আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিজয় অর্জন এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা ৫ আগস্টের ঘটনাকে দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই দিনটি আধিপত্যবাদী ও দমনমূলক রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে জনতার দৃঢ় অবস্থানের প্রতীক।”
বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের এই দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে ছাত্র-জনতা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। প্রথমে কোটাবিরোধী আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও, ফ্যাসিবাদি আওয়ামী সরকারের কঠোর দমনপীড়নের মুখে তা দ্রুতই একটি বৃহৎ গণআন্দোলনে রূপ নেয়। অবশেষে তা “এক দফা সরকার পতনের” দাবিতে রূপান্তরিত হয়।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শত শত শিক্ষার্থী ও তরুণ কর্মী। সরকারি প্রতিবেদন সেই মৃত্যু সংখ্যা লুকানোর চেষ্টা করলেও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শহীদদের এই আত্মত্যাগ জাতি কখনো ভুলবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী এবং সঞ্চালনায় ছিলেন দলটির প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়তের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন— “বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চেতনার ইতিহাসে ৫ আগস্ট ২০২৪ এক অনন্য অধ্যায়। শহীদদের রক্তের দাগ এখনো মুছে যায়নি। তারা যে ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিল, আমরা তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “কেবল দলীয় স্বার্থে নয়, জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোই ইসলামপন্থী রাজনীতির মূল চেতনাবোধ। সেই জায়গা থেকেই জমিয়ত ছাত্র-জনতার ন্যায্য দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে এবং শহীদদের স্মরণে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া বলেন— “এই শহীদরা ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার, যেখানে বিচার থাকবে, বৈষম্য থাকবে না, জনগণের কথা শোনা হবে।”
সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাযহারী বলেন— “শুধু স্মরণে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না, শহীদদের ত্যাগের বাস্তব ফসল ফলাতে হলে আমাদের সংগঠিত হতে হবে, মূল্যবোধনির্ভর নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, মুফতি মাহবুবুল আলম কাসেমী, মুফতি নূর মোহাম্মদ কাসেমী, মাওলানা আখতারুজ্জামান কাসেমী, মাওলানা সাইফুর রহমান, মাওলানা হুজাইফা ওমর, মুফতি হাসান আহমদ, ছাত্র জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিদওয়ান মাজহারী এবং ছাত্রনেতা কাউসার আহমাদ।
তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে একটি অভিন্ন বার্তা: শহীদদের আদর্শকে বুকে ধারণ করে, ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আজও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
আলোচনা শেষে শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মুনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি নূর মোহাম্মদ কাসেমী। মোনাজাতে শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা এবং দেশে শান্তি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ