Home ইসলাম বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের

বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের

ছবি- সংগৃহীত।

।। জহির উদ্দিন বাবর ।।

টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগ জামাতের আয়োজনে ৫৭তম এই আসরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। নববি দাওয়াতের মিশন নিয়ে ছুটে চলা এক মকবুল জামাত তাবলিগ। এই জামাতের বিশ্ব সম্মেলন হচ্ছে ইজতেমা। তবে বর্তমানে ইজতেমা শুধু তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এটি রূপ নিয়েছে জাতীয় আয়োজন ও উৎসবে। এমনকি অপার ধর্মীয় সম্প্রীতির এ দেশে অমুসলিমদের কাছেও ইজতেমা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। ধর্ম-বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সবাই ইজতেমার এই গণজমায়েতকে সম্মান করেন, সাধ্যমতো সহায়তা জোগান। দেশের সরকার, প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই ইজতেমা আয়োজনে অত্যন্ত আন্তরিকতার পরিচয় দেন। যেকোনো সভা-সম্মেলনের চেয়ে ইজতেমার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ বেশি।

এ দেশের মানুষ স্বভাবতই ধর্মপ্রিয়। ধর্মের প্রতি বিশেষ এই অনুরাগের কারণেই বিশ্ব ইজতেমার মতো আন্তর্জাতিক একটি মুসলিম সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে। বারবার চেষ্টা করেও এই সম্মান কেউ ছিনিয়ে নিতে পারেনি। ইজতেমার মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে পারা নিঃসন্দেহে এ দেশের মানুষের জন্য সৌভাগ্য ও গর্বের বিষয়। কারণ হজের পরে ইজতেমাই হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় জমায়েত। যদিও ধর্মীয় বিধানের আলোকে এটি বিশেষ কোনো তাৎপর্য বহন করে না। হজের সঙ্গে তুলনা করাও সমীচীন নয়।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক হিসেবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আজ বেশ উজ্জ্বল। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি বারবার ইতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হয়। ইজতেমায় অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আসেন। তারা বাংলাদেশ এবং এর জনগণের প্রতি একটি সুধারণা নিয়ে যান। ইজতেমার কারণে সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের আদান-প্রদান ঘটে, ভাব বিনিময় হয়। এর ফলে আমাদের দেশ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়ভাবে যেমন লাভবান হয়, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধি অর্জন করে। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতির চাকা গতি পায়। ইজতেমার নিপুণ আয়োজন দেখে বিদেশিরা রীতিমতো মুগ্ধ হন। এ দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগ, শৃঙ্খলাবোধ, পরোপকার, আতিথেয়তা—সবই তাদের মনে দাগ কেটে যায়। যারা বাংলাদেশ সম্পর্কে আগে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন, তারাও বিশ্ব ইজতেমায় এসে একটি ইতিবাচক বাংলাদেশের সন্ধান পান।

আরও পড়তে পারেন-

এ বছরও ইজতেমায় শতাধিক দেশের ৩০ হাজারের বেশি বিদেশি মুসল্লির অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। এতগুলো বিদেশি পর্যটক সারা বছরেও বাংলাদেশে আসেন কি না সন্দেহ আছে। তাদের এই ভ্রমণে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরও অনেক বিদেশি মুসল্লি এ দেশের গ্রামগঞ্জে চিল্লা দেন। তারা দাওয়াতের কাজে গ্রামবাংলায় ঘুরে বেড়ান। আমাদের দেশ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা লাভ করেন। ইজতেমা ও তাবলিগে আসা বিদেশিদের মধ্যে অনেক বিনিয়োগকারীও থাকেন। ইজতেমাসূত্রে এই দেশে এসে বিনিয়োগ করেছেন এমন উদাহরণও আছে। তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক একটি ধারণা দেন। এতেও অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের দিকে ঝোঁকেন।

ইজতেমা শুধুই তাবলিগের লোকদের নয়, সব ধরনের মানুষ এটাকে আপন করে নিয়েছে। সারা বছর সবাই অপেক্ষায় থাকে ইজতেমার। দেশ-বিদেশের আলেম-উলামারা এখানে ধর্মীয় যে নির্দেশনা দেন, অনেকেই এটাকে জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করেন। এ জন্য শত কষ্ট সত্ত্বেও ইজতেমার ময়দানে অবস্থান করেন লাখো মুসল্লি। উপস্থিত হন জুমার নামাজে। অন্তত আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। বিপুলসংখ্যক মানুষ একসঙ্গে মোনাজাত করায় তা কবুলের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন অনেকেই।

মুসলমান সংখ্যায় অনেক, কিন্তু বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুশীলন করেন খুব কম লোকই। যারা ইসলামে থেকেও ইসলাম থেকে দূরে সরে আছেন, তাদের দ্বীনের গণ্ডিতে নিয়ে আসতেই তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠা। আল্লাহর রাস্তায় নিবেদিত বান্দাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সাধারণ মুসলমানের মধ্যে দ্বীনের স্পৃহা জাগাতেই প্রতি বছর ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ইজতেমার বয়ানগুলোর মূল বিষয়ই হলো—মুমিন বান্দার অন্তরে আখেরাতের ভাবনা জাগ্রত করা। পরিশীলিত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনাচারে উদ্বুদ্ধ করা। ইজতেমার প্রধান শিক্ষা হলো— ইসলাম কোনো আঞ্চলিক বা ব্যক্তি বিশেষের ধর্ম নয়; ইসলাম আন্তর্জাতিক, সর্বজনীন, সর্বকালীন একটি উন্নত জীবনব্যবস্থা। সাদা-কালো, ধনী-গরিবের এই বিশ্ব সম্মেলন আমাদের সে শিক্ষাই দেয়। একা একা নীরবে-নিভৃতে এই ধর্ম পালন করা যায় না। ইসলামকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার স্পৃহা অন্তরে জাগাতে হবে। প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব হলো ইসলামের প্রচার-প্রসারে মনোনিবেশ করা। শুধুই নিজের সমাজ ও দেশ নয়, দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়তে হবে ইসলামের অমীয় বাণী নিয়ে। বিশ্ব ইজতেমা নিছক কোনো আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়। এটি মূলত তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন। এই শিক্ষা বাকি জীবনের প্রতিটি পর্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই ইজতেমায় আসা ও অংশগ্রহণ হবে সার্থক।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।