Home ইসলাম আত্মীয়তার বন্ধন কি নাজাতের মাধ্যম হবে

আত্মীয়তার বন্ধন কি নাজাতের মাধ্যম হবে

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

পরকালে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির একমাত্র মাধ্যম হলো আমল। আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে অথবা বন্ধুত্বের উছিলায় শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, মহানবী সা: একদা প্রথমে স্বীয় বংশের ঊর্ধ্বতন লোকদেরকে ডেকে বললেন, হে কুরাইশরা! তোমরা নিজেদের জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও। আল্লাহর মোকাবেলায় আমি তোমাদের জন্যে কোনো উপকার করতে পারব না। তারপর পরের স্তরের লোকদের ডেকে বললেন- হে আবদে মান্নাফের বংশধররা! আল্লাহর মোকাবেলায় আমি তোমাদের জন্যে কোনো উপকার করতে পারব না। তারপর স্বীয় চাচাকে ডেকে বললেন- ‘হে আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব! আল্লাহর মোকাবেলায় আমি আপনার জন্যে কোনো উপকার করতে পারব না।’ তারপর স্বীয় ফুফুকে ডেকে বললেন, ‘হে রাসূলের ফুফু সুফিয়া!

আল্লাহর মোকাবেলায় আমি আপনার জন্যে কোনো উপকার করতে পারব না। সর্বশেষে স্বীয় কন্যা ফাতিমাকে ডেকে বলেন, হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমা! আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নিয়ে যাও; কিন্তু মনে রেখো পরকালে আমি আল্লাহর কাছে তোমার জন্য কোনো উপকার করতে পারব না। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহর সা:-এর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কে আছে বলে পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে না। বরং আমলের বিনিময়েই নাজাত পাওয়া যাবে (সহিহ বুখারি)। হজরত আয়েশা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা রাসূলুল্লাহ সা: বলেন- ‘হে মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতিমা! হে আবদুল মুত্তালিবের মেয়ে সুফিয়া! হে বানি আবদুল মুত্তালিব! আল্লাহর কাছে আমি তোমাদের জন্যে কোনো উপকারের অধিকার রাখব না। তবে হ্যাঁ আমার কাছে যে সম্পদ আছে তা থেকে তোমরা যা ইচ্ছা চেয়ে নিয়ে যাও (আহমাদ, ৬/১৮৭, মুসলিম ১/১৯২)। হজরত কাবিসাহ ইবন মুখাবিক রা: এবং জুবাইর ইবনে আমর রা: বলেন- যখন ‘ওয়া আনজির আশিরাতাকাল আকরাবিন- আপনার নিকটাত্মীয়দের জাহান্নামের ভয় দেখান’ নাজিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ সা: একটি পাহাড়ের উপর আরোহণ করেন, যার চূড়ার উপর পাথর ছিল। সেখান থেকে তিন ডাক দিয়ে বলতে শুরু করেন। হে বানি আবদে মানাফ! আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আমার ও তোমাদের উপমা ওই লোকটির মতো যে শত্রু দেখল এবং দৌড়ে গিয়ে নিজের লোকদের সতর্ক করতে এলো, যাতে শত্রুরা তার আগে সেখানে পৌঁছে আক্রমণ করতে না পারে এবং তিনি তাদের ডাকতে থাকেন। হে লোকজন! (আহমাদ ৫/৬০), মুসলিম ১/১৯৩, নাসাঈ ৬/৪২৩)।

আরও পড়তে পারেন-

হজরত নূহ আ: আল্লাহ তায়ালাকে বলেন- হে আমার রব! এটাতো প্রকাশ্য ব্যাপার যে, আমার পুত্র আমার পরিবারভুক্ত। আর আমার পরিবারকে রক্ষা করার আপনি ওয়াদা করেছিলেন এবং এটা অসম্ভব ব্যাপার যে, আপনার ওয়াদার খেলাপ হবে। তাহলে আমার এই ছেলেটি কী করে কাফিরদের সাথে ডুবে মরল। আল্লাহ তায়ালা উত্তরে বলেন- হে নূহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। সে অসৎকর্মপরায়ণ (সূরা হুদ: ৪৫-৪৬)। হজরত নূহ আ:-এর স্ত্রী এবং হজরত লুত আ:-এর স্ত্রী ছিলেন কাফির। তারা স্বীয় স্বামীর প্রতি ঈমান আনেনি। তাই স্বামী নবী হয়েও তাদেরকে বাঁচাতে পারবেন না।

মহানবী সা:-এর চাচা আবু তালেব স্নেহের ভাতিজাকে খুবই সাহায্য সহানুভূতি করেছিলেন। সর্বক্ষেত্রে তিনি তার সহযোগিতা করেছিলেন এবং আন্তরিকভাবে তাঁকে ভালোবাসতেন। তার এ ভালোবাসা ছিল আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে প্রকৃতিগত। এ ভালোবাসা শরিয়ত ও দ্বীনের ভিত্তিতে ছিল না। যখন তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন রাসূলুল্লাহ সা: তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তিনি তাকে ঈমান আনার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন; কিন্তু তার তাকদিরের লিখন এবং আল্লাহর ইচ্ছা জয়যুক্ত হয়। তিনি ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান এবং কুফুরির ওপর অটল থাকেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন এবং তিনি ভালো করে জানেন কারা সৎপথের অনুসারী (সূরা কাসাস : ৫৬)। আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বারণ করে বলেন, নবী ও অন্যান্য মু’মিনের জন্য জায়েজ নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে যদিও তারা আত্মীয় হোক না কেন। (সূরা তাওবাহ : ১১৩)।

লেখক: প্রধান ফকিহ,আলজামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।