Home ইসলাম যেভাবে কোরআনের প্রেমে পড়েছিলেন জাহেলি যুগের কবি

যেভাবে কোরআনের প্রেমে পড়েছিলেন জাহেলি যুগের কবি

।। আমজাদ ইউনুস ।।

জাহেলি যুগে উকাজের মেলায় প্রতিবছর যে কবিতা প্রথম স্থান লাভ করত সেই কবিতা মিহি কাপড়ে সোনার হরফে লিখে দেশের সর্বোত্তম উপাসনা-গৃহ পবিত্র কাবার গায়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো। এভাবে সাতটি কবিতা সাত বছরে প্রথম স্থান লাভ করে এবং এই সাতটি কবিতার সংকলনই ‘সাবআ মুআল্লাকা’, এর অর্থ সাতটি ঝুলন্ত কবিতা। এর অপর নাম মুজহহাবাত (স্বর্ণমণ্ডিত) বা সুমুত (গলার মালা)।

চতুর্থ মুআল্লাকার কবি ছিলেন লবিদ বিন রবিয়া।

পুরো নাম আবু আকিল লবিদ বিন রবিয়া বিন মালিক। তিনি আমির গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন । ছোটবেলা থেকে বদান্যতা, বীরত্ব ও কবিত্ব এক আদর্শ আঙিনায় বেড়ে উঠেছেন। বেদুইন চরিত্রের সাহস, বদান্যতা, নির্ভীকতা, দুর্ধর্ষতা প্রভৃতি গুণের সমন্বয় যেমন ছিল তাঁর জীবনজুড়ে; তাঁর কবিতার চরণেও এসব গুণের পরিপূর্ণ ঝলক দেখা যেত।

তিনি বিস্তৃত আকাশ থেকে উদারতার পাঠ নিয়েছেন। দুই হাত ভরে দান করতেন। তাই ‘দরিদ্রবান্ধব রাবিয়া’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

প্রাগৈতিহাসিক ও ইসলামিক যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন।

দুই যুগের ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতায় পুষ্ট ছিল তাঁর জ্ঞানভাণ্ডার। একদিনের ঘটনা। অসামান্য কাব্যপ্রভিতা ও মনের মাধুরীর মিশেলে রচনা করলেন একটি অমর কাব্য। তারপর সেটি নিয়ে পবিত্র কাবা ঘরে ঝুলিয়ে দিলেন। সেদিন কেউ একজন সুরা বাকারাহর কিছু আয়াত কাবা ঘরে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

পরের দিন লবিদ বিন রবিয়া কাবা ঘরে এসে এ আয়াত দেখে অবাক বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁর মন-মজ্জায় এ আয়াত বিশ্বাসের রেখাপাত ও আলোর ছায়াপাত করে যায়। তিনি চমকিত ও বিস্মিত হলেন। কোরআনের অপূর্ব আলঙ্কারিক সৌন্দর্য দেখে অভিভূত ও পরাভূত হলেন। তিনি অকুণ্ঠ কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করলেন। একটি চরণ লিখেছেন শুধু। যেমন :

‘সকল প্রশংসা-বন্দনা ওই সত্তার যিনি বড় দয়ালু মহান মরণের আগে আমায় করালেন ইসলামের সুধা পান।
অনিত্য সব কিছু, এক আল্লাহ-ই অক্ষয় সর্বসুখ ধ্বংসশীল, সন্দেহ নেই নিশ্চয়ই।’

তাঁর এই কবিতা সম্পর্কে রাসুল (সা.) মন্তব্য করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে সঠিক বাক্য, যা কোনো কবি বলেছেন তা হলো, লবিদের এ পঙক্তি : ‘সাবধান, আল্লাহ ছাড়া সব জিনিসই বাতিল ও অসার।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৮৪১)

একসময় তিনি মক্কা ছেড়ে কুফায় চলে যান। কুফায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন। কোরআনই তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিল। তখন অর্ধজাহানের খলিফা ওমরের শাসনকাল। খলিফা ওমর আল খাত্তাব (রা.) আরবি কবিতা কতটুকু ইসলামী ভাবধারায় সমৃদ্ধ হয়েছে, তা জানার জন্য সব কবিকে কবিতা লেখার আদেশ দেন এবং চিঠি পাঠান। সব কবির কাছে খলিফার বার্তা পাঠানো হলো। কবি লবিদের কাছেও এ বার্তা এলো। এই আদেশের প্রত্যুত্তরে তিনি সুরা বাকারাহর কতিপয় আয়াত লিখে তার পাশে লিখলেন, ‘এই সূর্য যাবতীয় প্রদীপকে নিষ্প্রভ করে দিয়েছে।’

ইসলাম তাঁর হৃদয়ের কত গহিনে রেখাপাত করেছিল, কোরআনের স্বর্গীয় জ্যোতিতে তাঁর মন কত জ্যোতির্ময় হয়েছিল এই বাক্যের ভাবার্থে তা বোঝা যায়। জীবনের শেষ সময়ে কাব্যচর্চা ত্যাগ করে তিনি কোরআনচর্চায় ব্রতী হয়েছেন। ৪১ হিজরিতে এই কোরআনপ্রেমিক কবি মহান রবের সাক্ষাতে যাত্রা করেন।

লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।