Home অন্যান্য খবর নিউইয়র্ক থেকে কেউ যেন ‘অক্ষত ফিরতে না পারে’

নিউইয়র্ক থেকে কেউ যেন ‘অক্ষত ফিরতে না পারে’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি- সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের সরাসরি আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে থাকা পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। নিউ ইয়র্ক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে হাসিনা এ নির্দেশনা দেন। দলের নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, কেউ যেন অক্ষত ফিরতে না পারে।

হাসিনার নির্দেশনার পর বাংলাদেশে কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্তার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে ব্যাপক উপস্থিতি ঘটানোর মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। এদিকে গত বুধবার রাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হোটেল লবিতে গিয়ে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনকে গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেন। আখতার এটিসহ বিমানবন্দরে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় একটি থানায় মামলা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ‘বিশেষ সুবিধা’ পেতে মানবাধিকারকর্মী পরিচয়ের আড়ালে ইতোমধ্যে বিদেশি নাগরিক ভাড়া করেছে। বিষয়টি নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল কার্যালয় ইতোমধ্যে অবহিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এদিন জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে পুস্তিকা বিতরণ করবে। অন্যদিকে বিমানবন্দরে হামলার ঘটনার সব ভিডিও ফুটেজ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে জমা দিয়েছে কনসাল জেনারেল কার্যালয়। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে নির্দেশনা পেয়ে কনসাল জেনারেল কার্যালয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানিয়েছে।

‘একটাও যাতে অক্ষত ফিরতে না পারে’

স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার দুপুর ১টায় জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ওই সময় তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। বর্তমানে তারা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সন্নিকটে হোটেল আল হায়াতে অবস্থান করছেন।

এদিন জাতিসংঘের সামনে ব্যাপক উপস্থিতি ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। তাদের সঙ্গে রয়েছে জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া দলের নেতাকর্মীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে আটটি ঘরোয়া বৈঠক করে এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নিউ ইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কার্যালয়ের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও সভায় অংশ নেওয়া কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধি আমার দেশকে জানান, প্রতিটি সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে থাকা হাসিনা ও তার ছেলে মার্কিন নাগরিক সজীব ওয়াজেদ জয়। একটি সভায় হাসিনা প্রধান উপদেষ্টাসহ তার সফরসঙ্গী রাজনীতিকদের আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ওরা কেউ যাতে অক্ষত যেতে না পারে; তোমরা সব ব্যবস্থা করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মাধ্যমে অর্থের জোগান দিচ্ছেন জয়। জয় কিছুদিন আগে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেন।

জেকসন হাইটস এলাকায় দুদিন আগে হওয়া একটি সভায় উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কর্মী আমার দেশকে জানান, বৈঠক শুরুর কিছু সময় পর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ভিডিও কল করেন শেখ হাসিনার কাছে। বিমানবন্দরে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের সফলভাবে হেনস্তা করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ দেন তিনি। সামনের কর্মসূচিগুলোও তিনি ওইদিনের মতোই সফল করতে বলেন। এ সময় হাসিনা বলেন, কোনোভাবেই কেউ যাতে অক্ষত ফিরতে না পারে, সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

আওয়ামী লীগের ওই কর্মী আরো জানান, সভাটিতে সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আপত্তি করে তিনি বলেন, আইন ভাঙা যাবে না। আইনের ভেতরে থেকেই সর্বোচ্চটা করতে হবে। এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা চিৎকার ও চেঁচামেচি করে ওঠেন। তিনি বলেন, ওদের (অন্তর্বর্তী সরকার) জন্য আবার দরদ কীসের? ওরা আইন দেখে আমাদের মারছে নাকি? ওরা তো আমাদের কিছুই আর বাকি রাখেনি। ওদের একটাকেও আমি ছাড়ব না। ওই সময় শেখ হাসিনার বক্তব্য ও আচরণ অসংলগ্ন ছিল।

বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উৎকণ্ঠা

নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মহড়া দিচ্ছেন আ.লীগ নেতাকর্মীরা। এতে অস্বস্তি বোধ করছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটির লোকজন। জেকসন হাইটস, জামেইকা ও এলমার্স্ট এলাকায় বসবাসকারী কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে আমার দেশ। আলাপের সময় তারা এ অস্বস্তি বোধ করার কথা জানান।

জামেইকার অধিবাসী ওয়ালিউল্লাহ পাটোয়ারী নিউ ইয়র্কে ফেডারেল সরকারের একজন কর্মকর্তা। আমার দেশকে তিনি বলেন, এখানে জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা এবং এখন চাকরি করছি। আমার পূর্বপুরুষ, মানে বাবা-মা ও দাদা-দাদির দেশ বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের যে কোনো ঘটনা বা সংবাদের প্রতি একটি বিশেষ আকর্ষণ থাকে। ভালো কোনো খবর খুব কমই কানে আসে। যা শুনি, সবই হতাশাজনক।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ঘিরে নিউ ইয়র্কে ব্যাপক আয়োজন থাকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এখানে আসেন। এখানে বহু জাতি ও সংস্কৃতির লোক বসবাস করছে। কোনো দেশের নাগরিক এমন বিক্ষোভ কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না, যেটা বাংলাদেশের নাগরিকরা করে থাকে। বাংলাদেশের বিষয়ে প্রতি বছরই নিউইয়র্ক প্রশাসনকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়। এটা আমার জন্য লজ্জা ও বেদনার।

এলমার্স্ট এলাকার অধিবাসী লোকমান হোসেন বলেন, সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনা আমাদের অন্য দেশের নাগরিকদের কাছে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।

আরও পড়তে পারেন-

হামলার ভিডিও ফুটেজ স্টেট ডিপার্টমেন্টে জমা

জন এফকে বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নাজেহাল ও গালিগালাজ এবং এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ওপর হামলার ঘটনার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কনসাল জেনারেলকে ওইদিনই নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টি জানানোর পর তারা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল কার্যালয়ে সব ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে স্টেট ডিপার্টমেন্টে জমা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব আইন ও পদ্ধতি অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে কনসাল জেনারেলকে জানিয়েছে।

কনসাল জেনারেল কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, আমরা জানতে পেরেছি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের নাগরিকদের পাশাপাশি অন্য দেশের নাগরিকদেরও ভাড়া করেছে। তারাও মানবাধিকার সংগঠনের ব্যানার নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাবে। এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের বিরুদ্ধে এবং জুলাই অভ্যুত্থানকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। এগুলো জাতিসংঘের সামনে বিতরণ করবে তারা।

আ.লীগের সন্ত্রাস মোকাবিলায় বহুধাবিভক্ত বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির অবস্থান ও সাংগঠনিক ভিত্তি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের সাত নেতার সঙ্গে কথা বলে আমার দেশ। সবার অভিন্ন কথা হচ্ছে, গত ১০ বছরেও এখানে বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। বর্তমানে এখানে বিএনপি কমপক্ষে চারটি গ্রুপে বিভক্ত। যাদের বিরোধ মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা বরং বিভিন্ন উপদল তৈরি করে বিরোধ আরো তীব্র করছে। যার প্রমাণ মিলেছে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে না পারার মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রে সংগঠনকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন এক ব্যক্তিকে, যার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। তারা জানান, ওই নেতা বাস করেন যুক্তরাজ্যে। এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র শাখার এক নেতা বলেন, আমাদের দলের মূল হলো বাংলাদেশে। সেখান থেকে স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য দায়িত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে বাঁচাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির সোনালি অতীত ছিল। এখন অবস্থা একেবারে বাজে।

উম্মাহ২৪ডটকম:আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।