সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গুলির শব্দ কমেছে। গতকাল সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের কোথাও মর্টার ও গুলির তেমন শব্দ শোনা যায়নি। গতকাল সারা দিনে দু-চারটি গুলির শব্দ এসেছে।
এদিকে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও সাময়িকভাবে বন্ধ পাঁচটি সরকারি স্কুল খোলা হয়নি।
পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এর আগে গত রবিবার দিনভর সীমান্তের হোয়াইক্যং উলুবুনিয়া, উনচিপ্রাং, লম্বাবিল, উত্তর পাড়া ও কানজরপাড়া এলাকা থেকে সীমান্তের ওপারে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সেদিন সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বসতভিটা ও দোকানে গোলা এসে পড়েছিল।
এদিকে সংঘাত, গোলাগুলি কমলেও অস্থিরতার সুযোগে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
সীমান্তের বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে স্থানীয় লোকজন নাফ নদের ওপারে কয়েক শ লোককে জড়ো হতে দেখেছে। তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতির কারণে তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়নি। তবে হোয়াইক্যং এলাকার একটি দালালচক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের এপারে অনুপ্রবেশে সহায়তা করতে সক্রিয় হয়েছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোয়াইক্যং এলাকার এক যুবক বলেন, ‘রোহিঙ্গাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশে সহায়তা করতে একটি দালালচক্র সক্রিয় বলে আমিও শুনেছি। তবে স্থানীয় লোকজন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে। এর আগে হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে একদল রোহিঙ্গা ঢুকতে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাদের ইশারায় এপারে ঢুকতে বারণ করে।’
এদিকে স্থলভাগের পাশাপাশি নাফ নদেও একাধিক স্পিডবোটে টহল বাড়িয়েছে বিজিবি। টেকনাফের ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, নাফ নদ অতিক্রম করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কেউ যাতে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সকাল থেকে দমদমিয়ার নাফ নদ সীমান্তে বিজিবির তিনটি স্পিডবোটের টহল চলছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লোকজন অনুপ্রবেশ করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা নতুন করে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। গতকাল সোমবার পর্যন্ত অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ১৩৭ জনকে প্রতিহত করেছে বিজিবি।
২২ রোহিঙ্গার তিন দিনের রিমান্ড
এদিকে গত মঙ্গলবার মিয়ানমার থেকে অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ২৩ রোহিঙ্গার মধ্যে ২২ জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একজন অসুস্থ থাকায় তার রিমান্ড আবেদন করা হয়নি।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে গত সপ্তাহে সংঘাতের সময় বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে তুমব্রু, ঢেঁকিবুনিয়া ও তোতারদিয়া নামক স্থানে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কয়েকটি ঘাঁটি দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। সে সময় প্রাণ বাঁচাতে বিজিপি, সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন সীমান্তের এপারে চলে আসেন। এই সুযোগে গত মঙ্গলবার ভোরে উখিয়ার পালংখালী রহমতের বিল এলাকা দিয়ে ২৩ জন রোহিঙ্গা সীমান্তের এপারে চলে এলে স্থানীয়দের সহায়তায় বিজিবি তাদের আটক করে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়েছিল।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ তোফায়েল ইসলাম এবং পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা গতকাল দুপুরে ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শন করেন।
এদিকে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের ফেরত পাঠাতে ঢাকা ও নেপিডোর মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজে করে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আগে থেকে কোনো দিন-তারিখ বলতে চায় না।
অন্যদিকে রাখাইন রাজ্যের সিতুয়ে থেকে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আজ মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে। নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে আপাতত ইয়াঙ্গুন থেকে ওই মিশন কাজ করবে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ