Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন মুসলমানদের নৈতিক অধঃপতন এবং ধ্বংস থেকে বেঁচে থাকার উপায়

মুসলমানদের নৈতিক অধঃপতন এবং ধ্বংস থেকে বেঁচে থাকার উপায়

।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।

আল্লাহ তায়ালার মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য তো এই যে, মানুষ আল্লাহর যমীনে একমাত্র আল্লাহর দ্বীন তথা বিধান প্রতিষ্ঠা করবে। সেই লক্ষ্যে মানুষ কালেমার দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে মানুষকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করবে। একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার দ্বারা একটি সুখী সমাজ গড়ে তুলবে এবং পরম স্রষ্টার মাহাত্ম ঘোষণা করবে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আল্লাহর সেই মহান উদ্দেশ্য আধুনিক জড়বাদী-ভোগবাদী, ধনতান্তিক ও স্বার্থসর্বস্ব দুনিয়ায় ফলপ্রসূ হচ্ছে না। স্বার্থের বশবর্তী হয়ে মুসলমানরা আজ ইসলামের মূল লক্ষ্য, আদর্শ ও ঐতিহ্য পদদলিত করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। নিজ স্বার্থের তাকিদে একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। এমনকি স্বীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করতেও দ্বিধাবোধ করছে না।

আধুনিক বস্তুবাদী, ভোগবাদী ও জড়বাদী সভ্যতার এ বিনাসী ভাইরাস আমাদের বিশ্বাসী জীবনকে প্রতিনিয়ত সংক্রামক রোগের ন্যায় সংক্রমিত করছে। ফলশ্রুতিতে সংক্রামিত মানুষগুলো আচার-আচরণে পশুকেও ছাড়িয়ে গেছে। খোদায়ী শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আজ নানা দল ও ফিরকায় শতধা বিভক্ত হয়ে আমরা এক দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়েছি। আর তাই বাতিল ও তাগুতী শক্তি সমগ্র পৃথিবী থেকে ইসলামের নাম নিশানা সমূলে মুছে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

আসলে পর্যাপ্ত দাওয়াত ও দ্বীনের মেহনত না থাকার কারণে বিশ্বময় আজ দ্বীনহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মুসলমানদের ঘরে ঘরে জাহিল, বেদ্বীন, নাস্তিক, মুরতাদ ও ইসলাম বিদ্বেষী পয়দা হচ্ছে। ঘরে ঘরে ইসলামী তা’লীম না থাকায় দ্বীন ইসলাম শিক্ষার উপর দুনিয়ার জ্ঞান শিক্ষার প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মানুষ আল্লাহ মুখী না হয়ে গোমরাহীর পথে ধাবিত হচ্ছে। আর তাই সারা পৃথিবীতে মুসলমানরা নানাভাবে মার খাচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে। নানা অত্যাচার, যুলুম ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশের ভেতরে বাইরে ষড়যন্তের বেড়াজালে পড়ে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে।

এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই যে মুসলমানদের পতন, অবক্ষয়-ধ্বংস প্রভৃতি থেকে কী উত্তরণের কোন পথ নেই? নিশ্চিত ধ্বংস থেকে এসব অগণিত মানব সন্তানকে কে রক্ষা করবে? বস্তুতঃ আমরা যদি এ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করি, তবে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এ থেকে উত্তরণের একটি মাত্রই পথ খোলা আছে। আর তা হলো, আমাদের প্রিয়নবী (সা.) যে পথ আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, সেই পথে চলা।

বস্তুতঃ হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মহান কালেমার দাওয়াত ও দ্বীনের যবরদস্ত মেহনতের দ্বারা আরবদের গাফেল অন্তরকে পরিবর্তন করেছিলেন এবং এক্বীন, ইখলাস, মুআমালা ও মুআশারা (পারস্পরিক লেন-দেন ও সামাজিকতা) ঠিক করেছিলেন, সেই মেহনত আজকে সবচেয়ে বেশী জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রতিটি মুসলমানের মুক্তির জন্য মজবুত ঈমান-এক্বীন, সুন্দর আখলাক ও আমল একান্ত প্রয়োজন। কেননা, ঈমান বা বিশ্বাস দ্বীন ইসলামের মূল ভিত্তি। এর উপর যে অটল থাকতে পারে, সে-ই দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবী হাসিল করতে পারে।

ঈমান হলো, গায়েব বা অদেখার উপর বিশ্বাস। এটা অর্জন করা বড় কঠিন। এটা অর্জন করতে হলে ঈমানের দাওয়াত ও জানমালসহ দ্বীনের মেহনত ও মুজাহাদা প্রয়োজন। আর তাই প্রত্যেকেরই মুবারক ঈমানের দাওয়াত ও দ্বীনের মেহনতের কাজে আত্মনিয়োগ করা অপরিহার্য। আল্লাহর দেওয়া জানমাল ও সময় নিয়ে মানুষের ময়দানে দ্বীনের মেহনত অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

মূলতঃ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই কালেমার দাওয়াত ও মেহনত ছাড়া যতই আন্দোলন ও সংগ্রাম করি না কেন, বর্তমান নৈতিক অবক্ষয় তথা দ্বীনহীন গাফেল পরিবেশ থেকে উত্তরণের কোন পথই নেই। স্মরণ রাখা দরকার যে, হক ও সত্যের দাওয়াত যত চলবে এবং দ্বীন যতই যিন্দা হতে থাকবে, গাফেল ও গোমরাহী শক্তি ততই খতম হবে।

কাজেই আর দেরী নয়, আসুন আজ থেকে দ্বীনের মেহনত জোরদার করি।

লেখকঃ সিনিয়র শিক্ষক- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা, খতীব- তিস্তা গেট জামে মসজিদ টঙ্গী, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ডটকম এবং কেন্দ্রীয় অর্থ-সম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ই-মেইল- muftijakir9822@gmail.com

আরও পড়ুন- ৯৫ ভাগ ক্লিনিকের আয়ের উৎস সিজারিয়ান অপারেশন!