২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে সংঘটিত বর্বরোচিত গণহত্যার ১২ বছর পূর্তিতে গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আজ সোমবার এক বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “শাপলা চত্বর ট্রাজেডি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত কলঙ্ক। সেদিন রাতে লাখ লাখ নিরস্ত্র আলেম-ওলামা, হিফজখানা ও কওমি মাদরাসার ছাত্রসহ সাধারণ তাওহিদী জনতা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলেন ইসলামী মূল্যবোধ সংরক্ষণের দাবিতে। অথচ রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদি সরকার তাঁদের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে শত শত ধর্মপ্রাণ মানুষকে হত্যা, গুম ও গ্রেফতার করা হয়। আজো সেই হত্যাযজ্ঞের কোনো বিচার হয়নি, কোনো তদন্ত প্রকাশ হয়নি।”
তিনি বলেন, “২০১৩ সালে যারা ইসলাম ও ঈমানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল, তাদেরকে হত্যার পর ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি মিথ্যা মামলা দিয়ে হেফাজতের নেতৃত্বকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়। রঙ মেখে হেফাজতের নেতাকর্মীরা রাস্তায় শুয়ে ছিলেন বলে ফ্যাসিবাদি খুনি হাসিনা তৎকালীন সংসদে নিষ্ঠুর উপহাস করেছিল। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। বরং সময়ের পরিবর্তনে আজ সেই ফ্যাসিবাদি সরকার ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
বিবৃতিতে মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী বলেন, ফ্যাসিবাদি হাসিনার পতনের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, যারা নানা বিষয়ে কমিশন গঠন ও বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু শাপলা ট্রাজেডির বিষয়ে এখনও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না—এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার বিষয়।”
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
তিনি সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, ৫ মে’র গণহত্যা রাষ্ট্রীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। গণহত্যায় নিহত, গুম ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। শাপলা গণহত্যার বিচারের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা জাতীয় তদন্ত কমিশনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য দাবি জানিয়ে আসছে। এখন যদি অন্তর্বর্তী সরকারও এই বিষয়ে নিরব থাকে, তাহলে জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি হবে যে, এই সরকারও পূর্ববর্তী সরকারের মতই ইসলামী শক্তিকে অবজ্ঞা করছে। এমনটি হলে সরকারের প্রতি আস্থা ও সমর্থন ব্যাহত হতে পারে।”
বিবৃতির শেষাংশে তিনি বলেন— “আমরা সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই—দেশের বিশাল ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ভুলে যাবেন না। ন্যায়বিচারের পথেই জাতির স্থিতি ও শান্তি নিহিত। শাপলা চত্বরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই কলঙ্কমুক্তির উদ্যোগ নেওয়াই হবে সরকারের জন্য একটি সময়োপযোগী, সাহসী ও মানবিক পদক্ষেপ।”
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ