Home ইসলাম যেমন হবে মুমিনের ভালোবাসা

যেমন হবে মুমিনের ভালোবাসা

।। মুফতি ইবরাহিম সুলতান ।।

পৃথিবীতে মানবজীবনে ভালোবাসার গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো ভালোবাসার আদান-প্রদান। মানুষের বেঁচে থাকার এই অতি প্রয়োজনীয় আবেগকে শরিয়ত কেবল সমর্থনই করে না, বরং এই অনুভূতির যথার্থ প্রয়োগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের টানে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য আছে আলোর মিম্বার (মঞ্চ)। নবী ও শহীদরা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে (মর্যাদা দর্শনে) ঈর্ষা করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯০)

তবে ইসলাম যেকোনো ভালোবাসার বৈধতা নির্ণয়ে কিছু শর্ত আরোপ করেছে। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্ধারিত বৈধতার সীমায় থেকে আন্তরিক ভালোবাসা নিয়ে নিজ, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনের প্রচেষ্টা।

অবৈধ ভালোবাসার পরিচয় ও ভয়াবহ পরিণতি

হারাম বা অবৈধ ভালোবাসা বলা হয় মানুষের মনের আগ্রাসী ওই অনুভূতিকে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না।

সামাজিক স্থিতিশীলতা ও নিয়ম-কানুনেরও কোনো তোয়াক্কা করে না। এমনকি কারো কল্যাণ কামনা বা সম্মানের প্রতিও লক্ষ্য রাখে না, বরং নিজের চাহিদা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কামনা করতে থাকে। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, তোমাদের কাছে যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা, যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান, যাকে তোমরা পছন্দ করো—আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা থেকে বেশি প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৪)

আরও পড়তে পারেন-

বিবাহবহির্ভূত ভালোবাসার শেষ পরিণতি

গাইরে মাহরাম নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, দেখা-সাক্ষাৎ ও কথোপকথন সম্পর্কে ইসলামে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে একে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শরিয়তে বেগানা নর-নারীর অবৈধ সম্পর্ক শুরুর ধাপ তথা দৃষ্টি বিনিময় বা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)

উপর্যুক্ত আয়াতে আল্লাহ ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ যেসব কাজ মানুষকে জিনা-ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায় তা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। যেমনটি হাদিসে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বনি আদমের জন্য জিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি ও কামনা সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)

আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘দেখা ও কথা বলাকে জিনা বলার কারণ এই যে দুটিই হচ্ছে প্রকৃত জিনার ভূমিকা। জিনার মূল কাজের পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহ্বা হচ্ছে বাণী বাহক আর যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার—সত্য প্রমাণকারী।’ (মাআলিমুস সুনান : ৩/২২৩)

ভালোবাসা দিবস উদযাপনের বিধান

অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন এবং তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন উদযাপনের অশ্লীলতা ইসলাম ও প্রকৃত মুসলিমের হৃদয় কোনোভাবেই সমর্থন করে না। অন্যদিকে বৈধ ভালোবাসার জন্য কোনো দিবস বা সময় নির্ধারিত নেই। প্রত্যেক মানুষ নিজের ভালোবাসা যেকোনো দিন, যেকোনো সময়, যেকোনো মুহৃর্তে প্রকাশ করতে পারে। এর জন্য কোনো দিন নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।