দেশের অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়ায় গতকাল (রবিবার) শূরার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সাবেক মুহতামিম মাওলানা উবায়দুল্লাহ হামজার অনুসারীদের বাধায় তা হতে পারেনি।
এই ঘটনায় দেশের শীর্ষ আলেম ও পটিয়া মাদরসার শূরা সদস্যরা রবিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে শীর্ষ আলেম ও শূরা সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হেফাজতে ইসলামের আমীর ও জামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী, জামিয়া ওবায়দিয়া নানুপুর মাদ্রাসার মহাপরিচারক আল্লামা শাহ সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, ঢাকা বসুন্ধরা ইসলামিক রিচার্স সেন্টারের পরিচালক আল্লামা মুফতি আরশাদ রহমানী, বগুড়া জামিল মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা আবদুল হক হক্কানী, জামিয়া ইসলামিয়া জিরির মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ খোবাইব, শোলকবহর মাদ্রাসার নির্বাহী পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ হারুন, আলহাজ্ব মাওলানা আমান উল্লাহ, আলহাজ্ব এনামুল হক, মাওলানা হাজী মুহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ।
বৈঠক শেষে শূরা অনুষ্ঠিত হতে না পারার কারণ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতে গৃহীত সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে সংবাদপত্রের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গণমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-
“জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সাবেক মুহতামিম মাওলানা উবায়দুল্লাহ হামজার লেলিয়ে দেয়া বহিরাগত গুণ্ডা বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে পটিয়া মাদ্রাসার চলমান সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষে শূরা বৈঠক করতে না দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও শূরা কমিটির সদস্যবৃন্দ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শূরার সদস্য ও শীর্ষ উলামায়ে কেরামগণ আজ (১০ ডিসেম্বর) রবিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকে পটিয়া মাদ্রাসার মজলিসে এদারির সদস্য ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, পরবর্তী শূরা অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিগত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত শূরা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পটিয়া মাদ্রাসার যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালিত হবে। মাদ্রাসায় পড়ালেখা যথারীতি চলমান থাকবে, সর্বাবস্থায় মাদ্রাসা খোলা থাকবে, ইত্তেহাদ ও হাইয়াতুল উলইয়ার পরীক্ষা মজলিসে এদারী ব্যবস্থা করবেন। আগামী শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও শূরা সদস্যগণ আজকের শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে বাধাদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সাবেক মুহতামিম মাওলানা উবায়দুল্লাহ হামজা পটিয়া মাদ্রাসার বিরুদ্ধে লাগাতার মিথ্যাচার, সন্ত্রাসী হুমকিসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মাদ্রাসার প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্বনামধন্য শিক্ষক ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করছেন। মাদ্রাসার ব্যাংক একাউন্ট ছলচাতুরি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। একই সাথে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মাদ্রাসা অভিমুখী ছাত্র, শুভাকাঙ্খিী, শিক্ষক ও শীর্ষ আলেমদেরকে বাধাদান ও নানা সন্ত্রাসী হুমকি দিয়ে চলেছেন। যার সর্বশেষ নজির আজকের (রবিবার) শূরা বৈঠকে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া শীর্ষ আলেম ও শূরা সদস্যদেরকে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বাধা দেওয়ার ঘটনা।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
তারা বলেন, দু:খজনকভাবে মাওলানা হামজা ও তার গুণ্ডা বাহিনীকে মাদ্রাসাবিরোধী এসব অপতৎপরতা ও সন্ত্রাসী কাজে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে আলোচিত এক শিল্পগোষ্ঠি ও পটিয়ার স্থানীয় প্রশাসন। জনগণের দান-সদকা ও স্বত:স্ফূর্ত সহযোগিতায় পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী একটি শীর্ষ স্তরের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন বৈরি তৎপরতা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মাওলানা উবায়দুল্লাহ হামজা কর্তৃক সৃষ্ট চলমান সংকটে পটিয়ার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন দু:খজনকভাবে দ্বীমুখী ভূমিকা পালন করছে। গত ৫ ডিসেম্বর কিছু ছাদ্মবেশি অনুপ্রবেশকারীর বিশৃঙ্খলা চেষ্টার উপর ভর করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মজলিসে এদারির কাছে আজকে শূরা বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ করে। তার প্রেক্ষিতে শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও শূরা সদস্যগণ শূরা বৈঠকের উদ্যোগ নেয়। অথচ আমরা দেখতে পেলাম স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পরোক্ষভাবে সাবেক মুহতামিম মাওলানা উবায়দুল্লাহ হামজার পক্ষ নিয়ে শীর্ষ আলেম ও শূরা সদস্যদেরকে মাদ্রাসায় প্রবেশে বাধাদান করে।
শীর্ষ উলামায়ে কেরাম ও জামিয়া ইসলামী পটিয়ার শূরা সদস্যগণ মাওলানা উবায়দুল্লাহ হামজার প্রতি অবিলম্বে মাদ্রাসাবিরোধী মিথ্যাচার, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, হুমকি-ধমকি দেওয়া বন্ধ করা, মাদ্রাসার ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা থেকে বিরত থাকাসহ দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। একই সাথে তারা সংশ্লিষ্ট শিল্পগোষ্ঠি ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় যে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং মাদ্রাসাবিরোধী তৎপরতায় জড়িত ওবায়দুল্লাহ হামজার একতরফা পক্ষাবলম্বন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
তারা বলেন, দ্বীনি মাদ্রাসা পরিচালনায় সাধারণ জনতার পাশাপাশি যে কোন সম্পদশালী ও দানবীরদের নি:শর্ত সহযোগিতা কাম্য। পাশাপাশি আমরা পটিয়ার স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিও কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তার বিরুদ্ধে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাওহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে মোকাবেলা করবে, ইনশাআল্লাহ।” – বিজ্ঞপ্তি।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ