স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক হিসেবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের নাম থাকায় সব প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায় ঘোষণা করা হয়েছিল ২০০৯ সালের ২১ জুন। পরের বছর ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চের দু’জন বিচারক পূর্ণাঙ্গ রায়ে সাক্ষর করেন।
২০০৯ সালের জুনে হাইকোর্টের রায়ের পরপরই সরকার মুক্তিযুদ্ধের দলিল (তৃতীয় খণ্ড) প্রত্যাহার এবং তা বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি সেটার অনুলিপি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। এতে রায় তামিলে ‘অবিলম্বে’ কথাটি ব্যবহার করা হয়।
বিচারপতি খায়রুল হক তার ৩২০ পৃষ্ঠার রায়ে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বলেন, ‘ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকেও কখনো তিনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেননি। এমনকি ১৯৭৭ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে প্রশংসা করার পরও তিনি এরূপ কোনো দাবি করেননি। এটা তাঁর সততার নিশ্চিত পরিচায়ক।’ রায়ে জিয়াকে ‘সুদক্ষ সেনা কর্মকর্তা’ এবং ‘চাকরিজীবনে অত্যন্ত সাফল্যের অধিকারী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি যে একটি ঘোষণা পাঠ করেছিলেন, তাও ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গ্রেপ্তারসাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গ্রেপ্তার
উল্লেখ্য, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক এমন বক্তব্যসংবলিত বইপত্র এখনো দেশে রয়েছে। ওই সব বইপত্র সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন’-২০০৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র গ্রন্থাবলী সিরিজের তৃতীয় খণ্ডসহ যেসব পুস্তক-পুস্তিকা, গ্রন্থে এমন বক্তব্য মুদ্রিত বা বিবৃত হয়েছে, অবিলম্বে তা বাজেয়াপ্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হলো।
রায়ের উপসংহারে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাসংক্রান্ত বিষয়ে ২০০৪ সালে প্রত্যয়ন কমিটির অভিমত তথ্যভিত্তিক নয়। এটা প্রকৃত সত্যের পরিপন্থী। তাছাড়া, ওই অভিমত ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সে কারণে তা সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদের সঙ্গেও সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাই তা বাতিলযোগ্য।
রায়ে আরো বলা হয়, ২০০৪ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পুনর্মুদ্রিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র-এর তৃতীয় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মেজর জিয়ার প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা’ শিরোনামে মুদ্রিত বর্ণনা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের পরিপন্থী তথা সংবিধান পরিপন্থী। তাই এটা অবৈধ ঘোষণা করা হলো। তা ছাড়া ওই তৃতীয় খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠার
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
পাদটীকায় ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ন অফিসার, জেসিও এবং জওয়ানদের একত্রিত করে ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দেন’ ইত্যাদি বক্তব্যও সংবিধান পরিপন্থী বলে তা অবৈধ ঘোষণা করা হলো।
রায়ে বলা হয়, প্রতীয়মান হয় যে পুনর্মুদ্রিত স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রের প্রত্যয়ন কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা ইতিহাস বিকৃত করেছেন। তাঁরা সংবিধান পরিপন্থী ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সমগ্র বাঙালি জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। রায়ে বাংলাদেশ সরকারকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সব ধরনের ইতিহাস বিকৃতি দূর করে সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার পর ২০০৯ সালের ২৪ জুন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ আদালত অবমাননার দায়ে অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। তিনিসহ প্রত্যয়ন কমিটির ছয়জন সদস্য একই দিনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তথ্য বিকৃতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এমাজউদ্দীন দাবি করেন, তিনিসহ কয়েকজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত সংযোজনের’ প্রতিবাদ করেছিলেন।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক হিসাবে জিয়াউর রহমানের নাম সম্বলিত সবপত্র বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়ার বছরই ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এবিএম খায়রুল হক বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ