।। মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ।।
গীবত করা একটি জঘন্য অপরাধ। এ অপরাধের কারণে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয় । গীবত ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক জিনিস। গীবতের মাধ্যমে ব্যক্তি অপরের ক্ষতি করার সাথে সাথে নিজেরও ক্ষতি করে। নিজেকে কবিরা গুনাহে লিপ্ত করে। এই গীবতের মাধ্যমে একজন মানুষ আরেকজনের মান-মর্যাদা সব বিনষ্ট করে ফেলে।
গীবত হলো পরণিন্দা করা , কুৎসা রটানো, দোষারোপ করা , কোনো ব্যাক্তির অগোচরে অন্যের সাথে তার দোষ বর্ণনা করা ।
হাদীসের পরিভাষায় গীবতের পরিচয়
হযরত আবূ হুরাইরা (রাযি.) কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে? লোকেরা বলল, ’আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা। বলা হল, ’আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কী? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, ’’তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা ক’রে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে। (মুসলিম ৬৭৫৮)।
বর্তমান সমাজে গীবত রীতিমতো মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে গেছে । মানুষ একে অন্যের গীবত করাটা একেবারে স্বাভাবিক মনে করে ।
গীবত নামক মহামারী থেকে নিজেকে বাঁচানো
একজন মুমিনের জন্য আবশ্যিক বিষয়। প্রয়োজন একটু সচেতনতা, আল্লাহর ভয়, গীবত এর ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরণ করা। গীবত যে মজলিসে চলে হেকমতে সেখান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াই কাম্য।
গীবত এতটাই মারাত্মক যে , আগুন যেভাবে কোনো জিনিসকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয় ঠিক এভাবেই গীবত আপনার সকল নেক আমলকে ধ্বংস করে দেয় ।
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
গীবতের ভয়াবহতা নিম্নে বর্ণিত আয়াত- হাদীস থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় ।
গীবত এতটাই জঘন্য যে এটাকে পবিত্র কোরআনে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে ।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আর তোমরা একজন অন্যজনের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান কর না এবং একে অপরের অসাক্ষাতে নিন্দা কর না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? প্রকৃতপক্ষে তোমরা তো এটাকে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী পরম দায়ালু।’ (সুরা হুজুরাত-১২)।
গীবতকারীর জন্য দুনিয়াতে লাঞ্চনার পাশাপাশি আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি।
হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘মেরাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল ! এরা কারা? তিনি বললেন, ‘এরা সেসব লোক যারা মানুষের গোশত খেতো অর্থাৎ, মানুষের গীবত করত এবং মানুষের ইজ্জতের উপর হামলা করত এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো। (সুনানে আবু দাউদ- ৪৮৭৮)।
আল্লাহ তাআলা সমস্ত মুসলিম জাতিকে গীবত করা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন । এবং এর কঠিন পরিণতি ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। আমীন!
– মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল- জামিয়া ইসলামিয়া ইমদাদুল উলূম নলজুরী, গোয়াইনঘাট, সিলেট, চেয়ারম্যান – জাফলং ভিউ রেষ্টুরেন্ট, প্রোপাইটার- আব্দুল মজিদ এন্ড সন্স, সভাপতি- বৃহত্তর জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতি।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ