়াদ তাহের ।।

আমরা যখন সারা দিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত বদনে শুয়ে পড়ি। আল্লাহ তাআলা আমাদের দুই চোখে নিদ্রা দিয়ে দেন। ঘুমের মাধ্যমে তিনি আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করে দেন। ভোরে তিনি আমাদের অর্ধমৃত ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন।

শরীরের মাঝে এক ধরনের উদ্যমতা আর সতেজতা কাজ করে। এই ঘুম থেকে আমরা পুনরায় জাগ্রত নাও হতে পারতাম। তিনি যদি চাইতেন তাহলে সেখানেই আমাদের রুহ কেড়ে নিতে পারতেন। আল্লাহ তাআলা নিজ কৃপায় আমাদের আবার জীবন দান করেন।

নতুন একটি ভোর উদয় হয় আমাদের জীবনে। একটি নতুন দিন। আমাদের জন্য একটি নতুন জীবন। আজকের দিনটি যদি চলে যায়, তা কখনো ফিরে আসবে না।

আমার জীবন থেকে মূল্যবান এই দিনটি চলে যাচ্ছে, অর্থাত্ আমার হায়াত থেকে আরো একটি দিন ক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষ হয়ে গেল। প্রতিটি দিন পেয়ে আমি আসলে আমার অর্জনের খাতা কতটুকু সমৃদ্ধ করতে পেরেছি তা আমার ভাবার বিষয়! শুধুমাত্র দিন আসে আর যায় এতটুকুই! না আমার জীবনের খাতা ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হচ্ছে। একটি নতুন দিন, একটি নতুন জীবন। টিক টিক করে আমার জীবনের ঘড়ি চলে যাচ্ছে। মৃহূর্তের জন্য তা থেমে নেই।

কিন্তু আমি কি আমার আমলের বাগান ধীরে ধীরে সাজাতে পেরেছি!

প্রতিদিন প্রভাতে রাসুল (সা.) ওই দিনের কল্যাণের জন্য দোয়া করতেন। তিনি আমাদের সেই দোয়া শিখিয়েছেন, যেন আমরা আল্লাহর কাছে ওই দিনের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ ভোরে উপনীত হলে যেন বলে—‘আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামিন। আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খয়রা হা-জাল ইয়াওমি ফাতহাহু ওয়া নাসরাহু, ওয়া নুরাহু, ওয়া বারাকাতাহু, ওয়া হুদা-হু। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা-ফিহি, ওয়া মিন শাররি মা-বাদাহু।’

অর্থ : আমরা ভোরে উপনীত হলাম এবং জগতের রব আল্লাহর রাজ্যও ভোরে উপনীত হলো। ‘হে আল্লাহ, আমি আজকের দিনের কল্যাণ, বিজয়, সাহায্য, আলো, বরকত ও হিদায়াত কামনা করছি। আর আজকের দিনের অমঙ্গল ও তার পরের অমঙ্গল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাইছি।’ যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখনো তাই বলবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৪)

আরও পড়তে পারেন-

হাদিসের প্রতিটি নিজের জন্য কল্যাণের প্রার্থনা। নিজের জীবনকে ভালোর পথে নেওয়ার কামনা। প্রতিটি শব্দের মধ্যে আছে আমাদের জন্য শিক্ষা। আল্লাহ তাআলা যে আমাকে নতুন একটি দিন দিয়েছেন এটি আমার জন্য বড় নিয়ামত। আমি হাজারো চেষ্টা করলে এ দিনটি আর ফিরে আসবে না। এই সময় পেয়ে যদি আমি আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করতে না পারি, তাহলে কেউ আমাকে সমৃদ্ধ করবে না। দুনিয়ার জীবনের জন্য আমরা কত কিছুই তো করি।

কিন্তু যে জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই, সে জীবনের জন্য আমি কতুটুুকু প্রস্তুতি নিয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলা সে জীবনের কথা বারবার আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আমরা যেন আমাদের লক্ষ ভুলে না যাই। গন্তব্য থেকে অন্য পথে চলে না যাই। প্রতি দিনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে আমি যেন আমার জীবনপ্রদীপ উজ্জ্বল করতে পারি।

এ জন্য আমার ওপর কর্তব্য প্রতিদিনের ভালো-মন্দ কাজের হিসাব নেওয়া। আজকে আমার দ্বারা কী কী ভালো কাজ হয়েছে, আর কী কী খারাপ কাজ হয়েছে। ভালো কাজের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আর খারাপ কাজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এবং এসব থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

একটি নতুন দিন পেয়েছি। এর কৃতজ্ঞতাসরূপ প্রতিটি অঙ্গের মাধ্যমে ভালো কাজ করার চেষ্টা করা। প্রতিটি অঙ্গের মাধ্যমে সদকা করা। হাদিসে প্রতিটি অঙ্গের মাধ্যমে কিভাবে সদকা করব তার বিবরণও এসেছে। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আদম সন্তানের শরীরের প্রতিটি অস্থি প্রতিদিন নিজের ওপর সদকা ওয়াজিব করে। কারো সঙ্গে সাক্ষাতে তাকে সালাম দেওয়া একটি সদকা। সত্ কাজের আদেশ একটি সদকা, অন্যায় থেকে নিষেধ করা একটি সদকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা একটি সদকা। পরিবার-পরিজনের দায়-দায়িত্ব বহন করা একটি সদকা। আর চাশতের দুই রাকাত নামাজ এসব কিছুর পরিপূরক হতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১২৮৫)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।