১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও বাস্তবতা অগ্রাহ্যের খেসারত দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় শেখ হাসিনা নিজেকে ভাবি প্রধানমন্ত্রী মনে করলেও, ভোটের ফলাফলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসে। ইতিহাস বলছে— যারা অতীত থেকে শিক্ষা নেয় না, তাদের ভুলের পুনরাবৃত্তি অনিবার্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন— আজ বিএনপি কি সেই একই পথে হাঁটছে?
বর্তমানে বিএনপির জনসমর্থন প্রশ্নাতীত। দীর্ঘ দমন-পীড়নের পরও দলটি সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, বিএনপির জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে, যেসব শ্রেণির মানুষ ঐতিহাসিকভাবে ধানের শীষের প্রতি আস্থা রেখে এসেছে— বিশেষ করে আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামপন্থী জনগোষ্ঠী— তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি।
ভোটের রাজনীতিতে আলেমদের গুরুত্ব
বাংলাদেশের ভোট রাজনীতিতে ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের মতো দল হিন্দু ভোটারদের ‘নৌকার রিজার্ভ ভোট’ বলে মনে করে, আর বিএনপি বরাবরই পীর-মাশায়েখ, মাদরাসা শিক্ষার্থী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ‘ধানের শীষের রিজার্ভ ভোট’ হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে।
কিন্তু বর্তমানে বিএনপির ভেতরে এমন একটি গোষ্ঠীর প্রভাব দেখা যাচ্ছে, যারা তথাকথিত ‘প্রগতিশীলতা’র নামে আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করছে।
জামায়াত ও এনসিপির উত্থান
অন্যদিকে, বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াতে ইসলামি তিনশ’ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
তারা বিপরীত আকিদার ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং বিদেশে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার কাজ করছে।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র মতো উদীয়মান দলগুলো বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করে জনসমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে— বিএনপি কি সেই ঐতিহ্যবাহী ইসলামপন্থী ভোটব্যাংক ধরে রাখতে পারবে?
দলের ভেতরে মতভেদ ও সমালোচনার ঝড়
বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা অভিযোগ করছেন, কিছু বামঘরানার নেতা দলকে ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে সরাচ্ছেন।
এমনকি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের সাম্প্রতিক মন্তব্য— যেখানে তিনি আলেমদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন— তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। অথচ দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আলেমদের প্রত্যাশা এবং নেতিবাচক বার্তা
২০ দলীয় জোটের সাবেক শরিক কয়েকটি ইসলামী দলের নেতারা জানিয়েছেন, জামায়াত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, কিন্তু বিএনপি থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি।
নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার বলেন, “বিএনপি ইসলামপন্থীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে নিজেদের ক্ষতি করছে।
নির্বাচনের আগেই ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতা দলটিকে দুর্বল করে তুলছে।”
শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াবে কি বিএনপি?
বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অবশ্য বলছেন, সময় এখনো ফুরায়নি।
নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল নিশ্চয়ই আলেম-ওলামা ও ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়বে।
তাদের বিশ্বাস— ১৫ বছরের দমন-পীড়নের বাস্তবতায় ইসলামপন্থীরা বিএনপির বিকল্প হিসেবে কাউকে গ্রহণ করবে না।
তবুও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতিতে আত্মতুষ্টি কখনোই নিরাপদ নয়। বিএনপি যদি এখনই প্রয়োজনীয় সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়, তবে ১৯৯১ সালের আওয়ামী লীগের মতো ইতিহাস আবারও প্রহসনের রূপে ফিরে আসতে পারে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ