Home সম্পাদকীয় ফিলিস্তিনিরা কি স্বাধীন রাষ্ট্র পাবে?

ফিলিস্তিনিরা কি স্বাধীন রাষ্ট্র পাবে?

।। মো: বজলুর রশীদ ।।

ফিলিস্তিনিরা কি স্বাধীন রাষ্ট্র পাবে? অনেকে বলেন, ফিলিস্তিন স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে অনেক আগে; অনেকে স্বীকৃতিও দিয়েছে, কিন্তু ইসরাইল অবরোধ করে আছে। এতদিন মুসলিম বিশ্ব কী করছে? আরব লিগ, ওআইসি তাদের কাজ কী? অনেকে মনে করেছিলেন, ট্রাম্প আসার পর ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে একটা সমাধান হবে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দুই রাষ্ট্র হোক, এক রাষ্ট্র হোক উভয় পক্ষ যা চায় আমিও তাই চাই।’ বাস্তবে ইসরাইল চা চায় তাই হচ্ছে। ট্রাম্প যা বলেছেন তাতে তিনি নিজস্ব কোনো পরিকল্পনার কথা বলেননি। বিষয়টি বিবদমান পক্ষের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করেছে, ফিলিস্তিনি প্রশাসন ও মাহমুদ আব্বাসকে দেয় সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছে। পূর্ব জেরুসালেমের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছে। দখলকৃত পশ্চিম তীর ইসরাইলের বলে ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। অথচ ফিলিস্তিনিরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেও পরাধীনের মতোই বেঁচে-বর্তে আছেন।

মনে পড়ে, ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আন্তর্জাতিক আদালত ১০-৪ ভোটে এই ঘোষণাকে স্বীকার করে। অর্থাৎ এ রকম স্বাধীনতা ঘোষণায় আন্তর্জাতিক কোনো আইনের খেলাপ হয়নি মর্মে জানানো হয়। ইউরোপসহ ৬৯ দেশ কসোভোকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আমেরিকা ও ইইউ’র চোখে এই ঘোষণা বৈধতা পায়। আমেরিকা, ইইউ এবং ন্যাটো দস্তুরমতো পাহারা দেয় কসোভোকে। কিন্তু ফিলিস্তিন যখন ১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তখন যেন সব উল্টো হয়ে যায়। অনেক দেশ স্বীকৃতি দিলেও স্বাধীনতার স্বাদ ফিলিস্তিনিরা পায়নি বরং ইহুদি দখলদারিত্ব দিন দিন বেড়েছে। ফিলিস্তিনিরা এবং সেই সাথে বিশ্ববাসী শুধু দেখছে পশ্চিমাদের জাতিবিরোধিতা, বর্ণবাদ ও মুনাফেকি চেহারার বীভৎসতা।

১৯৯০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি-ইসরাইল সঙ্কট দূর করতে ‘টু স্টেটস’ নীতিকে সমর্থন দিয়েছে। ইসরাইল ৭০ বছর ধরে এমন করে কূটচাল পরিচালিত করছে, যেন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কোনো স্বাধীন ও আত্মনির্ভর রাষ্ট্র গঠন সম্ভব না হয়। ইহুদিরা এখন দুই রাষ্ট্র চায় না, কিন্তু শুরুতে দুই রাষ্ট্র নীতিতে সম্মত ছিল, উকালতিও করেছিল। এখন অনেকেই বলছেন, ‘সবার জন্য সমান অধিকার’ নীতিতে এক রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান। দু’টি ভিন্ন জাতিসত্তা, যাদের মধ্যে হজরত দাউদ আ:-এর আমল থেকে বিরোধ চলছে, তারা কিভাবে একত্রে শান্তিতে থাকবে তা এক সমস্যা ও গবেষণার বিষয়।

নেতানিয়াহুর কাছে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়টি এ রকম, তিনি দুই রাষ্ট্র সমাধান মানেন, তবে সে জন্য চারটি পূর্বশর্ত দিয়েছেন। সেগুলো হলো- এক. ১৯৬৭ সালের সীমান্তের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবেন না; দুই. জেরুসালেমকে ভাগাভাগি থেকে ফিরে আসবেন না, পুরো জেরুসালেম ইহুদিদের দরকার; তিন. উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা আর ফিরে আসবে না। রাইট অব রিটার্ন ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়; এবং চার. নতুন রাষ্ট্রে কোনো সামরিক বাহিনী থাকবে না। এদিকে ফিলিস্তিনিরাও এসব কোনটি মানেনি।

মাদ্রিদ কনফারেন্স, অসলো চুক্তি, ক্যাম্প ডেভিড, তাবা, আনাপোলিশসহ বিভিন্ন উদ্যোগ- যেমন জেনেভা উদ্যোগ, সৌদি পরিকল্পনা, আয়ালান পরিকল্পনাসহ সব কিছুতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে শান্তির জন্য দুই রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে। এসব চুক্তি, পরিকল্পনা ও উদ্যোগে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে। এক. ইসরাইল ১৯৬৭ সালের সীমান্ত এলাকায় ফিরে যাবে, দখল করা সব ভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে। দুই. জেরুসালেম ১৯৬৭ সালের অবস্থায় ফিরে যাবে। প্রত্যেক ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবে, অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। ফলে নতুন করে ইহুদি আবাসন ও ইহুদিদের ফিরে আসা বন্ধ হবে। তিন. ফিলিস্তিনিদের ফিরে আসার অধিকারকে স্বীকার করতে হবে। যারা বিবিধ কারণে এই অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু ইহুদিরা অব্যাহতভাবে এসব বিষয় না মানার ফলে ‘টু স্টেটস’ সমাধান এখন বিলোপ হওয়ার পথে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, ক্ষমতার ভাগাভাগিতে হয়তো সমাধান রয়েছে। কায়রোতে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল বলেছিলেন, সঙ্কট নিরসনে অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই, দুই রাষ্ট্র সমাধানের লক্ষ্যে যা করার তাই করা হবে। এখন অবস্থা দেখে মনে হয়, দুই রাষ্ট্র সমাধান জীবিতও নয়; মৃতও নয়।

অনেকে মনে করেন, দুই রাষ্ট্র সমাধানের মধ্যে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। যেমন- ১৯৬৭ সালে দখল করা এলাকাকে অব্যাহতভাবে ইসরাইলের কলোনি বানানোর প্রক্রিয়া যার কারণে ওই স্থানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য বা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরাইল একটি ছোট এলাকা দিতে চায়। কিন্তু যতটুকু জায়গা-জমি বরাদ্দ করতে চায়, তা দিয়ে সেখানে কিছুই সঙ্কুলান হবে না। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি অভিযোগ করে আসছে। যদি এমন হয়, তবে ইসরাইল পশ্চিম তীরের অর্ধেক ও পুরো পূর্ব জেরুসালেম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। অন্য দিকে, ইসরাইলের কোনো এলাকা হারানোর ভয় থাকবে না। দুই রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইসরইলি স্বার্থকে জোরদার করবে মাত্র। কেননা, এর ফলে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করতে হবে। তখন বতর্মান ইসরাইল, পশ্চিম তীর, গাজা ও জেরুসালেম এ সব বিষয় বিভক্তির প্রশ্ন উঠে আসবে। গাজায় এমনিতে জনসংখ্য বেশি। সেখানে যদি ফিলিস্তিনিরা ফিরে আসে, তবে স্থান সঙ্কুলান হবে না। পশ্চিম তীরের অনেকখানি এখন কলোনি। বাকিটা দখলের কাজ চলছে।

দুই রাষ্ট্রব্যবস্থার আরো দুর্বলতা হলো- সমস্যার মূল কারণ বাস্তচ্যুত ফিলিস্তিনিদের কথা, যারা ১৯৪৮ সালে বাস্তুভিটা হারিয়েছিল। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে ৫০ লাখেরও বেশি উদ্বাস্তু ফিরে আসাতে পারে। তারা অপেক্ষায়, কিন্তু ইসরাইল চায় উদ্বাস্তুরা আর ফিরে না আসুক। জায়োনিস্ট চিন্তাবিদ ভøাদিমির জাবোটিন্সিকি ১৯২৩ সালে সতর্ক করে বলেছিলেন ফিলিস্তিনিদের অব্যাহত বল প্রয়োগের মাধ্যমেই শান্ত রাখা যাবে। ইসরাইলি রাষ্ট্রনায়কেরা এখন ধারাবাহিকভাবে সেই ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ চালু রেখেছে।

চিন্তাশীলেরা বলছেন, দুই রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে এক রাষ্ট্র বিষয়টি এখন চিন্তাভাবনা করা দরকার। এ ব্যবস্থায় কোনো ইহুদির স্থান পরিবর্তন করতে হবে না, আর কোনো ফিলিস্তিনি এলাকাও অবরোধের ভেতর রাখার দরকার হবে না। জেরুসালেম উভয়ের শহরে পরিণত হবে। ফিলিস্তিনিরাও ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু অসহায় ফিলিস্তিনিরা এক রাষ্ট্রে নিরীহ মানুষের মতোই থাকবে। কেননা, ইহুদিরা যে জীবনমান বজায় রেখেছে, তার কাছাকাছি যেতেও ফিলিস্তিনিদের দু’-এক দশক লাগবে এবং এক রাষ্ট্র সমাধানে দ্বিতীয় শ্রেণীর শ্রমিক নাগরিকের মতো ফিলিস্তিনিরা বসবাস করবে। তাদের ভোটাধিকার থাকবে; কিন্তু নেতৃত্ব থাকবে না।

পশ্চিমারা ফিলিস্তিন-ইসরাইল আলোচনাকে জিইয়ে রাখতে চায় এই বলে যে, বাইরের বা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই। ইসরাইলের সম্মতি ছাড়া যেন জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত প্রয়োগ না হয়, সে জন্য আমেরিকা পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করছে। সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট জন কেরি, ডিসেম্বর ২০১৬ সালে সাবান ফোরামে বলেন, ‘সরকারের ৫০ শতাংশ মন্ত্রী প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করেন না এবং কোনো ফিলিস্তিনি স্টেট হবে না।’

এখানে আরো একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ওবামা প্রশাসন জাতিসঙ্ঘের ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাব, যেখানে ইসরাইলি বসতি নির্মাণকে নিন্দাবাদ জানানো হয়েছে, সে প্রস্তাবে ভেটো দেননি এবং বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে জন কেরি ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধ নিরসনে দুই রাষ্ট্রের বিষয়টি সুরাহা করার কথা বলেছিলেন। আসলে স্টেট নিয়ে নানা কলাকৌশল ও কথার মারপ্যাঁচে বছরের পর বছর চলতেই থাকবে, এর মধ্যে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার ও অর্থনীতি ধ্বংস করে পরমুখাপেক্ষীর কাজ পাকা করবে। তখন হয়তো ফিলিস্তিনি আরবরাই বলবে ‘আমরা একটু খাবার ও চিকিৎসা চাই, আর কিছু চাই না।’

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যথর্তার জন্য নেতানিয়াহু ঘরে-বাইরে সমালোচিত। নেতানিয়াহু ২০০৯ সালের জুলাইতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভাষণে বলেছিলেন, ‘দুই ধারার মানুষের জন্য দুই রাষ্ট্র’ দরকার তবে তা হবে ইসরাইলের ফমুর্লা মতে।’ ইসরাইল আবার দু’টি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রও বানাতে চায়! যেমন গাজা উপত্যকায় একটি এবং পশ্চিম তীরে অপরটি। গাজায় তো ফিলিস্তিনিরা আছে। পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণ করে এবং ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন কৌশলে দারিদ্র্য ও বেকারত্বে নিক্ষেপের ব্যবস্থা করে পুরো ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলের অনুগত করে তোলা। এই কাজ শুরু হয়েছে বহু আগ থেকে। যেমন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এবং হামাস ও ফাতাহ-এর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, পানীয় জলের উৎস ধ্বংস করে ইসরাইলি অধিকৃত জলাধার থেকে পানীয়জল সরবরাহ করা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ধ্বংস করে ইসরাইল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, হাসপাতালের সেবা ধ্বংস করে ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলের হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ফিলিস্তিনিদের স্কুল-কলেজ ধ্বংস করে তাদের শিক্ষার পথ রুদ্ধ করে দেয়া, খাবারের অভাব সৃষ্টির জন্য ফসলের মাঠে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ছিটানো, আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহায়তা গাজা বা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আসতে না দেয়া, প্রয়োজনে প্রতিরোধ করা।

মসজিদ-মাদরাসা ও পাঠপুস্তক ধ্বংস করে ইসলামী শিক্ষার পথ রুদ্ধ করা ও ধর্মীয় কাজ করতে বাধা দেয়া ইত্যাদি। পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের জন্য প্রতিদিন ইসরাইলে শ্রম দিতে যায়। ইসরাইল বিশ্বস্তদের কাজ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু ক্ষুধা সবাইকে গ্রাস করছে, তাই বিশ্বস্ততা বাড়ানোর জন্য ফিলিস্তিনিরা যেন প্রতিযোগিতা করছে। শুধু এসব বাছাই করা বিশ্বস্তদের বায়োমেট্রিক ডাটার ম্যাগনেটিক আইডি ও ‘ওর্য়াক পারমিট’ দেয়া হয়েছে, যারা রাজনীতির সাথে জড়িত তারা এই আইডি পায় না। দেখা যায়, প্রত্যেক ফিলিস্তিনির ডাটা ইসরাইল সংরক্ষণ করছে।

ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী যারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে কাজ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আমেরিকার সেনাবাহিনী। তাদের হাতে রয়েছে হালকা অস্ত্র। এরা জেনিন, নাবলুস, কোয়ালকালিয়া, রামাল্লা এসব জায়গায় কাজ করে। এদের মূল নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে। ফাতাহর সাথে কোনো সামরিক সংঘর্ষ ও বিরোধ হলে ইসরাইল আরো শক্তিশালী হবে এবং গাজায় একটি ক্ষুদে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তাড়াতাড়ি আলোর মুখ দেখবে। ফিলিস্তিনিদের নির্যাতনের একটি চিত্র এ রকম-

দখলদার ইসরাইলি সেনারা বয়স্কদের মাঝে মধ্যে পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশ দেয় এবং কোনো কারণ ছাড়া ছয় ঘণ্টাপর্যন্ত আটক করে রাখে। কেউ কথা বলতে পারে না, ওয়াশরুম ব্যবহার করতে পারে না। বয়স্ক ব্যক্তিদের কঠিন কাজ দেয় হয়। যেমন- বিদ্যুতের খুঁটির ওপর লটকানো ফিলিস্তিনি পতাকা নামিয়ে নেয়ার জন্য ৬০ বছরের বয়স্ক ব্যক্তিকে পাঠানো হয়। অপারগতায় আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়। সেটা আনতে যেতে হয় নাবলুস মিলিটারি ক্যাম্পে। সেখানে আবার ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অপ্রয়োজনীয় কারফিউ দেয়া হয়। আশপাশে একটি সেনা চোখে না পড়লেও কেউ নির্যাতনের ভয়ে কারফিউ ভঙ্গ করে না। এভাবে ফিলিস্তিনিরা যেন পোষা প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। আউট পোস্ট রক্ষণাবেক্ষণে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা নিয়োজিত করার কারণে খরচ বেড়ে যায় অনেকগুণ। এ জন্য ফিলিস্তিনিদের ‘অকুপেশন ট্যাক্স’ দিতে হয়।

আবার তিন রাষ্ট্রের কথাও এখন শোনা যাচ্ছে। তিন রাষ্ট্র হলো- ইসরাইল, গাজায় সৈন্যবাহিনী ছাড়া মিনি স্টেট যা তদারকি করবে মিসর, এবং পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি পূর্ণ আরো একটি পশ্চিম তীর রাষ্ট্র, সেখানে ফিলিস্তিনি আরবদেরও পাঠানো হবে। এই পথ দিয়ে যদি রাজনীতি আবর্তিত হয় তবে ইসরাইল বতর্মান আয়তন, পশ্চিম তীর ও গাজাসহ একটি বড় ইহুদি রাষ্ট্রে পরিণত হবে এবং যতসামান্য ফিলিস্তিনি যারা থাকবে, তারা অসহায় সংখ্যালঘু হিসেবে থাকবে, কোনো রাষ্ট্র আর পাবে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার।

মানবতার মাঝেই সন্ত্রাসের সমাধান নিহিত: জাসিন্ডা