Home আন্তর্জাতিক বিলকিস বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিজেপি কতটা অস্বস্তিতে?

বিলকিস বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিজেপি কতটা অস্বস্তিতে?

‘আজ আমার কাছে সত্যিই নতুন বছর। স্বস্তি পেয়ে কেঁদেছি। দেড় বছর পরে আমি হেসেছি। আমার সন্তানদের জড়িয়ে ধরেছি। একটা বড় পাথর যেন আমার বুক থেকে সরে গিয়েছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি,’ ভারতের শীর্ষ আদালতের রায়ের পর এমনটাই বলছিলেন আবেদনকারী বিলকিস বানো। সোমবার তার আইনজীবী শোভা গুপ্তার মাধ্যমে তার বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমের সামনে রেখেছিলেন তিনি।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলায় ১১ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের সাজা কমানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গুজরাটের বিজেপি সরকার, সেই সিদ্ধান্তকে সোমবার খারিজ করে দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ।

১১জনকে জেলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি গুজরাট সরকারের ওই সাজা কমানোর কোনো এক্তিয়ারই ছিল না, এ কথাও জানিয়েছে ভারতের শীর্ষ আদালত।

‘লড়াইটা দীর্ঘ দিনের’
এই রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় দানের পর বিলকিস বানোর আইনজীবী শোভা গুপ্তা, বৃন্দা গ্রোভার এবং ইন্দিরা জয়সিং এই রায়কে ‘ইতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানান।

‘বিলকিস বানোর লড়াইটা দীর্ঘ দিনের। তার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আমি স্বাগত জানাই। এই ঘটনাটা কিন্তু হঠাৎ সংগঠিত কোনও অপরাধমূলক কাজ নয়। এটা হঠাৎ হয়নি। এটা পরিকল্পিত একটা অপরাধ। ওই অপরাধীরা জেল থেকে বেরোনোর পর তাদের ঘিরে তীব্র উল্লাস হয়েছে। তাদের কোনও অনুতাপ ছিল না কিন্তু,’ বলেছেন আইন বিশেষজ্ঞ স্মিতা চক্রবর্তী। তিনি কারা আইন সংশোধন নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন।

তবে, সমাজকর্মী শবনম হাসমি কিন্তু খুব একটা আশার আলো এখনই দেখতে পাচ্ছে না। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আদালত থেকে তো উল্টো রায়ও আমরা পেয়েছি। সুতরাং এর পরেও এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তা হলফ করে বলতে পারিনা। তবে এই রায় সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, এটুকু বলতে পারি।’

আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই স্বাগত জানিয়েছন এই রায়কে, কেউ বা বলেছেন, ‘বিজেপির কাছে শীর্ষ আদালতের কড়া বার্তা গিয়েছে’। এই বার্তাই কি যথেষ্ট ভবিষ্যতে এ জাতীয় ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়?

সে বিষয়ে বলতে গিয়ে মানবাধিকার নেত্রী কবিতা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘কোনো গাফিলতির ক্ষেত্রে আদালত যে পদক্ষেপ নিতে পারে, সেই বার্তা যে গিয়েছে এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। যারা এতদিন জেলের বাইরে ছিলেন, তাদের ফিরে যেতে হবে, তারপর দেখতে হবে কী হয়।’

অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই রায় নিয়ে বিজেপিকে তোপ দাগছে বিরোধী রাজনৈতিক দল। যেমন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী সরাসরি নিশানা করেছেন বিজেপিকে। সমাজ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটারে) তিনি লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় ফের দেশকে জানিয়ে দিল কারা অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিশানায় রেখেছেন মোদি সরকারকেই। তাহলে সুপ্রিম কোর্টের রায় বিজেপি সরকারকে সত্যিই অস্বস্তিতে ফেলল কি?

সুপ্রিম কোর্টের রায়
বিচারপতি বিভি নাগরত্ন ও উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ তাদের রায়ে বলেছেন, ‘দোষীদের মুক্তি দেয়া হবে কি না সে সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা ও দোষীদের সাজা কমানোর করার কোনো ক্ষমতেই নেই গুজরাট সরকারের। তারা এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছে।’

সিআরপিসি-র ধারার উল্লেখ করে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, গুজরাট সরকারের এক্তিয়ারে এটা পড়ে না। রায়ে বলা হয়েছে, ‘সিআরপিসি-র ৪৩২ (৭ বি) ধারা অনুযায়ী এই কাজের জন্য গুজরাট সরকার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নয়। মামলার শুনানি মহারাষ্ট্রে হয়েছিল। অপরাধীদের সাজা মকুবের ক্ষমতা মহারাষ্ট্রেরই আছে।’

একই সাথে এও বলা হয়েছে, গুজরাট সরকার ‘সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে দোষীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই কাজ করেছে।’

শুধু তাই নয়, সাজা কমানোর জন্য ‘তথ্য গোপন’ ও ‘মিথ্যার আশ্রয়’ নিয়ে আবেদন করেছিল এক অপরাধী। তৎকালীন বিচারপতি অজ্য় রাস্তোগির বেঞ্চ গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দেয় বিষয়টি খতিয়ে দেখার। কিন্তু অপরাধীদের মুক্তির কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে গুজরাট সরকার যা করেছে তা ‘প্রতারণার’ সামিল বলেও মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১১ জন অপরাধীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন অস্বস্তিতে বিজেপি সরকার?
গুজরাটের গোধরার জেল থেক ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট গণধর্ষণ এবং খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওই ১১ জন অপরাধী ‘মুক্তি’ পান। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের উদযাপন উপলক্ষে সে সময়ে সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দেয়া হয়েছিল।

ওই ১১ জন অপরাধীও এই তালিকায় ছিলেন। তাদের সাজা কমানোর পক্ষে গুজরাট সরকারের যুক্তি ছিল দোষীরা ইতিমধ্যে ১৪ বছর জেল কেটেছেন। তাদের বয়স, জেলে থাকাকালীন আচার-আচরণ, অপরাধের ধরন দেখে সাজা কমানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট তার বক্তৃতায় নারীদের সম্মানের বিষয়টির উপর জোর দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, নারীদের অসম্মানের বিষয়টি অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এই বিষয়টি তাকে যন্ত্রণা দেয়।

এরপরেই বিরোধীরা সরব হন প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিই নারীদের সম্মানের কথা ভাবেন তাহলে ঠিক তার আগের দিন কীভাবে বিলকিস বানোর ধর্ষকরা ছাড়া পেল।

এদিকে, জেল থেকে বেরনোর পরই তাদের সংবর্ধনা দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা। ফুলের মালা পরিয়ে ও মিষ্টি খাইয়ে তাদের স্বাগত জানানো হয়।

বিজেপি বিধায়ক সিকে রাউলজি তাদের তাদের ‘সংস্কারী ব্রাহ্মণ’ বলে প্রশংসাও করেন। সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তির পর থেকেই অনেকেই সরব হয়েছিলেন কিভাবে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্তরা ছাড়া পেলেন এই প্রশ্ন তুলে।

সমাজকর্মী, আইনবিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট নাগরিকরাও সরব হন। সরব হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও। মুক্তির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়। বিলকিস বানোও দ্বারস্থ হন শীর্ষ আদালতের।

শুনানি শুরু হলে কেন্দ্র সরকার ও গুজরাট সরকারের কাছে এই সংক্রান্ত নথি চেয়ে পাঠানো হয়। অভিযোগ, রাজ্য সরকার সেই নথি দিতে চায়নি। পরে অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের অনড় অবস্থান দেখে ১১ জনের মুক্তি সংক্রান্ত নথি জমা দেয় তারা। শুনানি চলাকালীন একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল গুজরাট সরকারকে। সুপ্রিম কোর্ট এও জানতে চেয়েছিল, কেন বেছে বেছে ওই ১১ জনকেই মুক্তি দেয়া হলো সে সময়ে।

গত বছর এই রায়ের শুনানি শেষ হয় এবং গতকাল (সোমবার) ছিল তার রায় দান।

বিরোধীদের বক্তব্য
সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পর থেকেই বিজেপিকে নিশানায় রেখে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুমতাজ পটেল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এই ঘৃণ্য কাজের সাথে যুক্ত অপরাধীদের ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছিল ছাড়া পাওয়ার পর। অথচ বিলকিস বানো ও তার পরিবার কোনোদিন এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে পারেননি। ক্রমাগত তাদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। ওই অপরাধীরা কোনও ক্ষমার যোগ্য নয়।’

অন্যদিকে রাহুল গান্ধি সরাসরি তোপ দেগেছেন বিজেপিকে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী মুনাফার জন্য ন্যায়কে হত্যা করার প্রবৃত্তি গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। বিলকিস বানোর লড়াই অহঙ্কারী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয়ের প্রতীক।’

সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট বিলকিস বানোর ঘটনাটিকে ‘সবচেয়ে বর্বর ও ঘৃণ্য অপরাধ’ বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। বিজেপির উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কিভাবে এই অপরাধীদের কেউ মুক্তি দিতে পারে?

তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র বিলকিস মামলায় অন্যতম আবেদনকারী ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তিনি সমাজ মাধ্যমে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বিলকিস বানোকে অবশেষে বিচার দিয়েছে। যখন শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছিল- তোমার কী দরকার বিলকিস এর হয়ে লড়াই করার? আমি মনে করি যে চুপ করে অন্যায় যে সহে, সে-ও ততটাই দোষী। এই ঐতিহাসিক রায় ভারতবর্ষের বিচার ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।’

আরও পড়তে পারেন-

এ জন্য মহুয়া মৈত্রর প্রশংসা করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। জয়নগরের প্রশাসনিক সভায় পার্লামেন্ট থেকে বহিষ্কৃত মহুয়া মৈত্রের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘বিলকিসের ধর্ষকদের জেলে পাঠাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় পক্ষ ছিলেন মহুয়া। তাই এটা তৃণমূলের বড় জয়।’

প্রসঙ্গত, নারী কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা এবং আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়াড়দের প্রতিবাদের পর কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে বিজেপি সরকার। আদালতের সাম্প্রতিক রায় সেই অস্বস্তিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা।

সেই প্রসঙ্গ টেনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। ধর্ষকরা ছাড়া পেয়ে যাবে এটা হতে পারে না। বিলকিস বানোর ঘটনাতেই কি শুধু এটা হয়েছে? নারী কুস্তিগিরদের সাথেও তো একই ঘটনা ঘটেছে।’

বিশেষজ্ঞদের মতামত
পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস জাতীয় প্রেসিডেন্ট কবিতা শ্রীবাস্তব বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে গুজরাত সরকারের সাথে অপরাধীদের যোগসাজশ ছিল। যদি গুজরাট সরকার বিলকিস বানোর জন্য ন্যায় বিচার চাইত, সুপ্রিম কোর্টের কাছে তার আগের রায়ের বিষয়ে জানতে চাইতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে গুজরাত সরকারের সঙ্গে দোষীদের মধ্যে যোগসাজশ ছিল।’

রায়ের অন্য একটি দিকও তুলে ধরেন তিনি। গণধর্ষণ এবং খুনে অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম রাধেশ্যাম শাহের বিরুদ্ধে সত্য গোপনের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির কথা বলা হয়নি। তিনি প্রথমে আদালতের কাছে রেমিশনের আর্জি জানিয়েছিলেন।

মিজ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘পিটিশনার রাধেশ্যাম শাহ কিন্তু আদালতের কাছে সত্য গোপন করেছিল। যদিও তার কোনও শাস্তির কথা রায়ে বলা হয়নি। অবশ্য, আদালত অবমাননার জন্য যে কেউ এখন মামলা দায়ের করতে পারেন।’

শীর্ষ আদালতের রায় যে বিজেপির কাছে পৌঁছেছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তার কথায়, ‘সাজা কমানোর পর ওই ১১ জন দোষী ছাড়া পেলে তাদের সম্মানিত করা হয়েছিল। তাদের সংস্কারীও বলা হয়েছিল। গুজরাটের বিজেপি সরকার তাদের সম্মানিত করেছিল। অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিন্তু ওই রেমিশনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিলমোহর দিয়েছিল। তাই শুধু গুজরাট সরকার নয়, আদালতের এই কড়া বার্তা কিন্তু শীর্ষস্তরেও গিয়েছে।’

আইন বিশেষজ্ঞ স্মিতা চক্রবর্তীও এ বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রেমিশন এবং আগাম ছাড়া পাওয়ার মধ্যে আইনি পার্থক্য রয়েছে। সবাই রেমিশন পেতে পারেন না। অপরাধের ধরন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে রেমিশন দেয়া হয়। কিন্তু গুজরাট সরকার যার ভিত্তিতে ওই অপরাধীদের রেমিশন দিয়েছিল, তাতে কিছুল গলদ রয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট ওই পদক্ষেপের বিষয়টিও কিন্তু দেখা উচিত।”

তার কথায়, প্রতিষ্ঠানগত পক্ষপাতদুষ্ট পদক্ষেপ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে তা আবারো হবে। ‘ইনস্টিটিউশনাল বায়াসের বিষয়টিকেও দেখা উচিত। এই রায়ে কিন্তু সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কাজেই বিজেপি সরকারের জন্য এই রায় বড় ধাক্কা সেটা বলা যাচ্ছে না। আদালত একটি নির্দিষ্ট কেসের মেরিটে এই রায় দিয়েছে,’ তিনি বলেন।

তবে অপরাধীরা চাইলে রেমিশনের জন্য আবেদন করতে পারেন মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে। তাই লড়াই এখনই শেষ, এমনটা নাও হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমাজকর্মী বলেন, ‘মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে ওই ১১ জন রেমিশন চাইতে পারেন। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু সেখানেও তো বিজেপি সরকার।’

ভোটে প্রভাব ফেলবে?
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছে সব দল। বিরোধীদের কেউ কেউ বলছেন, ভোটের আগে এটা বিজেপির জন্য বড় ধাক্কা। এ বিষয়ে অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বিশ্বনাথ চক্রবর্তী।

তার কথায়, ‘ভোটের রাজনীতি কিন্তু আলাদা। বিলকিস বানোর ঘটনা আমাদের মতো যারা উদারনৈতিক, আইনের শাসন এবং সংবিধান মেনে চলি, তাদের কাছে একটা বড় ইস্যু। কিন্তু এটা সাধারণ মানুষ, বিশেষত গুজরাতের মানুষের কাছে বড় ইস্যু নয়।’

‘বিজেপি গুজরাটে যে হিন্দুত্ববাদী আবহাওয়া তৈরি করেছে তার সাথে বিলকিস বানোর উপর যে অবিচার হয়েছে তার সরাসরি সম্পর্ক আছে। কোর্টে ধাক্কা খেলেও কিন্তু বিজেপি সরকার হিন্দুত্বের মশালকে কিন্তু উঁচিয়ে নিয়ে যাবে।’

‘উল্টো দিক থেকে দেখতে গেলে বিজেপি যে হিন্দুত্বের রাজনীতি করে ওরা মাঠে ময়দানে এইটাই প্রচার করবে। এই মামলাকে সামনে রেখে বরং তারা গোধরার কথা সাধারণ মানুষকে মনে করিয়ে দেবে। দাঙ্গার কথা মনে করিয়ে দিয়ে, তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টার পোলারাইজেশন করে ফেলবে’, মন্তব্য বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যারা লিবারল, তাদের জন্য সংবিধান হলো কি না গুরুত্বপূর্ণ, বিচার পেল কি না সেটা জরুরি, সংসদে গণতন্ত্র রয়েছে কি না সেটার গুরুত্ব আছে। কিন্তু যারা মেরুকরণের রাজনীতি করে, হিন্দুত্বের রাজনীতি করে তাদের জন্য এই ধরনের ইস্যুগুলো যত বেরিয়ে আসবে তত লাভ।’

‘তারা অতীতকে মনে করিয়ে দেবে, এবং অতীতকে পুনর্নির্মাণ করাটাই এদের কাজ। যদিও এটা কমিউনাল ইস্যু নয়। এইটা বিজেপি সরকারের একটা দমনমূলক পদক্ষেপ। পরিস্থিতিটা কিন্তু যারা আইন মেনে চলেন, সংবিধান ও গণতন্ত্রের কথা ভাবেন, তাদের জন্য চিন্তার।’

সূত্র : বিবিসি

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।