Home লাইফ স্টাইল ইসলামে পরিবার ব্যবস্থার গুরুত্ব ও তৎপর্য

ইসলামে পরিবার ব্যবস্থার গুরুত্ব ও তৎপর্য

- প্রতিকী ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

।। মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক ।।

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মানব জাতিকে আল্লাহ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মানব জাতির বংশ বিস্থার শুরু হয় আদি মানব হযরত আদম (আ.) থেকে। আর এই ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত। বিদ্যমান থাকবে। ইসলামী শরিয়ত সামনে রেখে রবের সমস্ত আদেশ ও নির্দেশ পালনের মাধ্যমে যে জীবন শুরু হয়। সেটাই হচ্ছে ইসলামী পরিবার।

পরিবার গঠনের মূল কাঠামো হলো বিয়ে বিয়ের জন্য প্রথমে পাত্র/পাত্রী নির্বাচন করতে হবে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক। আর এই নিবার্চন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সে ক্ষেত্রে আপনি শুধু স্ত্রী নির্বাচন করছেন না বরং একই সাথে একজন সন্তানের আদর্শ মা নির্বাচন করছেন। ইসলামী নির্দেশ মোতাবেক হচ্ছে-সৌন্দর্য ভালো বা সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন অথবা ইসলামী নির্দেশ পালনীয় হওয়া। উভয়ের মধ্যে ইসলামী জ্ঞান, আমল, চরিত্র, ইসলামী তাহজিব-তামাদ্দুন, ধর্মীয় সংস্কৃতি বিরাজমান থাকতে হবে। তাহলে এই পরিবারে আল্লাহর রহমত আসতে থাকবে, সাংসারিক সংঘাত দূর হবে এবং রাব্বে কারিম তাদেরকে হেফাজত করবেন।

রাব্বে কারিম ইরশাদ করেন, তিনি তোমাদের একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর থেকে তাঁর সহধর্মিনীও সৃজন করেছেন এবং এক জোড়া থেকে সর্বত্র পুরুষ ও নারীর বংশ পরস্পরায় বিস্তার লাভ করেছে। রাব্বে কারিম ইরশাদ করেন, নারীরা তোমাদের জন্য, তোমরাও তাদের জন্য। নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। মর্যাদার কারণ হলো যে, পুরুষ স্ত্রীদেরকে মোহর দান করে, তাদের যাবতীয় ভরণ-পোষণ বহন করে, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করে এবং শরিয়তের মৌলিক অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্য তাকিদ দিয়ে থাকেন।

স্বামী স্ত্রীর ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত এ ব্যপারে স্বয়ং রাব্বে কারিম ইরশাদ করেন,  তোমরা রমণীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার কর, রমণীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা রবের নির্দেশ, কেননা রমণীরা তোমাদের মা-বোন ও স্ত্রী বা কন্যা।

রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, সেই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করে। রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন, স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দিলে এটা তার জন্য সদকার সওয়াব হবে। রাসুলে পাক (সা.)এর কথা শুনে এক সাহাবী বললেন, আমি এই হাদিস পালন করার ফলে পরিবারে অনেক শান্তি লাভ করি। পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য ছেলে-মেয়েদের আদব শিক্ষা দেবার জন্য পরিবারের একজন অপর জনের প্রতি সালাম-আদান প্রদান করা জরুরি। যা ইসলামী পরিবার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ইসলামী হুকুম আহকাম যথাযথ পালনে পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা রাখতে পারি।

অনেক সময় দেখা যায় বাহিরের লোকদের সাথে হাসি-খুশি অমায়িক ব্যবহার করছেন, কিন্তু ঘরে ফিরেছেন। বদমেজাজি স্বভাব নিয়ে, পরিবার তার রাগান্বিত দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যান। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। এই স্বভাব পরিবারের সকলের জন্য মানসিক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়ায়। এই বদমেজাজী চরিত্র পরিত্যাগ করে ঘরে প্রবেশ কালে সালাম আদান প্রদান করে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় মায়া-মমতায় সোহাগ ভরা কথা-বার্তা বলুন। তাহলে পরিবারের সকলের মন সুখে শান্তিতে ভরে যাবে এবং রাব্বে কারিমের পক্ষ হতে অফুরন্ত রহমত লাভ করবেন।

পারিবারিক সম্পর্ককে মধুময় করার জন্য স্ত্রীরও অনেক কর্তব্য রয়েছে,স্বামী বাড়ির বাহির থেকে ঘরে আসলে স্ত্রী হাসিমুখে সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো, একগ্লাস পানি নিয়ে আসুন আর সেবার জন্য এগিয়ে আসলে স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং রাব্বে কারিম তাদের প্রতি দয়াপরায়ণ হবেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাযি.) তিনি তাঁর স্বামী রাসুলে পাক (সা.)এর সেবা এমনভাবে করেছেন যে, নিজ হাতে রাসুল (সা.) এর চুল মোবারক চিরুণী করে দিতেন। তাই স্বামীর মন আকর্ষণ করার জন্য সাধ্যমতো রুচি মোতাবেক কাপড় পরিধান করাও এবাদতের শামিল।

পরিবারকে সুন্দর করে সাজাতে উভয়ে আলোচনার মাধ্যমে পরিবার সাজান, তাহলে পরিবারটাই শান্তিতে ভরপুর হয়ে যাবে। বিশেষ করে একে অপরের প্রশংসা করুন তাহলে সুন্দর পরিবার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক যখন পরিবার পরিচালিত হবে তখন মানুষের চির শত্রু শয়তান নানাভাবে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে, তাই শয়তানের প্ররোচনায় আসক্ত না হয়ে বরং রাব্বে কারিমের দিকে নিজেকে নিয়োজিত রাখাটাই মুসলিম পরিবারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

পরিবারে কোনো সমস্যা এলে বা কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি দেখা দিলে ঠান্ডা মাথায় খোলা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করুন। একে অপরের উপর অভিযোগ দায়ের করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজ সন্তানের সামনে একে অপরের সমালোচনা কঠোরভাবে এড়িয়ে চলুন। এতে উভয়েই সন্তানের কাছে অপমানিত হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন এবং সন্তানের আদব শিখানোর যোগ্যতা হারাতে হবে না।

রাব্বে কারীম  তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রত্যেককেই দায়িত্বশীল আর দায়িত্ব সম্পর্কে প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসিত হতে হবে। সন্তান-সন্ততিই মা-বাবার এক মহান নিয়ামত। সন্তানের প্রতি মা-বাবার অনেক কর্তব্য রয়েছে যেমন-সন্তানের সুন্দর একটি নাম রাখতে হবে। তাদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। রাব্বে কারিম সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেন-মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সন্তানের দুবৎসর দুধ পান করানো।

রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, শিশুর জন্য মায়ের দুধের ন্যায় আর কোন দুধ বরকত পূর্ণ হতে পারে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, বিবাহ  হলো ঈমানের অর্ধেক বিবাহ হলো আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতের প্রতি অমনোযোগী সে আমাহতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তোমরা  তোমাদের সন্তানদেরকে সম্মানিত করো এবং সুন্দর আদবসমূহ শিক্ষা দাও। মধুর ব্যবহারে পরিবারের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই আমাদের উচিত মুসলিম হিসেবে ইসলামী আদর্শ মোতাবেক জীবন যাপন করা।