Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আর কত দেরি!

ফিলিস্তিনিদের মুক্তি আর কত দেরি!

।। ছিবগাতুল্লাহ আলিফ শাহ ।।

ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে ফিলিস্তিন। ভৌগোলিক অবস্থান ও তিনটি প্রধান ধর্মের সূতিকাগার হওয়ায় স্বভাবতই এই ভূখণ্ডটির রয়েছে ধর্ম, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও রাজনীতির এক দীর্ঘ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইতিহাস। আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের এই সম্পূর্ণ ভূখণ্ড অথবা এর কোন কোন অংশ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত ও শাসিত হয়েছে। এদের মধ্যে যেমন অগ্নিপূজারী পারস্য সাম্রাজ্য রয়েছে তেমনি রয়েছে খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য। অতীতের প্রাচীন মিশরীয়, আরামীয়, গ্রিকরা তো আছেই। কিন্তু ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড মুসলমানদের করতলগত হওয়ার পর থেকে এই ভূখণ্ডে শান্তির হাওয়া বইতে থাকে। একে একে খোলাফায়ে রাশেদীন, উমাইয়া, আব্বাসীয়, সেলজুক ও ফাতিমিরা এই ভূখণ্ড শাসন করে।

কিন্তু কুচক্রী মহল কখনোই বসে থাকেনি। তারা সুযোগের সন্ধানে ছিল। একটি সময় মুসলিম শাসকদের অন্তর্কোন্দলের কারণে তাদের কাছে সুযোগটি এসেই পড়ল। ১০৯৫–১২৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপের খ্রিস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের সাথে একের পর এক যুদ্ধ বাঁধিয়ে চলে— যা ক্রুসেড নামেই ইতিহাসে প্রসিদ্ধি পায়।

ফলস্বরূপ, ১০৯১ খ্রিস্টাব্দে ক্রুসেডাররা সমগ্র সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম দখল করে নেয়। তারা জেরুজালেম নগরীতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সেদিন মুসলমানদের রক্তে প্লাবিত হয় পবিত্র আল কুদসের ভেতর ও বাহির। ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম বীর সেনানায়ক সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর হাত ধরে পুনরায় জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে আসে।অতঃপর আইয়ুবী, মামলুক এবং উসমানী সাম্রাজ্য এই ভূখণ্ড শাসন করে।

আরও পড়তে পারেন-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানী সাম্রাজ্য পরাজয় বরণ করলে বিজয়ী বাহিনী তাদের এলাকাসমূহকে নিজেদের মাঝে বণ্টন করে নেয়। যার দরুন ব্রিটেন ফিলিস্তিন অঞ্চলের দায়িত্বভার নেয়।তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর ১৯১৭ সালে একটি ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্রের ধারণা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন। যা “বেলফোর ঘোষণা” নামে পরিচিত।এই অন্যায্য বেলফোর ঘোষণার মধ্য দিয়েই সর্বপ্রথম ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভাবনাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অথচ এ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিন ভূমির অধিবাসীদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি মুসলিমরা নিজেদের ভূমিতে নিজেরাই পরবাসীর মতো জীবন অতিবাহিত করছে।

জায়নবাদীরা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে এই ভূখণ্ড দখল করতে করতে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। ফিলিস্তিনি মুসলিমরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হতে হতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বেদনা প্রকাশ করার ভাষাটুকুও তাঁরা হারিয়ে ফেলেছে। গাজার সামরিক প্রতিরক্ষা সংগঠন হামাসের সাম্প্রতিক হামলা সেই নিষ্পেষণেরই জবাব।

রাতের পর দিন আসে, যুগের পর যুগ আসে, পথ হারানোর পর পথিক পথও খুঁজে পায়, এটাই নিয়ম। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিয়তি যেন এর ব্যতিক্রম। শান্তি যেন তাদের কাছে ধরা দিতেই চায় না! যুদ্ধ ও গণহত্যাই তাদের নিত্য সঙ্গী। তাদের মানবাধিকারের কোনো মূল্যই যেন নেই পৃথিবীর কাছে। বিশ্বের হর্তাকর্তারা যেন ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রেই দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন।

২০০৮ সাল থেকে গাজা উপত্যকাকে ইসরাইল উন্মুক্ত কারাগার হতে বাধ্য করেছে। বিশ্ববিবেক থমকে আছে। ১৯৪৮ সালের ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণা, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ, ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি— এসবের কোনোটিই ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর জায়নবাদী ইসরাইলের গণহত্যা বা জাতিগত নিধনযজ্ঞ বন্ধ করতে পারেনি। হামাসের এবারের হামলা কি পারবে সেই অসাধ্য সাধন করতে? আসবে কি ফিলিস্তিনিদের সেই কাঙ্ক্ষিত মুক্তি?

লেখক: শিক্ষার্থী, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।