।। ডা. তাসলিমা বেগম ।।
প্রথমেই বলি এটা আমার পেশন, ভালোবাসার জায়গা! নিজের রোগি নিজে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা খুবই satisfying! রোগীর ইতিহস , ভেজাইনাল এক্সামিনেসন আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সাথে ক্লিনিকাল কোরিলেশন করার সুযোগ থাকায় accurate diagnosis করা সম্ভব হয়। সাধারণত confusing diagnostic situation এ সঠিক এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়। নিজের হাতেই সঠিক ডায়াগনসিস করার সুযোগ থাকার কারনে রোগির অপারেশন বা চিকিৎসা অনেক কনফিডেন্সের সাথে করা সম্ভব হয়। আলহামদুলিল্লাহ।
আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। ২০০৭-৮ সালের কথা তখন আমি ঢাকায় উত্তরাতে প্রাকটিস করতাম। এক নব বিবাহিত দম্পতি আমার কাছে আসেন প্রচন্ড পেট ব্যথা, সাথে আলট্রাসনোগ্রাফি সহ যাতে লিখা তার জরায়ুতে একটা প্রেগন্যান্সি আছে । স্বাভাবিক ভাবে তাকে ব্যথার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাবতীয় ব্যথার ঔষধ দেবার পরও তার ব্যাথা নিরাময় হয়নি। আমি রোগীকে বল্লাম আপনি রাজি থাকলে আমি নিজেই একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে চাই। পরে দেখি তার জরায়ুতেতো বাচ্চা আছেই সাথে ডান পাশের ডিম্বনালীতেও একটা প্রেগন্যান্সি, যেটার কারণে তার এত ব্যথা এবং ঘটনাটি uncommon হওয়ায় পূর্বের সনেলজিস্ট ডায়াগনসিস মিস করেছিলেন । সে রোগীরে বহুত কষ্ট করে বোঝানো হলো তার আসন্ন Ruptuted ectopic pregnancy র বিপদের কথা। অবশেষে জরায়ুর প্রেগন্যান্সি ডিস্টার্ব না করে আমিই তার পেট কেটে টিউবাল প্রেগন্যান্সি অপসারণ করি।
একবার এক রোগী মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে আসলো পেট বথা নিয়ে। তিনি দুদিন আগেই ওমান থেকে স্বামির কাছ থেকে দেশে ফিরেছেন আমার কাছে ইনফার্টিলিটি চিকিৎসা নিতে। তাঁর তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা ও টেন্ডারনেস ছিল।আমি তাকে দেখলাম ও টিভিএস করে বললাম যে তার তলপেটে অনেক ফ্লুইড যা আমার কাছে রক্ত মনে হলো এবং ডান দিকে কম্প্লেক্স মাস। তাকে বিটা এইচসিজি করতে দিলাম, প্রেগন্যান্সি টেস্ট নেগেটিভ, বল্লাম বিটা এইচসিজি নেগেটিভ হলেও আপনার লেপারোটিমি বা লেপারেস্কপি করে দেখতে হবে কারন আপনার পেটে ইকটপিক প্রেগন্যান্সি বা যে কোন কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। রোগির ওজন ১০০ কেজির কাছাকাছি ।কিন্তু রোগীর আত্মীয় স্বজন কিছুতেই বিশ্বাস করলো না আমার কথা।
এভাবে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে ভুগতে এমন কি তারা রাত একটা বাজিয়ে ফেলল সিদ্ধান্ত নিতে। তার স্বামী বিদেশ তাই অপারেশনের সিদ্ধান্ত তারা নিতে ভয় পাচ্ছেন। বলছেনন সেকেন্ড ওপেনিয়ন নিবেন। এদিকে রোগি ফেকাসে হয়ে যাচ্ছেন। তারা রাজি না হলে আমি রোগি থেকে বন্ড সই নিয়ে বাসায় ফিরতে নিচে নামি। অবশেষে রোগীর মা বাবা নীচে এসে আমার হাত ধরে রিকোয়েস্ট করে ওটিতে নিয়ে যান, অপারেশন জন্য অনুরোধ করেন। দীর্ঘক্ষন পর আল্লাহর নাম নিয়ে পেট খুলে দেখি রক্তে রক্তে সয়লাব। যে গার্ডিয়ান মাতবর গোছের ছিল তাকে গাউন পরিয়ে ওটিতে এনে সিসুয়েসন দেখালাম এবং তারা যে অযথা দেরি করে রোগির ক্ষতি করেছে সেটা তিনি তখন অনুধাবন করলেন। রোগির ডায়াগনসিস ছিল twisted and Ruptured ovarian tumor.
এ জীবনে এমন শত শত রোগিকে অন্যরা লিখে দিয়েছে জরায়ুর টিউমার, আমি তা পাইনি বা পেয়েছি এডেনোমাইওসিস, দুটির চিকিৎসা ভিন্ন, তাই সঠিক চিকিৎসার জন্য ডায়াগনসিস অত্যাবশ্যক।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
সেদিন এক নার্স একটা রোগী আমাকে দেখাতে নিয়ে আসেন। তিনি আমাকে প্রচন্ড রকম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকলেন। আমি নাকি তাকে
অপারেশন থেকে রক্ষা করেছি। আমি বললাম কিভাবে.জানালো, তাকে কোন এক সনোলজিস্ট ইকটপিক প্রেগন্যান্সি লিখে দেন, পরে আমি টিভিএস করে বলেছি ওনার টিউবে না বরং জরায়ুতে বাচ্চা।আমি নাকি সারা জীবন তার দোয়ায় থাকবো।
এভাবে আমি নিজের রোগি নিজে আলট্রাসনোগ্রাম করার কারণে আমার ডায়াগনসিস্র দ্বারা কত রোগি যে আল্লাহ রহমতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এসেছেন , আর কত রোগিকে অযথা অপারেশন টেবিলে শুতে হয় নি তার ইয়াত্তা নেই। সব কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা।
আমি আমার প্রতিটি রোগীকে অপারেশন পূর্বে ভালোমত পার ভেজাইনাল এক্সামিনেশন করি এবং নিজ হাতে আলট্রাসনোগ্রাম করে রোগের বিস্তরিত লোকেশন জেনে নেই, অপারেশন ধরণ কি হবে, কি কি পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে, এমন কি কেমন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অপারেশনের জন্য টিম মেম্বাররা নিতে হবে, কোন স্পেশাল সুতা বা মেডিসিন লাগবে কিনা সব আগে থেকে চিন্তা করে তবেই অপারেশন সেট করি ।
আলহামদুলিল্লাহ ,এতে অনেক সহজ ও ঝামেলা মুক্ত ভাবে পুরো কাজটি করা সম্ভব হয়।
ডা. তাসলিমা বেগম
এফসিপিএস (গাইনী ও অবস), এফসিপিএস (ইনফার্টিলিটি)
সহযোগী অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান, রিপ্রোডাক্টিভএন্ডোক্রাইনোলজি এবং ইনফার্টিলিটি ইউনিট,চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
চেম্বারঃ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল,জিইসি মোড়, রুম ২০৬ এবং ইনোভা হাসপাতাল, জামালখান, চট্টগ্রাম।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ